আমদানির চাপে বহির্বিশ্বের সঙ্গে রেকর্ড পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ছাড়িয়েছে তিন হাজার ৮১ কোটি ডলার। একই সময়ে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবেও ঘাটতি ১৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।

সোমবার (৪ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) যে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে এ তথ্য উঠে এসেছে।

আরও পড়ুন>> ১০ মাসে আড়াই লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য ঘাটতি

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অস্বাভাবিক হারে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বড় বাণিজ্য ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। তবে দেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক রাখতে আমদানি নিয়ন্ত্রণে এনে, রপ্তানি রেমিট্যান্স বাড়াতে হবে। তা না হলে সংকটে পড়বে অর্থনীতি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত পণ্য বাণিজ্যে বাংলাদেশের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৮১ কোটি ৬০ লাখ ডলার। বর্তমান বিনিময় হার হিসেবে (প্রতি ডলার ৯৩.৪৫ টাকা) দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ দুই লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকার বেশি।

তার আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭০ কোটি ডলার। আর গেল অর্থবছরের পুরো সময়ে এই ঘাটতি ছিল ২ হাজার ২৮০ কোটি ডলার।

পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত সময়ে রপ্তানি বেড়েছে ৩২ দশমকি ৯৮ শতাংশ। অন্যদিকে আমদানি বেড়েছে ৩৯ দশমকি ০৩ শতাংশ। আলোচিত ১১ মাসে রপ্তানি থেকে দেশ আয় করেছে চার হাজার ৪৫৮ কোটি ডলার। এসময় পণ্য আমদানির পেছনে ব্যয় করেছে ৭ হাজার ৫৪০ কোটি ডলার। আমদানি ব্যয় থেকে রপ্তানি আয় বাদ দিলে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮১ কোটি ডলার।

আলোচিত সময়ে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতিও বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে সেবা খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৮৮২ কোটি ডলার। অন্যদিকে সেবা খাতে দেশের ব্যয় হয়েছে ১২৩৪ কোটি ডলার। সেবা খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৫২ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ২৫৩ কোটি ডলার।

চলতি হিসাবে ভারসাম্যে (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স) ঘাটতি

চলতি হিসাবে ভারসাম্যে (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স) বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। গেল অর্থবছরের ১১ মাসে এই ঘাটতির (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭২৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঘাটতি ছিল ২৭৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

সামগ্রিক লেনেদেনে ঘাটতি ৪.৩০ বিলিয়ন ডলার

সামগ্রিক লেনদেনে (ওভারঅল ব্যালান্স) ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩০ কোটি ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে এই সূচকে ৮৫২ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে মে পর্যন্ত দেশে ১ হাজার ৯৭৯ কোটি ৫০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ কম। গত অর্থবছরে একই সময় এসেছিল দুই হাজার ২৮৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

এফডিআই বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ

দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়ছে। ২০২০-২১ অর্থবছররে জুলাই-মে সময়ে ৩১৩ কোটি ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ। গেল অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে ৪২৭ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকে সেটিই নিট এফডিআই। আলোচিত সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগও আগের বছরের চেয়ে ৫৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেড়ে ২০৫ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত বছর একই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১২৮ কোটি কোটি ডলার।

এসআই/জেডএস