তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা ও অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স আয়োজিত অনলাইন বাজেট প্রতিক্রিয়া

২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পাস হলে সব ধরনের তামাকপণ্য আরও সহজলভ্য হবে এবং তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে তামাকের ব্যবহার বাড়বে। এই বাজেট পাস হলে আরেক দফায় সিগারেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়বে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।

রোববার (১৩ জুন) তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত অনলাইন বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বিশিষ্টজনদের বক্তব্যে এ তথ্য উঠে আসে। 

অনুষ্ঠানে প্রজ্ঞা’র পক্ষ থেকে তামাক কর বিষয়ক প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণ তুলে ধরে বলা হয়, বর্তমানে সিগারেট বাজারের প্রায় ৭২ শতাংশ নিম্ন স্তরের সিগারেট এবং প্রায় ১৬ শতাংশ মধ্যম স্তরের সিগারেট। অথচ প্রস্তাবিত বাজেটে এই দুই স্তরের সিগারেটের দাম ও করহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। উচ্চ ও প্রিমিয়াম স্তরে দশ শলাকা সিগারেটের দাম যথাক্রমে ৫ টাকা এবং ৭ টাকা বৃদ্ধি করে ১০২ টাকা এবং ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নামমাত্র মূল্যবৃদ্ধি (৫ শতাংশ) জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির (৯ শতাংশ) তুলনায় অনেক কম। ফলে সবধরনের সিগারেট আরও সস্তা হয়ে যাবে। এই বাজেট পাস হলে আরেক দফায় সিগারেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়বে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিড়ি এবং বহুল ব্যবহৃত জর্দা ও গুলের দাম বৃদ্ধি না করায় দরিদ্র মানুষের মধ্যে এসব পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে এবং অতিরিক্ত স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হবে। সিগারেটে ত্রুটিপূর্ণ বহুস্তর বিশিষ্ট অ্যাডভ্যালুরেম করকাঠামো চালু থাকায় কমদামি সিগারেট ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। ফলে সরকার দামি সিগারেট থেকে অধিক পরিমাণ রাজস্ব প্রাপ্তির সুযোগ হারাচ্ছে। 

বাজেট প্রতিক্রিয়ায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী  বলেন, “এ বছরের বাজেটেই সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে সুনির্দিষ্ট কর দিতে হবে। আমরাতো মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য কাজ করছি। আমরা তামাক সিন্ডিকেটের কাছে হারতে রাজি নই। গত একবছরে কোভিডে যত মানুষ মারা গেছে তার চেয়ে ১০-১৫ গুণ মানুষ বেশি মারা যায় তামাক ব্যবহারের কারণে। তাহলে আমরা তামাককে নিয়ে কেন উদ্বিগ্ন হব না।”
 
অর্থনীতিবিদ এবং জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, আমরা সকল তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধির কথা বলেছিলাম, সুনির্দিষ্ট করারোপের কথা বলেছিলাম কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে সেটা করা হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে এই বাজেট প্রস্তাব পরিবর্তন করতে পারেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। 

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, কমদামি সিগারেটের দাম এক ধাক্কায় বাড়াতে হবে। এর ফলে তরুণরা ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে। আমরা আগামীর স্বাস্থ্যবান তরুণদের পেতে চাই। তাহলেই উন্নত বাংলাদেশ গড়তে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট এর সুবিধা আমরা পাব। 

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস)-এর রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর বলেন, প্রায় ৮৮ শতাংশ মানুষ নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেটের ভোক্তা। তাই এখানে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল। তাহলে রাজস্ব বাড়ত এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানো যেত। 

বাজেট প্রতিক্রিয়ার আলোচনায় আরও অংশ নেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাক্তন চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমদ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী। 

আত্মা’র কো-কনভেনর নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায় বাজেট বিশ্লেষণ এবং প্রস্তাব তুলে ধরেন প্রজ্ঞা’র তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার। 

আরএম/এইচকে