প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর দেশে তৈরি মুড়ির দাম কমার কথা থাকলেও উল্টো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মুড়ি। মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষের খাবার মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি। আর প্যাকেট জাত মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৬০ টাকা কেজিতে।

অথচ গত ৩ জুন (বৃহস্পতিবার) জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, মুড়ির স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করেছি। ফলে মুড়ির দাম কমার কথা, কিন্তু কমার পরিবর্তে দাম বাড়ছে। মুড়ির পাশাপাশি ছোলা ও চিনি বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।

রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাল-ডালসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি, এখন মুড়ির দামও বাড়ছে। একবার কোনো জিনিসের দাম বাড়লে আর কমতে চায় না। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে সরকারের কাছ থেকে নানা সুযোগ সুবিধা নেয়। এরপর দাম আর কমায় না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সোমবার (১৪ জুন) রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা এবং মালিবাগ এলাকায় দেখা গেছে, খোলা মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে। ভালো মানের প্যাকেট জাত মুড়ি আধা কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকায়। আর ২৫০ গ্রামের প্যাকেটজাত মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা দরে। সেই হিসেবে এক কেজি প্যাকেট জাত মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৬০ টাকায়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মোটা চালের গুটি মুড়ি অর্থাৎ ওজনে বেশি এরকম ‍মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজিতে। আর চিকন চালের লম্বা মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। এগুলো ওজনে কম ফলে দাম বেশি হয়।

এছাড়া প্যাকেটজাত ২৫০ গ্রামের ‘রুচি’ মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। অথচ গত সপ্তাহেও বিক্রি হয়েছিল ৩০ টাকায় (গায়ের মূল্য ৩২ টাকা)। ৬০ টাকায় বিক্রি হওয়া আধা কেজি প্যাকেটের মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজিতে। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে আধা কেজিতে ২০ টাকা আর এক কেজিতে ৪০ টাকা দাম বেড়েছে মুড়ির।

তবে বসুন্ধরার প্যাকেটজাত মুড়ি আধা কেজি ৬০ টাকা আর ২৫০ গ্রাম প্যাকেটে মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। অর্থাৎ কেজিতে দাম দাঁড়াচ্ছে ১২০ টাকা। তবে পণ্যের গায়ের মূল্য ১২৮ টাকা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালসহ মুড়ি তৈরি সরঞ্জামের দাম বাড়তি। তাই মুড়ির দামও বাড়তি। মুড়ি কম দামে খেতে হলে চালের দাম কমাতে হবে।

মুড়ির দাম কেন কমছে না জানতে চাইলে বাড্ডার মুদি দোকানি মনোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি করি। অনেকেই এখন দেখছি ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছে। এটা তাদের ব্যাপার। ইচ্ছা করে ব্যবসায়ীরা দাম বেশি রাখছে। এ কারণে এখনও রোজার সময়ের দামেই মুড়ি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

মালিবাগের মুড়ি বিক্রেতা নজরুল হক সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোজার সময় মুড়ির যে দাম এখনও সেই দামে বিক্রি করছি। নতুন করে তো বাড়েনি।

রামপুরা বাজারের মুড়ি ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান হাওলাদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, কর সুবিধা তো পেয়েছে বড় ব্যবসায়ীরা। যারা মুড়ি প্যাকেট করে বিক্রি করেন। আমারা যারা চাল থেকে মুড়ি বানাই তারা তো কোনো সুবিধা পাইনি। উল্টো চালের দাম বাড়ছে।

তিনি বলেন, চালের কেজি ৬০-৬৫ টাকা। এক কেজি চালে কত কেজি মুড়ি হয় বলুন তো। আমরা কীভাবে ব্যবসা করব বলেন।

রামপুরা বাজারে মুড়ি কিনতে আসা আরমান মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুনেছি মুড়ির দাম কমবে। এখন দেখছি রোজার আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে মুড়ি। তিনি বলেন, ঈদের আগেও এক কেজি মুড়ি নিয়েছি ৮০ টাকায় আজও কিনলাম ৮০ টাকায়। তাহলে কমল কই।

মুড়ির পাশাপাশি বাজারে ভালো মানের ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা কেজিতে। আর চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে।

এমআই/এসএসএইচ