বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩০ তলা ভবনের বেজমেন্টের পার্কিংয়ের নিয়ন্ত্রণ বহিরাগতদের হাতে। দিন নয়, মাস নয়, প্রায় ১০ বছর ধরে পার্কিং দখল করে রেখেছেন প্রভাবশালী একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

তালা ঝুলিয়ে রেখে প্রতিষ্ঠানটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই ভবনের পার্কিং নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। বর্তমানে অকেজো পড়ে আছে জায়গাটি। নিজস্ব পার্কিং থাকা সত্ত্বেও গাড়ি রাখার জায়গা না পেয়ে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ৩০ তলা ভবনে ওঠার সিঁড়ির বাঁ দিকে বেজমেন্টের গেট। বন্ধ গেটে শিকল দিয়ে একটি তালা দেওয়া। গেট থেকে ভেতরে যতটুকু অংশ দেখা যায়, ততটুকুতে ময়লা-আবর্জনা পড়ে আছে।

তালা দেওয়া গেটের পাশে বসেন একজন নিরাপত্তাকর্মী। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরেই এ গেট বন্ধ। ভেতরে কেউ প্রবেশ করেন না। কেন বন্ধ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জানি না। তবে কী যেন সমস্যা আছে। ঠিকাদার বন্ধ করে রেখেছেন।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩০ তলা ভবনের বেজমেন্টের পার্কিংয়ে ৬০টিরও বেশি প্রাইভেট কার রাখার জায়গা আছে। কিন্তু এত বড় একটি পার্কিং অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে।

তারা জানান, ২০১২ সাল থেকে প্রায় ১০ বছর একজন প্রভাবশালী ঠিকাদার রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানের জায়গায় তালা দিয়ে রেখেছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। নীরব ভূমিকায় রয়েছে। কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একাধিকবার জানানোর পরও তালা খোলার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। লিখিতভাবে আবেদন করেও সমাধান হয়নি। 

ভুক্তভোগী কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগে (কমন সার্ভিস ডিপার্টমেন্ট) চার বছর আগে একটি আবেদন করা হয়। আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক একটি কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত ‘কেপিআই নিরাপত্তা নীতিমালা-২০১৩’ এর আলোকে ব্যাংকের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে নিয়মিতভাবে গার্ড চেকিং, স্পেশাল চেকিং, অগ্নি নির্বাপণ মহড়া, অ্যালার্ম প্যারেড ইত্যাদি অনুশীলন করা হয়ে থাকে।

আবেদনে আরও বলা হয়, অনেক সময় গাড়ি পার্কিং এলাকায় প্রবেশে কলাপসিবল গেট খোলার আবশ্যকতা দেখা দেয়। কিন্তু কলাপসিবল গেট খোলার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, ব্যাংকের সিবিএসপি সেল (বর্তমানে এফএসএসপিডি) কর্তৃক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেক্স বাই ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে কিউবিক্যালস নির্মাণের পর অব্যবহৃত মালামাল গাড়ি পার্কিংয়ের স্থানে সংরক্ষণ করে কলাপসিবল গেট তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। চাবিও তাদের কাছে রেখে দিয়েছে। ফলে জরুরি প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে কলাপসিবল গেটটি খোলা সম্ভব হয় না।

কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো স্থাপনার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্ডারগ্রাউন্ডের (বেজমেন্ট) গাড়ি পার্কিং এলাকার চাবি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নিয়ে ব্যাংকের নিজস্ব ডিউটি অফিসারের কাছে সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক। এছাড়া, ব্যাংক চত্বরে গাড়ি পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনার লক্ষ্যে আন্ডারগ্রাউন্ডের গাড়ি পার্কিং স্থানটি উন্মুক্ত করা জরুরি।

লিখিত আবেদনের চার বছর পার হওয়ার পরও তালা খুলতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কমন সার্ভিস ডিপার্টমেন্টের (১) মহাব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভবনের বেজমেন্টে তালা দেওয়া আছে। তবে কিছু জানতে হলে মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, একটু সমস্যা আছে। বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। তবে এখন কিছু বলতে চাচ্ছি না।

এদিকে ক্ষোভ প্রকাশ করে এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাধ্য হয়ে গাড়ি বাংলাদেশ ব্যাংক কলোনিতে রেখে আসলাম। রোদ-বৃষ্টির মধ্যে সেখান থেকে হেঁটে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আসতে হয়। ভবনের নিজস্ব পার্কিং থাকা সত্ত্বেও গাড়ি রাখতে না পারা খুবই দুঃখজনক।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বলার পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট বিভাগে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তারপরও কোনো কাজ হচ্ছে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে কি তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জিম্মি? ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও কেন এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না?

এসআই/আরএইচ