মাতারবাড়ির আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রকল্পে এক ধাক্কায় ব্যয় বাড়ছে ১৫ হাজার ৮৭০ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি প্রকল্প প্রথম সংশোধনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। বিশাল অংকের এ ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মেয়াদও বাড়ছে সাড়ে তিন বছর। একনেক কার্যপত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানায়, ‘মাতারবাড়ি ২*৬০০ মে.ওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্ট’ ১ম সংশোধনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় বিদ্যুৎ বিভাগ। প্রকল্পটি জুলাই ২০১৪ থেকে জুন ২০২৩ সালে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রথম সংশোধনের মাধ্যমে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ জুলাই ২০১৪ থেকে ডিসেম্বর ২০২৬ সাল পর্যন্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রকল্পের মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনের মাধ্যমে ১৫ হাজার ৮৭০ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয় বাড়িয়ে মোট ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা এলাকা বাস্তবায়ন করছে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল)।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে- (ক) দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে ২*৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ, (খ) মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দর উন্নয়নে সহায়তা করা, (গ) ২০২৪ সালের মধ্যে মানসম্পন্ন ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং (ঘ) জ্বালানি সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা।

প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- (ক) ১৬০৮.৪৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ, (খ) ১৪.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ, ৩৫০ মিটার প্রস্থ ও ১৮.৫ মিটার গভীরতার চ্যানেল, সি-ওয়াল রেভেটমেন্ট এবং সেডিমেন্ট মিটিগেশনসহ আনুষঙ্গিক ফ্যাসিলিটিস নির্মাণ, (গ) পাওয়ার প্ল্যান্ট এরিয়া ও টাউনশিপের জন্য ভূমি উন্নয়ন, (ঘ) জেটি, কোল ইয়ার্ড ও চিমনি নির্মাণ, (ঙ) ২*৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল পাওয়ার প্লান্ট ও আনুষঙ্গিক ফ্যাসিলিটিজ নির্মাণ, (চ) পল্লী বিদ্যুতায়নের আওতায় ২৫/৪১ এমভিএ ক্ষমতার ১৩২/৩৩ কেভি সঞ্চালন উপকেন্দ্র, ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন, ১০ এমভিএ ক্ষমতার ৩৩/১১ কেভি বিতরণ উপকেন্দ্র নির্মাণ, (ছ) ভূমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং (জ) টাউনশিপ নির্মাণ।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীতকরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০২৪ সালের মধ্যে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বিধায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বলেছে, (ক) চ্যানেল, জেটি, ভূমি উন্নয়ন এবং পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণসহ অন্যান্য সিভিল ওয়ার্কস খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়া, (খ) পরামর্শক সেবা খাতে পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধি, (গ) ভ্যাট-আইটি ও আমদানি শুল্ক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, (ঘ) পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ কার্যক্রম খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, (ঘ) পল্লী বিদ্যুতায়ন ও টাউনশিপ নির্মাণ খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, (ঙ) আইডিসি ও কন্টিনজেনসি খাতে ব্যয় হ্রাস এবং (চ) ডিটেইল ডিজাইন অনুযায়ী কাজের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) শরিফা খান বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মানসম্পন্ন, নির্ভরযোগ্য ও জ্বালানি সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া প্রকল্পটির মাধ্যমে সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে। এজন্য চলমান এ প্রকল্পটির চাহিদা অনুযায়ী ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে একনেকে।

এসআর/এসএম