পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, গার্মেন্টস শিল্পের মতোই আমাদের দেশের আইসিটি খাত প্রসারিত হচ্ছে। সম্ভাবনাময় এ খাতের উন্নয়নে সরকার আইসিটি সেক্টরকে অনেক সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে জমি হস্তান্তর চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি, কালিয়াকৈর ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনে সাতটি এবং শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে দুটি কোম্পানিকে প্লট বরাদ্দ দিয়েছে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক।

এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এ কথা বলেন। প্লট বরাদ্দ পাওয়া ৯ কোম্পানি ৫৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পাশাপাশি প্রায় ৩০০০ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
 
বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। চুক্তিতে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ এবং নয় কোম্পানির প্রধানরা স্বাক্ষর করেন।

এছাড়াও হালিমা টেলিকমকে বেসরকারি সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক ঘোষণার অনুমতিপত্রও আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আধুনিক সমাজ গড়ে উঠেছে আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তির মাধ্যমে। শুরু থেকে আমরা গার্মেন্টস শিল্প নিয়ে গর্ব করি। কারণ সস্তা শ্রমের ফলে বহির্বিশ্বে দেশের গার্মেন্টস শিল্প দ্রুত বিকশিত হয়েছিল। বর্তমানে গার্মেন্টস শিল্পের মতোই আমাদের দেশের আইসিটি খাত প্রসারিত হচ্ছে।

ওয়ালটন কোম্পানিকে উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী বলেন, আপনাদের ফ্যাক্টরিতে অনেক পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। আপনারা সবসময়ই পণ্যের মান নিয়ে সচেতন থাকবেন। আমাদের কোয়ালিটির ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। এখানে যারা আজ চুক্তিবদ্ধ হলেন সবাইকে অভিনন্দন। আইসিটি খাতে আরও বেশি বিনিয়োগে বেসরকারি সেক্টরকে নিয়ে এগোতে হবে। প্রয়োজনে বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি নিরাপত্তা দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, দেশ উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বে আমাদের মর্যাদাও বাড়ছে। কিন্তু আমার মনে হয়, আমাদের উন্নত রাষ্ট্রের চেয়ে বেশি প্রয়োজন সভ্য রাষ্ট্রের। তাহলে দেশের যেকোন উন্নয়ন আরও বেশি টেকসই হবে।

জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আমাদের জাতীয় জীবনে ২০২১ সাল খুব গুরুত্বপূর্ণ। মহামারির সময় এই ২০২১ সালে যেভাবে অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছি তার কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রীর। এই ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তবে তিনি তার স্বপ্ন পূরণ করতে না পারলেও তারই সুযোগ্য কন্যা তা বাস্তাবায়নে কাজ করছেন নিরলসভাবে।

তিনি আরও বলেন, মহামারিকালে দেশের উন্নয়ন কাজ থেমে নেই। একনেকে একের পর এক প্রকল্প পাস হয়েছে। আজকে দেশের এতো হাইটেক পার্ক তা প্রধানমন্ত্রী না থাকলে হতো না।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে বিএনপির কারণে আমরা স্যাটেলাইট ক্যাবলে যুক্ত হতে পারিনি। পরবর্তী সময়ে আমরা তাতে যুক্ত হয়েছি। আগে দেশে এক ফোন কোম্পানি ছিল, এখন সব কোম্পনি উন্মুক্ত। একটি সঠিক সিদ্ধান্ত দেশকে যে কতটা এগিয়ে নিতে পারে তার অন্যতম উদাহরণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

চুক্তির আওতায় আগামী ৪০ বছরের জন্য বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, টেকনোমিডিয়া লিমিটেড, ড্যাফোডিল কম্পিউটারস লিমিটেড, সেলট্রোন ইলেক্ট্রো ম্যানুফ্যাকচারিং সার্ভিস লিমিটেড, উল্কাসেমি প্রাইভেট লিমিটেড, ম্যাকটেল লিমিটেড, চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন এবং শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, যশোর রেডডট ডিজিটাল ও ফেলিসিটি বিগ ডাটা লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগের সুযোগ পেল।

চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে হার্ডওয়্যার কোম্পানি ক্যাটাগরিতে ৩ দশমিক শূন্য এক একর জায়গা বরাদ্দ পেয়েছে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। কোম্পানিটি এখানে আইটি আইটিইএস, ডিজিটাল ডিভাইস ম্যানুফ্যাকচারিং নিয়ে কাজ করতে ৬ দশমিক ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে, সেই সঙ্গে ১ হাজার ৫৫০ জনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবে। টেকনোমিডিয়া লিমিটেডের অনুকূলে দশমিক ৮৭ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে তারা এটিএম, সিআরএম, আরসিডিএম মেশিন এসম্বল করতে প্রায় ২ দশমিক ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে এবং ২০০ জনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবে। ড্যাফোডিল কম্পিউটারস লিমিটেড পাচ্ছে ৯৬ একর জমি, যেখানে তারা প্রায় ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে ১০০ জনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবে। প্রতিষ্ঠানটি কালিয়াকৈর আইটি এবং ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী এসম্বল করবে। মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট এসম্বল এবং উৎপাদনের জন্য প্রায় ৭ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে মেডিকেল টেকনোলজি প্ল্যান্ট স্থাপন করবে সেল ট্রোন ইলেক্ট্রো ম্যানুফ্যাকচারিং সার্ভিস লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠানটি পাচ্ছে ৬৫ একর জমি, যেখানে ২৫০ জন মানুষের কর্মসংস্থান হবে। উল্কাসেমি প্রাইভেট লিমিটেড সেমিকন্ডাক্টও ডিজাইন করতে প্রায় ২৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে, যেখানে ৫৫০ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। উল্কাসেমি প্রাইভেট লিমিটেড কালিয়াকৈরে পাচ্ছে ১ দশমিক ৮১ একর জমি। স্মার্টফোন এসেম্বল করতে ৬ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে ম্যাকটেল লিমিটেড, এরা পাচ্ছে ১ দশমিক ৩৭ একর জমি। যেখানে ৩৩২ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

অন্যদিকে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, যশোরে রেডডট ডিজিটাল লিমিটেড ও ফেলিসিটি বিগ ডাটা লিমিটেড ডাটা সেন্টার স্থাপনে কাজ করবে। প্রতিষ্ঠান দুটির অনুকূলে ২১ ও ৪৫ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অনুষ্ঠানে কুমিল্লার হালিমা টেলিকম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে বেসরকারি হাই-টেক পার্ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

এসআর/এসএম