গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গুলশান থানায় দায়ের করা মামলায় ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেফতার করা হয় বৃহস্পতিবার।

শুক্রবার আদালত তাদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতার যখন এ অবস্থা, তখনও থেমে নেই প্রতিষ্ঠানটির চটকদার অফার। গ্রাহকদের একাংশ বলছেন, ইভ্যালির কার্যক্রম অবশ্যই বন্ধ করে দেওয়া উচিত।

ইভ্যালির ফেসবুক পেজে শুক্রবার সকাল থেকে নতুন ‘ইভ্যালি টি-টেন, নামে অফার চালুর কথা বলা হয়েছে। এ অফারের অধীনে মাম পানি, স্মার্ট টিভি, এয়ার কন্ডিশনার, স্যামসাং গ্যালাক্সি ট্যাব এস৬, আখতার ফার্নিচারের সোফা, বৈদ্যুতিক ফ্যান, মসলিন সালোয়ার কামিজ, হ্যান্ডওয়াশ, বাইকসহ নানা পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখা গেছে।

অফারে বলা হয়েছে, মাত্র ১০ শতাংশ মূল্য অগ্রিম পরিশোধে ১০ কার্যদিবসে পাওয়া যাবে পণ্য। ১০ শতাংশ অগ্রিম টাকা নিয়ে আবেদন করার পর কনফার্মেশন ম্যাসেজ পেলেই পণ্যের পুরো টাকা পরিশোধ করতে হবে। পুরো টাকা পরিশোধ করার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হবে।

শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ইভ্যালির ফেসবুক পেজে পোস্টটি দেওয়া হয়

এ ছাড়াও ইভ্যালিতে সাইক্লোন অফার, আর্থকোয়াক অফার, ক্যাশব্যাক অফার, ক্যাশ অন ডেলিভারি, প্রায়োরিটি স্টোর অফার, টি-ফাইভ, ট্রি-থ্রি ও ব্র্যান্ডেড ল্যাপটপ অফার চলছে।

শুক্রবার সকালে ইভ্যালির ফেসবুক পেজে নতুন করে অফার দেওয়া হয়েছে, পানির দামে ব্র্যান্ডেড ল্যাপটপ কেনার আজই শেষ দিন! ইভ্যালির গ্র্যান্ড ব্র্যান্ড মেলায় লেনোভোর (Lenovo) আকর্ষণীয় ও জনপ্রিয় ল্যাপটপে ৭০ শতাংশ ক্যাশব্যাক অফার! অফার চলবে রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত। স্টক সীমিত, তাই পছন্দের ল্যাপটপটি বুঝে নিতে অর্ডার করতে হবে দ্রুত!

ফেসবুকে ‘ইভ্যালি টি-টেন’ অফারের পোস্টে প্রতারণা নিয়ে নানা মন্তব্য করেছেন গ্রাহকরা। অনেকে তাদের পণ্য চেয়ে মন্তব্য করেছেন। ধ্রুব সরকার নামে এক গ্রাহক মন্তব্য করেছেন, ‘এই পানি যে অর্ডার দেবে, সে পিপাসায় মারা যাবে।’ ইমরান হোসেন রাব্বি রাজ লেখেন, ‘ইভ্যালির সিইও গ্রেফতার হওয়ার পরও কোন পাগল অর্ডার দেবে’। রাসেল আহমেদ নামে এক গ্রাহক মন্তব্য করেন ৫ জুনের অর্ডার ছিল, এখনো আপডেট নেই।

র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী মো. রাসেল

মোবাইল, টিভি, এসি, মোটরবাইক, গাড়িসহ নানা পণ্যে মূল্যছাড়ে আকর্ষণীয় অফার দিয়ে গ্রাহকদের ‘প্রলুব্ধ করে’ ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলের লক্ষ্য ছিল, ‘গ্রাহকদের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া’। গ্রেফতারের পর এমনটিই জানিয়েছে র‍্যাব।   

রাজধানীর গুলশান থানায় প্রতারণা মামলা দায়েরের পর বৃহস্পতিবার বিকেলে মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে গ্রেফতার হন ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেল। র‌্যাব হেডকোয়ার্টারে তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব)। 

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাসেল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, ইভ্যালির গ্রাহক সংখ্যা ৪৪ লাখেরও বেশি। শিশুদের নানা পণ্যের ব্যবসা ছেড়ে সামান্য পুঁজি নিয়ে রাসেল ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করেন। 

র‍্যাব সদরদফতরে রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিন

তিনি বলেন, বিশাল অফার, বিশাল ছাড়, ক্যাশব্যাক অফার দিয়ে রাসেল সাধারণ মানুষকে প্রলুব্ধ করতেন। যার ফলে দ্রুততম সময়ে তার বিশালসংখ্যক গ্রাহক দাঁড়িয়ে যায়। তার ব্যবসায়িক কৌশল ছিল, তৈরিকারক বা গ্রাহকদের চেইন নেটওয়ার্কের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়া।

কমান্ডার মঈন বলেন, প্রতিষ্ঠানটির নেটওয়ার্কে যত গ্রাহক তৈরি হয়, দায় তত বাড়তে থাকে। গ্রেফতার রাসেল জেনেশুনে নেতিবাচক স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ করেছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানান। তিনি আরও জানান, বিভিন্ন পণ্যে বিশাল মূল্যছাড় দিতে গিয়ে ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির বিশাল আকারের দায় তৈরি হয়, যার পরিমাণ ‘হাজার কোটি টাকা।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইভ্যালির দায় ছিল ৪০৩ কোটি টাকা, যেখানে তাদের সম্পদ ছিল ৬৫ কোটি টাকা। বিভিন্ন সংস্থার এসব প্রতিবেদনের বিষয়ে গ্রেপ্তার রাসেল র‌্যাবকে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি বলে জানান র‍্যাবের এ কর্মকর্তা।

এমআই/আরএইচ