সংগৃহীত ছবি

করদাতাদের সেবা ও রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে কুমিল্লা কাস্টমস ও ভ্যাট কমিশনারেট। ২০২০-২১ অর্থবছরে এরই মধ্যে রাজস্ব আদায়ে সাফল্য দেখানো পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।

জেলা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘কুমিল্লার কর্মপ্রবণ টিম প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। দলবদ্ধ প্রচেষ্টা প্রতিযোগিতা এ অভূতপূর্ব সাফল্যের মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। তাই শুল্ক, আয়কর ও ভ্যাট দপ্তরগুলোর মধ্যে কুমিল্লা কমিশনারেট রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ও রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে রয়েছে।

নানা উদ্যোগের কারণে চলতি অর্থবছরের শুরুতে পিছিয়ে পড়লেও বর্তমানে রাজস্ব প্রবৃদ্ধিতে শীর্ষস্থান, রিটার্ন দাখিলে চারবার চ্যাম্পিয়নস এনবিআরের বেশিরভাগ প্যারামিটারেই প্রথম দিকে অবস্থান করছে কুমিল্লা। জেলাটির চলিত অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধির হার শতভাগ। কুমিল্লা কাস্টমস বিভাগের উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে-

ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ : রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২-এর বাস্তবায়নে কর্মকর্তাদের সরাসরি ও জুম অ্যাপে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অনলাইন লাইভের মাধ্যমে নিয়মিত প্রচারণা চালানো হয়।

সেরা কর্মীদের পুরস্কৃতকরণ : কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ নির্দিষ্ট সময় সেরা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। ফলে কর্মকর্তাদের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়। কর্মকর্তাদের কাজে উৎসাহ প্রদানের জন্য দুই ধাপে মোট ১১২ জন কর্মকর্তাকে পুরস্কৃত করা হয়।

টি উইথ কমিশনার : দিনের সেরা কর্মকর্তাকে প্রতিদিন টি উইথ কমিশনার আমন্ত্রণ জানানো হয়।

অফিসার অব দ্য ডে : নির্ধারিত কাজে সাফল্যের জন্য কাজের দক্ষতা মূল্যায়ন করে অফিসার অব দ্য ডে নির্বাচন করা হয়।

অফিসার অব দ্য উইক : কর্মকর্তাদের কাজের দক্ষতা মূল্যায়ন করে অফিসার অব দ্য উইক নির্বাচন করা হয়।

সভায় তথ্য-উপাত্ত তুলনা : সপ্তাহের প্রতি বুধবার জুম সভা করে তথ্য-উপাত্ত তুলনা ও অসংগতি পর্যালোচনা করে কমিশনারেটের অধীনস্থ সকল ডিভিশন ও সার্কেলের সার্বিক কাজের অগ্রগতি জানতে চাওয়া হয় এবং প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়।

করদাতা সচেতনতা : নিবন্ধন গ্রহণ ও অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বিষয়ে করদাতাদের নিয়মিত সচেতন করা হয়। 

মাইকিং : স্থানীয় সড়ক মার্কেট ও লোকালয়ে মাইকিং করে কর প্রদানে উৎসাহিত করতে প্রচারণা চালানো হয়।

ফোন কল : ছয় জেলায় করদাতাদের সঙ্গে নিয়মিত টেলিফোনে যোগাযোগ করা।

করদাতাদের ক্ষুদে বার্তা দেওয়া : টেলিফোনে যোগাযোগের পাশাপাশি মোবাইলে বিভিন্ন সেবা ও করণীয় সম্পর্কে অবগত করে ক্ষুদে বার্তা দেওয়া হয়।

ডোর টু ডোর কাউন্সিলিং : ব্যবসাস্থলে কিংবা বাসায় গিয়ে কাস্টমস ও ভ্যাটের কর্মকর্তারা সশরীরে করদাতাগণকে কাউন্সিলিং করেন।

উপহার প্রদান : শীর্ষ করদাতাদের বিভিন্ন উপলক্ষে সৌজন্য উপহার প্রদান করা হয় কুমিল্লা কাস্টমসে।

ফেইসবুকে প্রচারণা : কুমিল্লা কাস্টমস ও ভ্যাট কমিশনার ফেইসবুক গ্রুপ ও ফেইসবুক পেইজের মাধ্যমে ভ্যাট রিটার্ন জমা ও করদাতা সচেতনতায় প্রচারণা চালানো হচ্ছে নিয়মিত।

ভাইভার ও হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে মনিটরিং : ভাইভার গ্রুপের মাধ্যমে সকল বিভাগীয় দপ্তরে ও সার্কেলে কি কি কার্যক্রম করা হচ্ছে তা স্পষ্ট ধারণা পেতে মনিটরিং করা হচ্ছে।

ছুটির দিনে করসেবা : করদাতাদের সহায়তার জন্য শুক্র ও শনিবার অফিসে কর্মকর্তারা রিটার্ন অনলাইনে দাখিলের বিষয়ে কাজ করে থাকে কুমিল্লা কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে নিয়মিত সংবাদ পাঠানো, করদাতাদের সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা পালনে সকল অংশীজনের সঙ্গে ভার্চুয়াল যোগাযোগ রক্ষা করা হয়ে থাকে।

কুমিল্লা কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার মো. আবদুল হাকিম এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও সাহস ও উদ্যম নিয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা রাজস্ব আদায় ও রিটার্ন অনলাইন দাখিলে কাজ করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি রিটার্ন দাখিলের অসাধারণ অবদানের জন্য রাজস্ব কর্মকর্তা ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করা হয়। তাছাড়া শীর্ষ করদাতাদের উদ্বুদ্ধ করতে সৌজন্যমূলক উপহার পাঠানোর হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে কাজের মান আরও বাড়বে।

আরএম/এমএইচএস