১০ হাজার কিলোমিটার ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের সুফল মেলেনি
দেশের অভ্যন্তরীণ নদীপথের প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হলেও তা থেকে আশানুরূপ সুফল পাওয়া যায়নি। তাই নদী ও খালসমূহের ড্রেজিংয়ের জন্য মাস্টার প্ল্যান তৈরি এবং বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।
শনিবার (৩১ জুলাই) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) উদ্যোগে ‘টেকসই নদী খনন : চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকার’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বিশিষ্টজনদের বক্তব্যে এসব কথা উঠে আসে।
বিজ্ঞাপন
ওয়েবিনারে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন। এছাড়া জাতীয় সংসদের সদস্য ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন) এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।
ওয়েবিনারে অর্থনীতিতে নদীপথের অবদান বাড়ানোর লক্ষ্যে নদীপথের অভিগম্যতা বৃদ্ধি ও টেকসই নদী খনন কার্যক্রম সম্প্রসারণ, জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি, ড্রেজিং কার্যক্রমে ব্যবহৃত ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানিতে আমদানি শুল্ক, ভ্যাট ও অগ্রিম কর হ্রাসকরণ, নদী খনন ও ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন কার্যক্রম বাড়ানোর আহ্বান জানায় ডিসিসিআই।
বিজ্ঞাপন
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সারাদেশে নদীরগুলোর নব্য ফিরিয়ে আনতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে এবং এ লক্ষ্যে নদী ব্যবস্থাপনার প্রতি বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বর্তমান সরকার আরও ৩৫টি ড্রেজার সংগ্রহে কাজ করছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত ১২ বছর ধরে সরকার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে কাজ করে যাচ্ছে এবং আশা প্রকাশ করে, সামনের দিনগুলোয় এর ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হবে। সারাদেশে নদী খননে ড্রেজার ব্যবহার দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়ায় অনেকাংশে স্বচ্ছতা আনা হয়েছে। ইতোমধ্যে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা চট্টগ্রাম বন্দরের ন্যায় উন্নীত করা হয়েছে।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, নদীপথে সাশ্রয়ীমূল্যে পণ্য পরিবহনের সুবিধা থাকায় প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় নদীপথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তবে ক্রমাগত পলি জমে নদীগুলোর গভীরতা হ্রাস পাওয়াসহ বেশকিছু কারণে নদীপথ সংকীর্ণ হওয়ার কারণে আমাদের অর্থনীতি সে সুবিধা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, অতীতে বর্ষা মৌসুমে আমাদের নদীপথের দৈর্ঘ্য ২৪ হাজার বর্গমাইল হলেও, বর্তমানে তা ৬ হাজার বর্গমাইলে নেমে এসেছে। শুষ্ক মৌসুমে এটি ৩ হাজার ৬০০ বর্গমাইলে গিয়ে পৌঁছায়। সরকার দেশের অভ্যন্তরীণ নদীপথের প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী করার কার্যক্রম গ্রহণ করলেও তা থেকে আশানুরূপ সুফল পাওয়া যায়নি। দেশে একটি টেকসই নদী খনন কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি, ড্রেজিং কার্যক্রমে ব্যবহৃত ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানিতে আমদানি শুল্ক, ভ্যাট ও অগ্রিম কর হ্রাসকরণ এবং এ ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রমকে সরকারের ফাস্ট-ট্র্যাকের আওতায় নিয়ে এসে প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মো. শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন) বলেন, এ কাজে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ড্রেজিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারের সব সংস্থার মধ্যকার সমন্বয় বাড়ানো একান্ত আবশ্যক। ড্রেজিং মেশিনারিজ আমদানিতে সম্প্রতি সরকার বিভিন্ন শুল্ক আরোপ করে বেসরকারি খাতকে নিরুৎসাহিত করেছে। এগুলো হ্রাসকরণের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসবে, সেই সঙ্গে ড্রেজিং কাজের জন্য দরপত্র আহ্বানে ডিপিএম ব্যবস্থা ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে।
সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, সারাদেশে নদী খনন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আমাদের ৫০০টি ড্রেজারের প্রয়োজন হলেও সর্বমোট রয়েছে ১৫৬টি, এমন বাস্তবতায় সরকারের পাশাপাশি দেশের বেসরকারি খাতকেও বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে হবে। সারাদেশে ছোট-বড় মিলিয়ে অসংখ্য নদী রয়েছে এবং গ্রামীণ এলাকার নদীপথ, পুকুর ও হাওর-বাওর উন্নয়নে সরকার ইতোমধ্যে নানামুখী প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ক্যাপিটাল ড্রেজিং কার্যক্রমে আরও বেশি সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত। অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমোডোর গোলাম সাদেক, পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডের সহ-সভাপতি রবার্ট হেনেসি, ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জাব্বার ও ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক আবু সালেহ খান অংশগ্রহণ করেন।
আরএম/এসকেডি