প্রতীকী ছবি

প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে নিলামে অংশগ্রহণকারী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের প্রতি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এখন ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতেও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আইপিওতে কোটা কমানো হয়েছে।

অন্যদিকে, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কোটা ১০ শতাংশ বাড়িয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জে কমিশন (বিএসইসি)। যা আগামী এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।

কমিশন মনে করছে, এতে করে আইপিওতে পুঁজিবাজারে আসা কোম্পানিগুলোর শেয়ার কারসাজি বন্ধ হবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবেন। পাশাপাশি ভুয়া বেনিফিশিয়ারি অ্যাকাউন্টগুলোও বন্ধ হবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সঠিক রোল প্লে করবে। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরাও কমিশনের এ উদ্যোগকে যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করছেন। তারা উদ্যোগটি দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন।

বিএসইসির এক গবেষণা দেখা গেছে, পুঁজিবাজারে লেনদেনে ৮৫ শতাংশ অবদান রাখছেন সাধারণ বিনিয়োগকারী। আর বাকি ১৫ শতাংশ অবদান প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের। অথচ গত দুই বছরের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু তারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছেন না। বরং তারা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সনদ দিয়ে বুক বিল্ডিং পদ্ধতির আইপিওর বিডিংয়ে কারসাজি করছে। ফিক্স প্রাইস পদ্ধতিতে অংশগ্রহণের পর তালিকাভুক্তির প্রথম দিকে বেশি কিংবা কম দামে শেয়ার কেনার ভুয়া অর্ডার নিয়ে কারসাজি করছে। এ অবস্থা থেকে উত্তোলনের লক্ষ্যে আইপিওর আইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে।

বিএসইসির তথ্য মতে, ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং(আইপিও) নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে কমিশন। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আইপিওতে কোটার শেয়ারের অংশ ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ৭০ শতাংশ করা হয়েছে। বর্তমানে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ারে অংশ রয়েছে ৬০ শতাংশ। তবে এ ৭০ শতাংশের মধ্যে ৫ শতাংশ কোটা রয়েছে প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের জন্য। অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কোটার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। আর ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের জন্য।

গত ১ ফেব্রুয়ারি বিডিংয়ে অংশগ্রহণের আগে যোগ্য অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীকে কমপক্ষে ২ সদস্যের দর প্রস্তাবকারী কমিটি গঠন করা এবং কমিটিকে কোম্পানির নিট অ্যাসেট ভ্যালু পদ্ধতি, ইল্ড পদ্ধতি ও ফেয়ার ভ্যালু পদ্ধতি অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। ওই কমিটিই শেয়ার মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণ শেষে বিডিংয়ের জন্য শেয়ারের পরিমাণ ও মূল্য নির্ধারণ করবে।

প্রস্তাবিত দরের মূল্যায়ন প্রতিবেদন নিলাম শেষ হওয়ার পর কমিটি দুই কার্যদিবসের মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জে জমা দিবে। এরপরে স্টক এক্সচেঞ্জ নিলামের তথ্য ৭ কার্যদিবসের মধ্যে বিএসইসিকে জমা দেবে। যোগ্য বিনিয়োগকারীদের দর মূল্যায়নে কোনো ধরনের অসামঞ্জস্য পেলে তা কমিশনকে জানানোর কথা নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়।

জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ কমিশনের এমন সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক বলে মনে করেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন সময় এসেছে পুঁজিবাজারে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করার। কোটা ব্যবস্থা না থাকলে আইপিওতে কারসাজি এমনিতে বন্ধ হয়ে যাবে।

ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিশ্ব-পুঁজিবাজার চলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে। আমাদের দুর্ভাগ্য হলো পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শুধু সুবিধা নেয়, তাদের অবদান নেই বললেই চলে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোই পুঁজিবাজারে বেশির ভাগ কারসাজির সঙ্গে জড়িত।

তিনি বলেন, কমিশন আইপিও আইনে যে সংস্কার আনছে, তা কারসাজি রোধে বড় ভূমিকা রাখবে। উদ্যোগটি আরও আগে নেওয়া দরকার ছিল বলেও তিনি জানান।

কমিশনের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আইপিওর শেয়ারকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারে অস্বাভাবিক উত্থান-পতন হয়। এখন তা বন্ধ হবে। পাশাপাশি সব প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে। কারণ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে শেয়ার চলে যাবে। তাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই বেশি লাভবান হবেন।

বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ এবং একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার গঠনের লক্ষ্যে আইপিওর নিয়মগুলোকে যুগ-উপযোগী করেছি। আশা করছি, তাতে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে। দ্রুত নিয়ম কার্যকর হলে আইপিওতে কারসাজি কমে আসবে। পাশাপাশি তারল্য প্রবাহ বাড়বে।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শরীফ আনোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আইপিওর বুক বিল্ডিং পদ্ধতির বিডিংয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ৩০-৪০জন মিলে কাট অব প্রাইসে কারসাজি করে। তাদের যোগসাজশের কারণে ৩০ টাকার শেয়ার বিক্রি হয় ৭০-৮০ টাকায়। ১০০ টাকার কোম্পানির শেয়ার বিক্রি হয় ২০০-৩০০ টাকায়। নতুন আইনের মাধ্যমে দ্রুত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের এ চক্রকে রুখতে হবে।

এমআই/এমএইচএস