দেশে প্রতি বছর প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ হাজার লিটার মদ শুল্কমুক্ত সুবিধায় ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যার হাউসের মাধ্যমে আসে। সেখানে বৈধভাবে মদ আমদানিতে শুল্ক-কর সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ শতাংশ দিতে হয়। 

বিশেষ সুযোগে আসা এসব মদের একটি বড় অংশ খোলাবাজারে কিংবা বারগুলোতে বিক্রির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এর বাইরেও বিশাল পরিমাণ মদের অবৈধ বিক্রির অভিযোগ তো আছেই। 

শুল্কমুক্ত সুবিধায় মদসহ অন্যান্য পণ্যের অপব্যবহার বন্ধে তাই নতুন উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অপব্যবহার রোধ করতে অটোমেটেড করা হচ্ছে ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যার হাউসগুলো। ইতোমধ্যে এই সংক্রান্ত সফটওয়্যার ইন্সটলের কাজ শুরু করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পাইলট প্রকল্প চালু করা হবে। যা সফল হলে দেশের সব ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যার হাউস একই সফটওয়্যারের আওতায় আসবে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিবছর ডিপ্লোমেটিক ওয়্যার হাউসগুলোর প্রাপ্যতা নিয়ে অভিযোগ আসে। অনেক ক্ষেত্রে এসব ওয়্যার হাউসের সুবিধা নিয়ে অপব্যবহারের অভিযোগ আসে। অনেক ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা পণ্য বাইরে বিক্রির অভিযোগ ওঠে। যার কারণে বন্ডেড ওয়্যার হাউসের অপব্যবহার বন্ধে ডিপ্লোমেটিক ওয়্যার হাউসগুলোকে অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। ডিজিটালাইজড প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। শিগগিরই সব ডিপ্লোমেটিক ওয়্যার হাউসকে সফটওয়্যারের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

এনবিআর সূত্রে আরও জানা যায়, প্রতি বছর দেশে প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ হাজার লিটার মদ ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যার হাউসের মাধ্যমে আসে। এর বাইরেও বিশাল পরিমাণ মদ বাইরে বিক্রির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এসব অভিযোগ থেকে রেহাই পেতেই নতুন উদ্যোগ। সফল হলে দেশের সব ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যার হাউস একই সফটওয়্যারের আওতায় আসবে। বন্ধ হবে খোলাবাজারে অর্থাৎ বারগুলোতে অবৈধ মদ বিক্রির কারবার। এতে বিশাল অংকের রাজস্ব ক্ষতি থেকে বাঁচবে সরকার। 

ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যার হাউসে নতুন করে কিছু খাদ্য পণ্য যোগ করতে যাচ্ছে এনবিআর। কূটনীতিকরা তাদের প্রাপ্যতা অনুযায়ী এসব সুবিধা ভোগ করতে পারবেন ওয়্যার হাউস থেকে। সেক্ষেত্রে এনবিআরের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। আর বন্ডেড হাউসগুলো অটোমেটেড হলে প্রাপ্যতা নিয়ে লুকোচুরির সুযোগ থাকবে না। কার কী পরিমাণ প্রাপ্যতা রয়েছে তা সহজেই জানা যাবে। সেই অনুযায়ী সুবিধা নিতে পারবেন কূটনীতিকরা।

কূটনৈতিক অঙ্গনে কর্মরত ব্যক্তি ও দেশে অবস্থানরত বিদেশি ‘প্রিভিলাইজড পারসনদের’ জন্য আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুযায়ী শুল্কমুক্ত সুবিধায় মদ আমদানি করা যায়। ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী সব দেশই এ সুবিধা দিতে বাধ্য। বর্তমানে দেশে ৬টি ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যার হাউস রয়েছে। ওয়্যার হাউসগুলো হলো-  ঢাকা ওয়্যার হাউস লিমিটেড, সাবির ট্রেডার্স লিমিটেড, ন্যাশনাল ওয়্যার হাউস, টস বন্ড প্রাইভেট লিমিটেড, ইস্টার্ন ডিপ্লোমেটিক সার্ভিস অ্যান্ড কবির এন্ড কোং, পর্যটন করপোরেশন অ্যান্ড বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। এসব ওয়্যার হাউসের মাধ্যমে দেশে অবস্থানরত কূটনীতিকরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় মদ পান করতে পারেন। কূটনীতিকদের পদবী অনুযায়ী তারা নির্ধারিত পরিমাণ শুল্কমুক্ত সুবিধায় মদ পেয়ে থাকেন।

এক্ষেত্রে দেশে বসবাসরত আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি থেকে শুরু করে বিদেশিরা এসব সুবিধা পেয়ে থাকেন। তবে সুবিধার অপব্যবহার করে দেশের একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বাইরে চড়া দামে বিক্রি করে দেন এসব মদ। এতে একদিকে সরকার রাজস্ব হারায়, অন্যদিকে অবৈধ পণ্য হিসেবে বাইরে বিক্রি করে অসাধু চক্র কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। 

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, বন্ড সুবিধায় আমদানি করা এসব পণ্য বাইরে বিক্রির অভিযোগ উঠলে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারে না এনবিআর। রিট করে বিষয়গুলো ঝুলিয়ে রাখা হয়। যা সমাধান হতে বছরের পর বছর সময় ব্যয় হয়।

আরএম/এনএফ