এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) কেলেঙ্কারিতে এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান ও এমডিসহ ৩০ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার (৮ আগস্ট) দুদক উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধানের স্বাক্ষর করা পাঠানো পৃথক তলবি নোটিশে তাদেরকে আগামী ১৬, ১৭ ও ১৮ আগস্ট সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে হাজির হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তলব করাদের মধ্যে ২৬ জন এফএএস ফাইন্যান্সের ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের রয়েছে ৪ জন। 

সংস্থাটির জনসংযোগ দফতর ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান এ বিষয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, এর আগে পি কে হালদার ইস্যুতে আমাদের টিম ১৫টি মামলা করেছে। অনুসন্ধান পর্যায়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি। এর বাইরে তথ্য জানতে জনসংযোগ দফতরে যোগাযোগ করার জন্য বলেন তিনি।

দুদকের নোটিশে ১৬ আগস্ট যাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে তারা হলেন- এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক নিয়াজ আহমেদ ফারুকী, দিপক কুমার চক্রবর্তী, প্রতিষ্ঠানটির সাবেক এসভিপি ও কর্পোরেট ফিন্যান্স অ্যান্ড রিকভারি এবং আইন বিভাগের প্রধান জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, প্রিন্সিপাল শাখার ব্যবস্থাপক তানভির আহমেদ কমল, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট মীর ইমাদুল হক, ভিপি মো. মনির হোসেন, সিনিয়র অফিসার মৌসুমী পাল, ম্যানেজার আহসান রাকিব, সাবেক সিনিয়র অফিসার তাসনিয়া তাহসিন রোজালিন, সাবেক ভিপি মো. মনিরুজ্জামান আকন্দ, সাবেক এসভিপি ও এসএমই ফিন্যান্সের প্রধান মো. আজিমুল হক এবং এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক এসইভিপি ও সিএডির প্রধান প্রাণ গৌরাঙ্গ দে।

১৭ আগস্ট যাদের তলব করা হয়েছে তারা হলেন- এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহরিয়ার, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল হক গাজী, ভাইস চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম, পরিচালক এম. এ হাফিজ, মো. আবুল শাহজাহান, কাজী মাহজাবিন মমতাজ, মাহফুজা রহমান বেবী, সোমা ঘোষ, ডা. উদ্দাব মল্লিক, মো. আতারুল ইসলাম এবং অরুণ কুমার কুণ্ডু।

১৮ আগস্ট যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে- এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের পরিচালক অঞ্জন কুমার ঘোষ ও প্রদীপ কুমার নন্দী, স্বতন্ত্র পরিচালক বীরেন্দ্র কুমার সোম, সত্য গোপাল পোদ্দার, মোস্তফা আমিনুর রশীদ, পরিচালক মোস্তফা সাহেব, গ্রীণলাইন ডেভলপমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিলন কুমার দাস, জি অ্যান্ড জি এন্টারপ্রাইজের গোপাল চন্দ্র গাঙ্গুলী এবং তামিম অ্যান্ড তালহা ব্রাদার্স লিমিটেডের মো. মুনিরুল ইসলাম।

আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার) ও তার সহযোগীদের যোগসাজশে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও এফএএস ফাইন্যান্স থেকে লুটপাট হয় দুই হাজার কোটি টাকা। শুধুমাত্র একটি কম্পিউটার ব্যবহার করে ৩০টি কাগুজে প্রতিষ্ঠান তৈরি করে মর্টগেজ ছাড়াই ঋণ নিয়ে ওই টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এজন্য আরবি এন্টারপ্রাইজ, জিঅ্যান্ডজি এন্টারপ্রাইজ, তামিম অ্যান্ড তালহা এন্টারপ্রাইজ, ক্রসরোড করপোরেশন, মেরিন ট্রাস্ট, নিউটেক, এমএসটি মেরিন, গ্রিন লাইন ডেভেলপমেন্ট, মেসার্স বর্ণসহ অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। যার রেকর্ডপত্র দুদকের অনুসন্ধান টিমের কাছে রয়েছে। এ অনিয়মের সঙ্গে পি কে হালদার, ওইসব প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও এমডিসহ প্রায় ৭৫ জনের সম্পৃক্ততার প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে। মূলত এসব বিষয়ে খতিয়ে দেখতেই এ তলব।

ক্যাসিনো অভিযানের ধারাবাহিকতায় প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করে দুদক। গত ৮ জানুয়ারি দুদকের অনুরোধে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা দিয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করে ইন্টারপোল। দুদক উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে আরও একটি টিম তার আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়টি অনুসন্ধান করছে। ওই টিম এরইমধ্যে ১৫টি মামলা করেছে। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ভুয়া নামে ঋণ উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগে ৩৭ জনের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা এবং ৩৫০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৩৩ শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক পাঁচটি মামলা করে দুদক।

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিভিন্ন কৌশলে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে অন্তত চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন। কোম্পানিগুলো হলো- ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। এসব কোম্পানি থেকে তিনি ঋণের নামে বিপুল অঙ্কের টাকা সরিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন।

পি কে হালদার কেলেঙ্কারিতে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন ১১ জন। যাদের মধ্যে উজ্জ্বল কুমার নন্দী ছাড়াও তার সহযোগী শংখ বেপারী, রাশেদুল হক এবং সর্বশেষ অবান্তিকা বড়াল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

আরএম/জেডএস