জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনসহ নয়টি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৬ হাজার ৫৫১ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৭৪২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এছাড়াও প্রকল্প ঋণ থেকে ২ হাজার ৭৮২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) সকাল ১০টায় একনেক বৈঠক শুরু হয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।

একনেক সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা বিভাগ, আইএমইডি সচিব ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের কাজ শেষ করতে চূড়ান্তভাবে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। যারা এই প্রকল্পের বিলম্বের ক্ষেত্রে জড়িত তাদের শাস্তি দিতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে তিনি কাজও চলমান রাখতে বলেছেন।’

জানা যায়, সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ২৭৫ কোটি ৪৩ লাখ ৫১ হাজার টাকা।
২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরে প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় একনেক। এরপর প্রথম দফায় ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় দফায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। পরে ব্যয় বাড়িয়ে ৬১১ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত (তিন বছর বৃদ্ধি) মেয়াদ বাড়িয়ে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধন করা হয়। প্রস্তাবটি ২০১৮ সালের ২১ জুন একনেকে অনুমোদন পায়। এতেও শেষ হয়নি বাস্তবায়ন।

ফলে ২০১৯ সালের জুনে প্রকল্পটির আন্তঃখাত সমন্বয় করা হয়। কার্যক্রম বিভাগ ২০২০ সালের ২২ জুন প্রকল্পটির মেয়াদ ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছর বৃদ্ধি করে। পরে দ্বিতীয় সংশোধনের মাধ্যমে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৭৪২ কোটি টাকা এবং মেয়াদ ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করে প্রস্তাব পাঠানো হয়। এই প্রস্তাবের ওপর ২০২০ সালের ১২ মার্চ প্রথম প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়।

পুনর্গঠিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) প্রথম পিইসি সভার সিদ্ধান্তে সঠিকভাবে প্রতিপালন না করায় ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট দ্বিতীয় পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিদ্ধান্তের আলোকে পুনর্গঠিত ডিপিপি চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত একনেক সভায় উপস্থাপিত হলে তা অনুমোদন না করে প্রকল্পের বাস্তবায়ন দেরি হওয়ার কারণ এবং দায়দায়িত্ব নিরূপণ করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। একইসঙ্গে ভালোভাবে পরীক্ষা করে প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য যথা নিয়মে পুনরায় একনেকে উপস্থাপনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

একনেক সভার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ জানুয়ারি আইএমইডির সচিবকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। গত ১ জুন আইএমইডি তদন্ত প্রতিবেদন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে পাঠায়। এখন ৬৮২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয় ধরে প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে 

সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার (ফেজ-৩)প্রকল্প। টাঙ্গাইল-দেলদুয়ার-লাউহাটি-সাটুরিয়া-কাওয়ালীপাড়া-কালামপুর বাসস্ট্যান্ড সড়ক আঞ্চলিক মহাসড়কের যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প। কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্প। জগন্নাথপুর ও মোহনগঞ্জ উপজেলায় দুটি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (এটিআই) স্থাপন প্রকল্প। এছাড়া রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার নদীতীর সংরক্ষণ, ছোটনদী, খাল-বিল পুনঃখনন ও জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প।

শরীয়তপুর জেলার কীর্তিনাশা নদীর ডান ও বাম তীর রক্ষা প্রকল্প। বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি লাইন প্রকল্প। খুলনা থেকে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এসআর/এমএইচএস