নানা অনিয়মের অভিযোগে এখন বিপাকে রয়েছে ডিজিটাল কমার্স বা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি। তারপরও একের পর এক অফার দিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছে। মাত্র এক ঘণ্টায় ৫৩ হাজার রিয়েলমি ব্র্যান্ডের স্মার্টফোনে অর্ডার পেল ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি। 

শনিবার (১০ জুলাই) রাত ১০টা ১০ মিনিট থেকে রাত ১১টা ১০ মিনিট পর্যন্ত মাত্র এক ঘণ্টায় এই বিপুল সংখ্যক অর্ডার পায় প্রতিষ্ঠানটি। ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল ফেসবুক স্ট্যাটাসে এ তথ্য জানিয়েছেন।

জানা গেছে, বাংলাদেশে রিয়েলমি-৮ জি’র বাজার মূল্য ২৪ হাজার ৯৯০ টাকা। তবে ইভ্যালি বিশেষ মূল্যছাড়ে ১৯ হাজার ৯৯০ টাকায় এ স্মার্টফোনটি বিক্রির অফার করে। তাদের এ এক্সক্লুসিভ ক্যাম্পেইন ৫৩ হাজার অর্ডার পেয়েছে বলে দাবি করছে প্রতিষ্ঠানটি। এর আগে টি১০ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ক্যাম্পেইনের ২০০ কোটি টাকার পণ্যের অর্ডার পায় বলে জানায় ইভ্যালি। 

এদিকে ক্রেতার অর্ডার করা পণ্য দিতে গড়িমসিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে ইভ্যালির বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটির সম্পদের চেয়ে ছয় গুণ বেশি দেনা থাকার তথ্য উঠে আসে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা এক প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে উঠে আসে, ইভ্যালির মোট দায় ৪০৭ কোটি টাকা। কিন্তু সম্পদ আছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকার। 

দুদকের পক্ষ থেকে ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরীন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাসেলের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেয়। বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) কমিশন থেকে এ বিষয়ে অনুমোদন দেওয়ার পর শুক্রবার (৯ জুলাই) পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে এ চিঠি দেওয়া হয়। এতে বলা হয় আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে আদালত থেকে এ বিষয়ে অনুমতি নেওয়া হবে।

দুদকের নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে মো. রাসেল বিষয়টি ‘পজিটিভলি দেখছি’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি লেখেন, ‘আমি আমার বিদেশ যাওয়ার নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি পজিটিভলি দেখছি। বাংলাদেশের সব বড় কোম্পানির সঙ্গে আমার সম্পর্ক। হয়তো আমাকে ভালোবাসার জন্য ওনাদের ভয়ের বিষয়টা আমাকে বলতেন না। আমরা বিজনেস করেছি সবার সঙ্গে। এখন ওনারা আরও বেশি কনফিডেন্স পাবেন।’

‘এখন আমরা অনেকটাই প্রফিটে বিজনেস শুরু করেছি। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী গ্রাহকদের টাকা আমাদের হাতে আসার সুযোগ নেই। এছাড়া তদন্ত করলেই সবাই দেখবেন পুরাতন অর্ডার কী পরিমাণ ডেইলি যাচ্ছে। বিজনেস ডেভেলপমেন্টে লস হয়েছে, সেটা বিজনেস করেই প্রফিট করে ফেলব, এর চেয়ে কম সময়ে। কারণ আমাদের ক্রয় মূল্য বাজার মূল্য থেকে অনেক কম। সরকারের সামগ্রিক কার্যক্রম জনগণের স্বার্থ রক্ষার জন্য।’

ইভ্যালির গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমি শুধু একটাই রিকোয়েস্ট করব যে, আমাদের তদন্ত বিষয়ে অতি উৎসাহ নিয়ে কেউ কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বলবেন না। আপনাদের রেগুলার কেনাকাটা ইভ্যালিতে করুন। এতে ইভ্যালির লসের যৌক্তিকতা আসবে।’

শুধু ইভ্যালি নয় ১০টির মতো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। ফলে ইভ্যালি ও আলেশা মার্টসহ ১০টি অনলাইন মার্চেন্টে ক্রেডিট, ডেবিট ও প্রি-পেইড কার্ডের লেনদেন স্থগিত করেছে প্রাইম ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এম‌টি‌বি), ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া এবং ঢাকা ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংক। ইউসিবি ও সিটি ব্যাংকও তাদের গ্রাহকদের এসব অনলাইন মার্চেন্টে লেনদেনের বিষয়ে সতর্ক করেছে।

নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ইভ্যালি, আলেশা মার্ট, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা শপিং, সিরাজগঞ্জ শপিং, আলাদিনের প্রদীপ, বুম বুম, কিউকম, আদিয়ান মার্ট ও নিডস ডট কম বিডি।

এসআই/এইচকে