তৈরি পোশাক খাতের পণ্য রফতানির ভরা মৌসুম বলা হয় জুন, জুলাই, আগস্ট মাসকে। এই ভরা মৌসুমেই কোরবানি ঈদ ও বিধিনিষেধের কারণে গত ২০ জুলাই থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে কারখানা।

চলমান বিধিনিষেধে কারখানা বন্ধ থাকায় নতুন অর্ডার বন্ধ রেখেছে বায়াররা। এমনকি যানবাহন বন্ধ থাকায় পুরাতন অর্ডারগুলোর পণ্যও সঠিক সময়ে রফতানি করতে পারছে না দেশের তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা। ফলে বড়দিন ও উইন্টার সিজনের উৎসবের আগে পণ্য হাতে পাওয়া নিয়ে বায়াররা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার গত ২৩ জুলাই থেকে তৈরি পোশাকসহ দেশের বেশির ভাগ কল-কারখানা বন্ধ রেখেছে। এমন অবস্থা চলবে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত। জানা গেছে, চলমান এই বিধিনিষেধে বায়াররা এখন পর্যন্ত কোনো ক্রয়াদেশ বাতিল করেননি।

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে করোনার প্রকোপ এখনো ঊর্ধ্বমুখী। বায়াররা এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন যে সরকারের কঠোর বিধিনিষেধ আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্তই থাকবে, নাকি আরও বাড়বে? সময় বাড়লে ওই সময়ে যদি পোশাক কারখানা বন্ধ থাকে তবে পণ্য সঠিক সময়ে পাওয়া যাবে না। বিধিনিষেধ বাড়লেও যদি পোশাক কারখানা এর আওতার বাইরে রাখা হয়, তাহলে কোনো সমস্যা থাকে না।

এ বিষয়ে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর সভাপতি ফারুক হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, লকডাউনের কারণে কোরবানির ঈদের পর থেকে কারখানার কার্যক্রম বন্ধ। এ কারণে নতুন করে বায়ারদের ক্রয়াদেশ স্থগিত রয়েছে। আমরা পুরাতন ক্রয়াদেশ যেগুলো ছিল, সেগুলো নিয়ে বায়ারদের সঙ্গে কথা বলছি। বায়াররা লকডাউনে পোশাক কারখানা বন্ধের বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। কিন্তু এখনই তারা ক্রয়াদেশ বাতিল করছেন না।

তিনি বলেন, বায়াররা ক্রয়াদেশ বাতিল করলে অন্যদেশে অর্ডার দেবে। ফলে দেশ রেমিট্যান্স হারাবে। আমরাও ব্যবসা হারাবো। সার্বিকভাবে বড় ক্ষতির মুখে পড়ব।

ফারুক হাসান আরও বলেন, বায়ররা ৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন। আমরা সরকারের কাছে প্রস্তাব করেছি, আগামী ১ আগস্ট থেকে রফতানিমুখী কারখানাগুলোকে বিধিনিষেধের বাইরে রাখার জন্য। আশা করি সরকার বিবেচনায় নেবে।

এখন পোশাক পণ্য রফতানির পিক টাইম দাবি করেছেন বিজিএমইএ-এর সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বছরে যত পোশাক রফতানি হয়, তার প্রায় অর্ধেক রফতানি হয় এই সময়ে। আমাদের প্রতিটি কারখানায় প্রচুর অর্ডার এসেছে। এগুলো এখন শিপমেন্টের পর্যায়ে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পণ্য দিতে না পারলে, পরে তারা নেবে না। আর এই পণ্যগুলো অন্য কোথাও বিক্রি করা যাবে না। সবমিলে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

এ বিষয়ে নিটওয়্যার কারখানা মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি সেলিম ওসমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, শ্রমিক ও দেশের অর্থনীতিকে ভালো রাখতে হলে কারখানা চালু রাখতে হবে। তা নাহলে দেশ থেকে বিদেশিরা ক্রয়াদেশ তুলে নেবেন। অর্ডারগুলো অন্যদেশে চলে যাবে।

সেলিম ওসমান বলেন, বিকেএমইএর পক্ষ থেকে প্রত্যাশা করছি, সরকার আমাদের আগের অর্ডারের পণ্য সঠিক সময়ে পাঠানোর সুযোগ দিক। আমাদের শিপমেন্টের কাজগুলো করতে দিক।

বিকেএমইএর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বেশকিছু কারখানায় বায়ারদের অর্ডারের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ। সেগুলো আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে শিপমেন্ট দেওয়ার কথা। নির্ধারিত সময়ে পণ্য দিতে না পারলে অর্ডার বাতিল করার হুমকি দিচ্ছেন বায়াররা। অন্তত ওই কারখানাগুলো সীমিত পরিসরে খোলার অনুমতি দেওয়া হোক।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আমাদের কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে। ফলে দেশব্যাপী মহামারির মধ্যেও কারখানায় করোনার সংক্রমণ নেই বললেই চলে।

তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে শ্রমিকরা গ্রামে চলে গেছে। তারা স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে অবাধে চলাচল করছে। এতে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা বেশি থাকে। তারা যদি কারখানায় থাকতো, তবে একদিকে শৃঙ্খলা মেনে চলতো। অন্যদিকে করোনার টিকাও পেয়ে যেতো।

ফারুক হাসান বলেন, আমরা শ্রমিকদের টিকা দেওয়া শুরু করেছিলাম। সে কার্যক্রম এখন বন্ধ রয়েছে। কারখানাগুলো চালু হলেই কর্মীদের টিকা দেওয়া শুরু হবে। এখন পর্যন্ত টিকাই হচ্ছে করোনার বড় ওষুধ। আমরা সব শ্রমিকের টিকা নিশ্চিত করতে চাই।

এমআই/এমএইচএস