সরকারি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারী সকল করদাতার তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষমতা পাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন কর অঞ্চলগুলো। 

ফলে করদাতা চাইলেও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের তথ্য গোপন করতে পারছেন না। গোপন করলে কিংবা সঞ্চয়পত্রের জাল কাগজ দিলে আয়কর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে এনবিআর। প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করছে।

তথ্য যাচাই-বাছাই করার উদ্দেশ্যে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মধ্যে একটি সমন্বিত পদ্ধতি অনুসরণ করবে। অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) এর আওতায় জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর এনবিআরের কর অঞ্চলগুলোকে পরীক্ষামূলকভাবে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দেবে। যা ব্যবহার করে কর অঞ্চলগুলো করদাতার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের হিসাব ক্রস চেক করতে পারবে।

এর আগে পরীক্ষামূলকভাবে পাঁচটি কর অঞ্চলকে এ সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ৩১টি কর অঞ্চলকেও ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দেওয়া হবে। যার প্রক্রিয়া কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এ বিষয়ে এনবিআরের পরিচালক (জনসংযোগ) সৈয়দ এ মু’মেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বিষয়টি পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে বলে জানি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো করের আওতা ‍বৃদ্ধি করা। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে বক্তব্য দেওয়া যাবে।

কর অঞ্চলগুলোকে দেওয়া এনবিআরের এক চিঠির সূত্র জানা যায়, এনবিআরের সাথে যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের এরই মধ্যে ফাংশনাল অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) এর আওতায় জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর কর অঞ্চলগুলোকে টেস্ট ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দেবে। যা ব্যবহার করে কর অঞ্চলগুলো করদাতার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের হিসাব ক্রস চেক করবে। এর আগে বিআরটিএ’র সঙ্গে এনবিআরের এপিআই হয়েছিল। যার ফলে নিবন্ধিত মোটরগাড়ির তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ পায় কর অঞ্চলগুলো। যার সুফল পাচ্ছে এনবিআর। কারণ, তথ্য গোপন কিংবা ফাঁকির বিষয়টি সরাসরি যাচাই করতে পারছে। যার ফলে রাজস্ব আদায়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সাধারণত আয়কর আইন অনুযায়ী করদাতার রিটার্ন অডিটে ফাঁকির বিষয়টি ধরা পড়লে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের তথ্যানুসারে, ২০২১-২২ অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। যা গেল অর্থ বছরের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের বাজেটে যার লক্ষ্য ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা।

নতুন নিয়মে একক নামে ৫০ লাখ এবং যৌথ নামে ১ কোটি টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে না। গ্রাহক পেনশনার হলে একক নামে এক কোটি এবং যৌথ নামে দেড় কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন। গত ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এখন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পরিবার সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা বিদ্যমান নীতিমালায় যা-ই থাকুক না কেন, তিনটি স্কিম মিলে একক নামে ৫০ লাখ অথবা যৌথ নামে ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে।

সঞ্চয় অধিদফতরের তথ্যমতে, পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রে মুনাফার ওপর উৎসে কর দিতে হয় ৫ শতাংশ। এর বেশি সঞ্চয়পত্র থাকলে উৎসে ১০ শতাংশ কর দিতে হবে। এছাড়া এখন সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে অবশ্যই ব্যাংক হিসাব লাগে। সঞ্চয়পত্রের মুনাফা এবং মেয়াদ শেষে বিনিয়োগের মূল টাকা সংশ্লিষ্ট ক্রেতার ব্যাংক হিসাবে সরাসরি চলে যায়।

আরএম/এইচকে