# কমানো হয়েছে সরকারি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা

# জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭.৪ শতাংশ পুনর্নির্ধারণ

চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) মুদ্রা ও ঋণ কর্মসূচিতে পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।  অর্থবছরের শেষ ছয় মাসের জন্য মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক সম্পদ অর্জন, নিট আভ্যন্তরীণ সম্পদ, ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ ও ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির নিরাপদ সীমা সংশোধন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য জানিয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও প্রকাশ করে। আগে ছয় মাস অন্তর এই মুদ্রানীতি একটি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই মাসে ও অন্যটি জানুয়ারি মাসে ঘোষণা করত। কিন্তু গত অর্থবছরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে বছরে দুইবারের বদলে একবার মুদ্রানীতি ঘোষণার নিয়ম চালু করা হয়েছে। তবে জানুয়ারিতে লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কাটছাঁট করে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
 
দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, আভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে এর একটি পরিকল্পনা করা হয়।

পুনর্নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৮.২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭.৪ শতাংশে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির নিরাপদ সীমাও কিছুটা সংশোধন করে ১৫.৬ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়। তবে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধিতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। বৈদেশিক সম্পদ অর্জনের বর্তমান লক্ষ্যমাত্রা ৫.৮ শতাংশ থেকে ২০.১ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। নিট আভ্যন্তরীণ সম্পদের লক্ষ্যমাত্রা ১৮.৩ থেকে ১৮.৬ শতাংশ ও ব্যাংক থেকে সরকারি ঋণ ৪৪.৪ শতাংশ থেকে ৩১.৭ শতাংশে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ৩১ জানুয়ারি গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে মনিটরি পলিসি কমিটির ৫০তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বৈশ্বিক ও দেশীয় অর্থনীতির সামষ্টিক চলকগুলোর সর্বশেষ পরিস্থিতি ও স্বল্প মেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি পর্যালোচনা করে চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) শুরুতে প্রণীত সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত রেখে অবশিষ্ট সময়কালের মুদ্রা ও ঋণ কর্মসূচিতে মধ্য-মেয়াদে সামান্য পরিবর্তন আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইএমএফের প্রকাশিত সর্বশেষ ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক আউটলুক ও বৈশ্বিক শিল্পোৎপাদন- বিশেষ করে ম্যানুফ্যাকচারিং ও বৈশ্বিক বাণিজ্যের মাসিক চিত্র (ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত) এবং রয়টার্সের  দৈনিক ভিত্তিতে (২১ জানুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত) প্রকাশিত স্বর্ণ ও অপরিশোধিত তেলের দামের গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করা হয়। তার ওপর ভিত্তি করে বলা হয় যে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব কাটিয়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ২০২১ সালের মধ্যে অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে। 

তবে, অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির প্রকৃত খাতের সর্বশেষ তথ্য-উপাত্তের পর্যালোচনা ও আমদানি-রপ্তানিসহ বহিঃ খাতের সার্বিক চাহিদা পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ইকোনোমিক মডেলিং অ্যান্ড ফোরকাস্টিং অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি সরকারের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৭.৪ শতাংশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রয়েছে। যা বছরের শুরুতে ৮.২ শতাংশ হবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছিল।’

আরো বলা হয়, বিশ্ব ব্যাংক ও জাতিসংঘের এফএও কর্তৃক মাসিক ভিত্তিতে সর্বশেষ (ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত) প্রকাশিত পণ্যের (এনার্জি ও নন-এনার্জি) মূল্যসূচক ও খাদ্য (চালসহ) মূল্যসূচকের গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে সভায় অভিমত ব্যক্ত করা হয় যে, নিকট ভবিষ্যতে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে হিসেবে দেশীয় মূল্যস্ফীতির উপরও নিকট ভবিষ্যতে কিছুটা চাপ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে সরকার ইতোমধ্যেই চাল আমদানির উপর শুল্ক হ্রাসসহ বেশ কিছু সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ফলে বর্তমানে মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিম্নমুখী রয়েছে। আপাতত চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী গড় মূল্যস্ফীতি ৫.৪ শতাংশের মধ্যে সীমিত থাকবে বলে সভায় প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়।

সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক মাসিক ভিত্তিতে প্রকাশিত সিডিউলড ব্যাংক স্ট্যাটিসটিকস (এসবিএস) এর সর্বশেষ (ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত) তথ্যাবলী বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়। চলতি অর্থবছরে মুদ্রানীতির নমিনাল অ্যাংকর হিসেবে ব্যবহৃত ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহের (এম ২) প্রবৃদ্ধি প্রোগ্রাম পথকে অনুসরণ করেই অগ্রসর হচ্ছে। তবে এম ২ এর উপাদান হিসেবে বিবেচিত নিট বৈদেশিক সম্পদের প্রবৃদ্ধি প্রোগ্রাম পথের চেয়ে অনেকটা বেশি। নিট আভ্যন্তরীণ সম্পদের প্রবৃদ্ধি প্রোগ্রাম পথের চেয়ে কিছুটা কম হচ্ছে। 

একদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহের জোরালো প্রবৃদ্ধি ও অন্যদিকে আমদানি ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়ার কারণে চলতি অর্থবছরে নিট বৈদেশিক সম্পদ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমতাবস্থায়, অর্থবছরের শুরুতে প্রণীত সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি ভঙ্গি অব্যাহত রেখেই নিট বৈদেশিক সম্পদের প্রবৃদ্ধিকে ঊর্ধ্বমুখী সংশোধন করা হবে। নিট অভ্যন্তরীণ সম্পদের প্রবৃদ্ধিকে নিম্নমুখী সংশোধন করে চলতি অর্থবছরের মুদ্রা ও ঋণ কর্মসূচিতে মধ্য-মেয়াদে কিছুটা পরিবর্তন আনা হবে। 

এ প্রেক্ষিতে, সরকার কর্তৃক জিডিপি প্রবৃদ্ধির নিম্নমুখী সংশোধন (৮.২ শতাংশ হতে ৭.৪ শতাংশ) করার কারণে অর্থনীতিতে ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির নিরাপদ সীমাও কিছুটা সংশোধন করে ১৫.৬ শতাংশ হতে ১৫.০ শতাংশে পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়। তবে করোনার প্রভাব কাটিয়ে নিকট ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক কর্মকাল স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকার বিবেচনায় বেসরকারি খাতে প্রদত্ত ঋণের প্রবৃদ্ধি প্রারম্ভিকভাবে মুদ্রানীতিতে নির্ধারিত ১৪.৮ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়।

এসআই/ওএফ