স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামী ২২ আগস্ট (রোববার) থেকে আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির অফিস সম্পূর্ণভাবে খোলা থাকবে। সরাসরি কাস্টমার সার্ভিসের জন্য অনলাইন অ্যাপোয়েন্টমেন্ট নিতে বলা হয়েছে।

সোমবার (১৬ আগস্ট) প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এর আগে ১৫ আগস্ট রাতে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেল তার ফেসবুকে ওয়ালে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এমনটা জানিয়েছিলেন।

স্ট্যাটাসে মোহাম্মদ রাসেল লিখেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামী রোববার থেকে ইভ্যালি অফিস সম্পূর্ণভাবে খোলা থাকবে। সরাসরি কাস্টমার সার্ভিস এর জন্য অনলাইন অ্যাপোয়েন্টমেন্ট নেওয়ার অনুরোধ করা হলো। এই সংক্রান্ত বিস্তারিত জানানো হবে। ইনশাল্লাহ ইভ্যালি পূর্ণ শক্তিতে কার্যক্রম চলতে থাকবে। পাশে থাকুন।’

এদিকে ক্রেতার অর্ডার করা পণ্য দিতে গড়িমসি; নানা অনিয়ম আর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে চলছে ব্যবসা; সম্পদের চেয়ে ছয় গুণ বেশি দেনা। এমন সব অভিযোগের কারণে ইভ্যালির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছে অনেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। তাদের গিফট ভাউচারেও দিচ্ছে না পণ্য। অন্যদিকে মূল্য ফেরত পাচ্ছেন না গ্রাহক। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান কার্যালয় বন্ধ রাখে ইভ্যালি। এতে বিপাকে পড়েন সাধারণ গ্রাহকরা।

রাজধানীর ধানমন্ডির সোবহানবাগে ইভ্যালি প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে অনেক গ্রাহক অফিস বন্ধ দেখে হতাশ হয়ে ফিরে আসেন। প্রতিষ্ঠানটির হট লাইনে কল করলেও ব্যস্ত দেখায়। ইভ্যালি জানায়, করোনার কারণে এখন অফিস বন্ধ। তবে অনলাইনে গ্রাহকদের সব ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর এখন অফিস খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

২০১৮ সালে যাত্রা শুরু হওয়া ইভ্যালি একটি বাংলাদেশ ভিত্তিক ইকমার্স প্লাটফর্ম। লোভনীয় ডিসকাউন্ট কিংবা ক্যাশব্যাকের অফার প্রসঙ্গে ইভ্যালির নাম সর্বাগ্রে। স্বল্প সময়ে অনলাইন ক্রেতার মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করলেও প্রতিষ্ঠানটি এখন গ্রাহক ভোগান্তি ও সমালোচনার শীর্ষে অবস্থান করছে।

এর আগে ইভ্যালির ‘সম্পদের চেয়ে ছয় গুণ বেশি দেনা’ বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনে উঠে আসে ইভ্যালির মোট দায় ৪০৭ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম নিয়েছে ২১৪ কোটি টাকা, আর মার্চেন্টদের কাছ থেকে বাকিতে পণ্য নিয়েছে ১৯০ কোটি টাকার। স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে কমপক্ষে ৪০৪ কোটি টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা। কিন্তু সম্পদ আছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকার।

এছাড়া গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির নেওয়া অগ্রিম ৩৩৯ কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এ টাকা আত্মসাৎ বা অবৈধভাবে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা রয়েছে।

সবশেষ গত বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) দেনা-পাওনা ও সম্পদের হিসাব দেওয়ার জন্য তিনটি ধাপে সময় দিয়ে ইভ্যালিকে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আগামী ১৯ আগস্টের মধ্যে সম্পদ ও দায় বিবরণী, ২৬ আগস্টের মধ্যে মোট গ্রাহক ও গ্রাহকের কাছে দেনার পরিমাণ এবং ২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মার্চেন্টদের কাছে দেনার পরিমাণ জানাতে বলা হয়েছে। এর আগে, ১৯ জুলাই এসব তথ্য জানাতে ইভ্যালিকে চিঠি দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। জবাবে দায়-দেনার তথ্য ও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে ছয় মাস সময় চেয়ে গত ১ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠির উত্তর দেয় ইভ্যালি।

গত ৭ জুলাই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালিতে এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ কর‌বে বলে ঘোষণা দেয় দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ যমুনা। প্রাথমিকভাবে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে, পরে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে মোট এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে বলে জানায় গ্রুপটি।

এসআই/এসএম