দুই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড় দিয়েও ক্রেতা পাচ্ছেন না পূর্বাচলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ব্লেজার বিক্রেতারা। মুজিব কোট, মোদি কোটসহ বাচ্চাদের ব্লেজারের দাম হাতের নাগালে। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে স্টলগুলোতে পাঁচ হাজার টাকার ব্লেজার মাত্র দুই হাজার টাকায় দেওয়া হচ্ছে। তারপরও ক্রেতার দেখা পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। মেলার ২০তম দিনেও অলস সময় পার করছেন ব্লেজার বিক্রেতারা।

মেলা কর্তৃপক্ষ বলছে, আগারগাঁওয়ের বাণিজ্য মেলার অর্ধশতাধিক স্টল ছিল ব্লেজারের। এবারের পূর্বাচলের মেলায় ৮-৯টি স্টল এসেছে। অর্থাৎ গতবারের তুলনায় চার ভাগের একভাগ। সুতরাং বিক্রি বাড়ার কথা।

ব্যবসায়ীরা জানান, মেলায় স্টল কম থাকার পরেও নতুন নতুন ডিজাইনের কটি, ব্লেজার ও কোট বিক্রি হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত যা বিক্রি হয়েছে তাতে ব্যবসা তো দূরের কথা স্টল ভাড়ার টাকাও হবে না। এরপর কর্মচারীর বেতন ও নিজের খরচ রয়েছে। করোনা ও নতুন জায়গার মেলায় কারণে অন্যান্য বারের চেয়ে এবারের লোকজন কম। শীত কম থাকায় ব্লেজারের চাহিদা কমে গেছে, তাই কেনাবেচাও কম হচ্ছে।

সুমাইয়া ফ্যাশন স্টলের মালিক আরিফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই রকম নিরামিষ মেলা আর দেখি নাই। মেলা মানেই মানুষের গ্যাদারিং, কেনা-বেচার ভিড় থাকবে। কিন্তু এখানে তার কিছু নেই।

তিনি বলেন, গতবারের মেলায় যে বিক্রি হয়েছে, এবারের মেলায় তার ১০ ভাগের একভাগ হকে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ। স্টল ভাড়ার টাকা উঠাতে হিমশিম খাচ্ছি।

আরও পড়ুন : ‘এ নিয়ে ১৫ বার বাংলাদেশে এলাম’

রাজিব ব্লেজার হাউজের মালিক রাজিব বলছেন, আগারগাঁওয়ের মেলায় মানুষের আনাগোনা ছিল, বেচা-বিক্রিও ভালো ছিল। এখানে তার বিপরীত চিত্র। 

তিনি বলেন, আমি স্টল দিয়েছি মেলা শুরুর এক সপ্তাহ পর। তারপরও গত ১০-১২ দিনে বিক্রিই হয়নি বলেই চলে। তবে আশা করছি, শেষ ১০ দিনে বিক্রি ভালো হবে।

৪৫তম স্টলের নাম সেভিল রো কোম্পানি। মিরপুরের স্থায়ী শো রুমের এই স্টলটিতে ছোট-বড় নানা ধরনের ব্লেজার সারি সারি টানানো রয়েছে। দেওয়া হয়েছে ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্ট অফার। কেউ ব্লেজার কিনলেই নির্ধারিত মূল্যের অর্ধেক দামে কিনতে পারছেন।

দোকানে কর্মরত সাজিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়েছে। তারপরও বেচা-বিক্রি নাই। শো রুমে যে ব্লেজার ৫ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি করছি, মেলায় সেই ব্লেজার মাত্র ২ হাজার ৫৫০ টাকায় দিচ্ছি। ৬ হাজার ৫০০ টাকার ব্লেজার বিক্রি করছি ৩ হাজার ২৫০টাকা। তারপরও ক্রেতাদের চাহিদা নেই।

আশিক ফ্যাশনের মালিক আশিকুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাণিজ্য মেলায় ৫ হাজার টাকার ব্লেজার ২ হাজার টাকায় বিক্রি করছি। মেলায় উপলক্ষে ছাড় দিয়েছি, তারপরও ক্রেতা নেই বললেই চলে।

আরও পড়ুন : নাচের তালে আইসক্রিম বিক্রি নজর কেড়েছে সবার

এম/এস সালেক এন্টারপ্রাইজের কর্মকর্তা শহিদুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেলায় দুই ক্যাটাগরির ব্লেজার বিক্রি করছি। এর মধ্যে একটি ক্যাটাগরির ব্লেজারের দাম ২ হাজার টাকা। আরেকটি ক্যাটাগরির ব্লেজারের দাম ২ হাজার ৬০০ টাকা।

তিনি বলেন, বড়দের পাশাপাশি বাচ্চাদের ব্লেজারে দিচ্ছি গোল্ডেন অফারে। যেকোনো ব্লেজার মাত্র দেড় হাজার টাকায় বিক্রি করছি। মুজিব কোট ও মোদি কোট বিক্রি করছি দেড় হাজার টাকায়।

শহিদুল বলেন, মেলার আজ ২০তম দিন। কিন্তু এখনো পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হয়নি। আজ সারাদিনে সাত হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। তবে আগামীকাল (শুক্রবার) সপ্তাহিক ছুটি। এই সময়ে আশা করছি বিক্রি ভালোই হবে।

মেলার পরিচালক ও ইপিবি সচিব মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, করোনার পাশাপাশি পূর্বাচলে মেলা হওয়ার কারণে ক্রেতার উপস্থিতি কম। আশা করছি আগামীকাল (শুক্রবার) থেকে জমে উঠবে মেলা। কেনাবেচা দুটোই বাড়বে। ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশাও পূরণ হবে।

আরও পড়ুন : ‘ডাবল চ্যালেঞ্জে’র বাণিজ্য মেলায় আছে শঙ্কাও

উল্লেখ্য, পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত বাণিজ্য মেলায় দেশি-বিদেশি মোট ২২৫টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে বিদেশি ৬টি স্টল ও ৪টি মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। বাকিগুলো দেশি স্টল।

এবারও প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন, জেনারেল স্টল, ফুডকোট, মিনি স্টল, প্রিমিয়ার স্টল ক্যাটাগরি রয়েছে। মিলনায়তনের ভেতরে নিজস্ব ক্যাফেটরিয়াও রয়েছে। সেখানে একসঙ্গে ৫০০ জন বসে খেতে পারেন।

প্রবেশমূল্য ও সময় : মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে। তবে ছুটির দিনে মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এবার প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। তবে কেউ যদি বিকাশে টিকিট নেন, তাদের জন্য ৫০ শতাংশ ছাড় রয়েছে।

এমআই/ওএফ