ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন নিয়ে বিপরীতমুখী অবস্থানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও ব্যবসায়ীরা। 

একদিকে এনবিআর বলছে, ইএফডি ব্যবসায়ীরা নিতে চাচ্ছেন না। মাত্র ৫০০ মেশিন বিক্রি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০-৪০টির মতো মেশিনের টাকা পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে দোকান মালিক সমিতি বলছে, খুচরা পর্যায়ে ব্যবসায়ীদের কাছে বিনামূল্যে ইএফডি মেশিন পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। এখন টাকা দিয়েও প্রয়োজন অনুযায়ী মেশিন দিতে পারছে না এনবিআর। 

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রাজস্ব বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিনের বক্তব্যে বিপরীতমুখী অবস্থান উঠে এসেছে। 

প্রাক-বাজেট আলোচনায় বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের কাছে বিনামূল্যে ইএফডি মেশিন পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেছিল এনবিআর। পরে তা হয়নি। এনবিআরের অনুরোধে পরে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা মেশিনটা কিনে নেব। কিন্তু দুঃখের বিষয়, যে পরিমাণ মেশিন আমাদের প্রয়োজন, এনবিআর তা দিতে পারছে না। মিনিমাম পাঁচ লাখ মেশিন আমাদের প্রয়োজন। এসব দেওয়া হলে খুচরা পর্যায়ে আমরা ভ্যাট আদায় শুরু করতে পারবে। ১০- ১২ হাজার মেশিনে আমাদের কিছুই হচ্ছে না। এখানে এক ধরনের বৈপরীত্য সৃষ্টি হচ্ছে। আবার যার দোকানে মেশিন আছে, সেখানে ভ্যাট নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু  সে দোকানে কাস্টমার যাচ্ছে না। আমরা খুবই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি।

জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, তারা  ইএফডি মেশিন কিনতে চান, দেওয়া হচ্ছে না -এমন অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। আপনারা তালিকা পাঠিয়ে দিন। আমি মেশিন পাঠিয়ে দেব।  আমি ইএফডি নিয়ে বসে আছি, ব্যবসায়ীরা নিতে চাচ্ছেন না। আপনি তালিকা দিন। আমি দোকানে দোকানে মেশিন পৌঁছে দেব। এ পর্যন্ত ৫০০ টা মেশিন বিক্রি করছি। মাত্র ৩০-৪০ টা মেশিনের পয়সা পাওয়া গেছে। এক লাখ মেশিনের অর্ডার আছে, এখন পর্যন্ত সাড়ে ৪ হাজার ইএফডি মেশিন বসানো হয়েছে। মেশিন আমরা দিচ্ছি না- এসব না বলে তালিকা পাঠিয়ে দিন।

ভ্যাট আদায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট ইএফডির উদ্বোধন করে রাজস্ব বোর্ড। তিন হাজার ৩৯৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে ইএফডি বসিয়েছে এনবিআর। ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের প্রথমে বিনামূল্যে যন্ত্রটি দেওয়া হলেও গত বছরের অক্টোবর থেকে তা কিনতে হচ্ছে। আর ক্রেতার জন্য প্রতিমাসেই ইএফডি চালানের ওপর লটারির ব্যবস্থা করছে এনবিআর। এতকিছুর পরও ইএফডি জনপ্রিয় হচ্ছে না।
আলোচনায় হোটেল, রেস্টুরেন্ট, গেস্ট হাউস ও সেবা, কাগজ, মুদ্রণ প্রকাশনা ও চলচ্চিত্র, বিজ্ঞাপন, ক্লিনিক ও ডায়াগোনাস্টিক সেন্টার খাতের উদ্যোক্তারা আগামী বাজেটে তাদের বিভিন্ন দাবির কথা তুলে ধরেন।

কুরিয়ার সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি হাফিজুর রহমান পুলক এ খাতে মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন। পাশাপাশি মেটাল ডিটেক্টর আমদানিতে কর কমানোর প্রস্তাব দেন। 

এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কুরিয়ার সার্ভিসে কয়টা মেটাল ডিটেক্টর লাগে, এগুলোর দাম কত?  সব ক্ষেত্রেই ট্যাক্স না দেওয়ার একটা মানসিকতা তৈরি হয়েছে। এর পরিবর্তন করতে হবে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে আমরা আর না আসি।

ট্যুরিজম ডেভেলপারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও ট্যুরিজম রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ দেশি-বিদেশি মদের ওপর শুল্ক কমানো, ট্যুরিস্ট বাসের ওপর ডিউটি কমানোর সুপারিশ করেন।

জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, পর্যটন বিকাশমান শিল্প— এ কথা ছোটবেলা থেকে শুনছি। যখন ২০১২ সালে ট্যুরিজম মিনিস্ট্রিতে ছিলাম তখনও শুনেছি। এখন ২০২২ সাল। এখনও শুনছি। কত আর বিকাশমান শুনব, বিকশিত শিল্প শোনার অপেক্ষায় আছি। বিকশিত করতে হলে নিজেদের কিছু চ্যালেঞ্জ নিতে হবে, ইনোভেটিভ আইডিয়া থাকতে হবে।

তিনি বলেন, ট্যুরিজমের বিকাশ আমরাও চাই। কিন্তু ট্যুরিজম বাসে ও ডিউটি কমাতে আপত্তি নেই। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে ট্যাক্সে ছাড়ের সুবিধাটার অপব্যবহার হয়। ট্যুরিস্ট বাস এনে কমার্শিয়াললি ব্যবহার হয়।

তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য সেবার জন্য আমরা অ্যাম্বুলেন্সকে ডিউটি ফ্রি করেছি। সে সুযোগে আমরা দেখি যেকোনো মাইক্রোবাস ইমপোর্ট হয় না। অথচ মাইক্রোবাস হরদম চলছে। সব আসে অ্যাম্বুলেন্স হয়ে তারপরে কমার্শিয়াল হয়ে যায়। এসব বিষয় আলাপ আলোচনা করে আমরা দেখব কী করা যায়।

ড্রেস মেকার্স অ্যাসোসিয়েশন, রেস্তোরা মালিক সমিতি, বাংলাদেশ সিকিউরিটি সার্ভিসেস কোম্পানিজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন আলোচনায় আয়কর রিটার্ন সহজ করা, বিভিন্ন খাতে ট্যাক্স ও ভ্যাট কমানোর প্রস্তাব দেয়। 

আলোচনায় অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন এনবিআরের কাস্টমস সদস্য (শুল্ক নীতি) মাসুদ সাদিক, সদস্য (ভ্যাট নীতি) জাকিয়া সুলতানা ও সদস্য (আয়কর নীতি) সামস উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

আরএম/আরএইচ