আফ্রিকায় রপ্তানি বাড়াতে জিবুতি হতে পারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশদ্বার
আফ্রিকার বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের উপস্থিতি বাড়াতে জিবুতি হতে পারে সবচেয়ে সুবিধাজনক মাধ্যম। এমনটাই জানিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রদূত আবদিল্লাহি আসোয়েহ ইসে।
তার মতে, দ্রুততম বন্দর সুবিধা, কর–শুল্কমুক্ত উৎপাদন ও রপ্তানির সুযোগ এবং ব্যবসা–বান্ধব পরিবেশের কারণে জিবুতি এশিয়ার ‘সিঙ্গাপুর–মডেল’ হাব হিসেবে গড়ে উঠছে। এসব সুবিধা কাজে লাগিয়ে আফ্রিকার বিপুল বাজারে প্রবেশের সুযোগ নিতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত আগামী জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের জিবুতি সফরের আমন্ত্রণ জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে জিবুতির অনারারি কনসাল ও বারভিডার সভাপতি আবদুল হকসহ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত, টেক্সটাইল, ইলেকট্রনিক্স, ওষুধ এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প খাতের ব্যবসায়ী নেতারা।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পণ্য ও বাজার— দুটো ক্ষেত্রেই বৈচিত্র্য আনার জন্য আফ্রিকা বড় সম্ভাবনার রপ্তানি গন্তব্য। আর এই বাজারে পৌঁছাতে জিবুতি হতে পারে প্রধান কেন্দ্র। সেখানে পণ্য উৎপাদন বা রপ্তানি করে সহজেই পুরো আফ্রিকায় সরবরাহ করা যায়। এজন্য দেশটি আমদানি–রপ্তানিতে ট্যাক্স–ফ্রি সুবিধা দিচ্ছে এবং নিরাপত্তা জোরদার করেছে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলে জিবুতি এশিয়ার ‘সিঙ্গাপুর’ হওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে। চীন ও ভারত ইতোমধ্যে এ সুবিধা কাজে লাগিয়ে ব্যবসা বিস্তৃত করেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ জিবুতিতে তৈরি পোশাক, ওষুধ, পাটজাত পণ্য, চা, হোম টেক্সটাইল ও পানীয় রপ্তানি করছে। পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির সুযোগও বাড়ছে।
আবদিল্লাহি আসোয়েহ ইসে বলেন, জিবুতি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত আকর্ষণীয় অবস্থানে রয়েছে। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার বাণিজ্যিক প্রবেশদ্বারে অবস্থান হওয়ায় এবং দেশটিতে অবকাঠামোগত ও নিরাপত্তার সুবিধা থাকায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য জিবুতি আকর্ষণীয় গন্তব্য হতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো মুসলিম দেশগুলো ভালো ব্যবসা করতে পারবে সেখানে। বাংলাদেশ যেসব পণ্য রপ্তানি করে জিবুতি সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিযোগী নয়। জিবুতি কোনো পণ্য তৈরি করে না।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের জিবুতির অনারারি কনসাল আবদুল হক বলেন, রপ্তানি বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে আমাদের বিনিয়োগকারীরা জিবুতির অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে কর ছাড়ের সুবিধা ও উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশ কাজে লাগাতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি আফ্রিকার দেশ জিবুতিতে বাংলাদেশের বিনিয়োগ ও ব্যবসা সম্প্রসারণে অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি জানান, আমরা জিবুতিকে আফ্রিকা অঞ্চলে রপ্তানির হাব হিসেবে ব্যবহার করতে পারব। ইতোমধ্যে ভারত এই সুযোগ নিতে শুরু করেছে। ভারতের গুজরাটসহ বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজন সপরিবারে সেখানে চলে যাচ্ছে। জিবুতিকে কেন্দ্র করে তাদের এক ভাই সাউথ আফ্রিকা, আরেক ভাই সোমালিয়া অবস্থান করে ভারত থেকে পণ্য নিয়ে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বিক্রি করছে।
তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়িক সম্ভাবনা দেখতে আগামী জানুয়ারি মাসে একটি প্রতিনিধি দল সেখানে যাব। বাংলাদেশে ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন। এজন্য আমাদের কাছে আগে নিবন্ধন করে প্রতিনিধি দলে যুক্ত হতে পারেন।
জানা যায়, আফ্রিকা মহাদেশের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ জিবুতি। দেশটির মোট আয়তন ২৩ হাজার ২০০ বর্গকিলোমিটার। বেশিরভাগ এলাকাই বিরান, জনসংখ্যা ১১ লাখের মতো। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দেশটি আফ্রিকা, পশ্চিম এশিয়া এবং অবশিষ্ট এশিয়াকে সংযুক্ত করেছে। সোমালিয়া, ইরিত্রিয়া ও ইয়েমেনের মধ্যখানে এর অবস্থান। এটাই হলো দক্ষিণ দিক দিয়ে লোহিত সাগরে প্রবেশের পথ। দেশটির লাগোয়া বাব আল মানদেব প্রণালি আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলের জন্য কৌশলগতভাবে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
এসআই/এমজে