২০২৬ সাল পরবর্তী সময়ে অনেক রফতানি বাণিজ্য ও স্বল্প ব্যয়ে ঋণসুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে বাংলাদেশ। পাশাপাশি নানা ধরনের শুল্ক-অশুল্ক বাধার সম্মুখীন হবে। তাই এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী সময়ে পোশাক খাতসহ অন্যান্য খাতের রফতানি বাজার ধরে রাখতে ও বাজারে বৈচিত্র্য নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন।

বুধবার (৭ জুলাই) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ পরবর্তী সময়ে রফতানি বহুমুখীকরণে চ্যালেঞ্জ ও করণীয় নির্ধারণ’ শীর্ষক ডায়ালগে এসব কথা বলেন বক্তারা।

তারা বলেন, দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ও সহায়ক নীতি সহায়তা, তৈরি পোশাক খাতের ন্যায় রফতানিমুখী সব শিল্পে সমান সুবিধা নিশ্চিতকরণ, মানবসম্পদের উন্নয়ন, প্রয়োজনীয় নীতিমালার দ্রুত সংস্কার ও যথাযথ বাস্তবায়ন, আন্তর্জাতিক নেগোশিয়েশনে দক্ষতা বাড়ানো, গবেষণা কার্যক্রমে বিনিয়োগ ও বরাদ্দ বৃদ্ধি প্রভৃতি বিষয়গুলোই স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ পরবর্তী সময়ে রফতানি বহুমুখীকরণে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

ডায়ালগে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ এইচ এম আহসান।

স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ২০২৬ সাল পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশকে অনেক রফতানি বাণিজ্য ও স্বল্প ব্যয়ে ঋণ সুবিধাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি নানা ধরনের শুল্ক-অশুল্ক বাধার সম্মুখীন হতে হবে। বাংলাদেশের ১৭৫০টি পণ্যের প্রায় ৮১ শতাংশই তৈরি পোশাক খাতের অন্তর্ভুক্ত। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী সময়ে দেশের রফতানি শিল্প পোশাক খাতসহ অন্যান্য মাঝারি ও ছোট শিল্প যেমন : পাট, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা, ফার্মাসিটিক্যাল, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আইসিটিসহ অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতের রফতানির বাজার ধরে রাখতে ও বাজারে বৈচিত্র্য নিশ্চিত করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

রিজওয়ান রাহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি, পণ্যের গুণগত মান, মূল্য ও ভোক্তার আচরণ পরিবর্তনসহ গবেষণা ও উদ্ভাবন ব্যয়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সতর্ক হবে। সম্ভাব্য রফতানিমুখী শিল্প ও সম্ভাবনাময় খাতের চ্যালেঞ্জসমূহ শনাক্ত করে তার থেকে উত্তরণের কৌশলগত সুপারিশমালা নির্ধারণের ওপর জোর দিতে হবে।

এ এইচ এম আহসান বলেন, আমাদের রফতানি পণ্যের বাজার মূলত ইউরোপ ও আমেরিকাভিত্তিক, তবে সময় এসেছে বর্তমান বাজারের বাইরে বিশেষ করে আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাজার সম্প্রসারণের। একইসঙ্গে পণ্যের পাশাপাশি সার্ভিস বা সেবা রফতানির বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে হবে। সেইসঙ্গে তৈরি পোশাক খাতের ন্যায় অন্যান্য রফতানিমুখী খাতে বন্ডসহ অন্যান্য সুবিধা প্রদানের বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা উচিত।

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, পণ্য প্রমোশনের জন্য দেশীয় উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। এফটিএ ও পিটিএ স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র রাজস্ব আহরণের বিষয়টি বেশি মাত্রায় প্রাধান্য না দিয়ে এ ধরনের চুক্তির মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা সম্ভব হলে রাজস্ব আহরণ আরও বাড়বে।

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর, সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিক্যালের জেনারেল ম্যানেজার নাইমুল হুদা প্রমুখ।

আরএম/এসকেডি