করোনায় ক্ষতি মোকাবিলায় কৃষি খাতের জন্য ৩ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনামূলক পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই প্যাকেজ থেকে এক লাখ ৮৯ হাজার কৃষককে দুই হাজার ৮৩০ কোটি ৬১ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।  

২০২১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর কৃষি খাতের জন্য নতুন এ পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ তহবিলের আওতায় ব্যাংক থেকে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে পারছেন কৃষক। এই প্যাকেজ থেকে ১ শতাংশ সুদে তহবিলের অর্থ পাচ্ছে ব্যাংকগুলো। ছয় মাসের গ্রেস পিরিয়ডসহ এই ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে হবে ১৮ মাসের মধ্যে। তহবিলের মেয়াদকাল প্রথমে ছিল ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। পরে ঋণ বিতরণে এ মেয়াদ আরোও তিন মাস বাড়িয়ে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।
 
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত বিশেষ এ প্যাকেজ থেকে এক লাখ ৮৮ হাজার ৯৬৬ জন কৃষককে ঋণ দিয়েছে। অংকে যার পরিমাণ দুই হাজার ৮৩০ কোটি ৬১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। তবে ৩ হাজার কোটি টাকার এ তহবিলে এখনো ১৭০ কোটি টাকা অর্থ রয়েছে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কৃষক এ প্যাকেজ থেকে ঋণ পাবেন।

প্যাকেজের আওতায় সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। বিশেষায়িত ব্যাংকটি এক লাখ ১৪৩ জন গ্রাহককে ঋণ দিয়েছে এক হাজার ২৫০ কোটি টাকা। এর পরেই আছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি.; তারা ১২ হাজার ৯০১ জন গ্রাহককে দিয়েছে ৪০৩ কোটি টাকা। এছাড়া রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক দিয়েছে ৩১৪ কোটি টাকা, সোনালী ব্যাংক ১৭৪ কোটি টাকা এবং অগ্রণী ব্যাংক ঋণ দিয়েছে ৮৯ কোটি টাকা। 

কী কী শর্ত

এ স্কিমের আওতায় অংশগ্রহণকারী ব্যাংক নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কৃষক ও গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ নিশ্চিত করবে। কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালার আওতাভুক্ত খাতে বিতরণ করা ঋণের বর্তমান গ্রহীতাদের মধ্য থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও গ্রাহককে অংশগ্রহণকারী ব্যাংক নিজ ব্যাংক থেকে প্রদত্ত বিদ্যমান ঋণ সুবিধার অতিরিক্ত ২০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ (সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা) এ স্কিমের আওতায় বিতরণ করতে পারবে। ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও বর্গাচাষিদের অনুকূলে শস্য ও ফসল চাষের জন্য এককভাবে জামানতবিহীন (শুধুমাত্র ফসল দায়বন্ধনের বিপরীতে) সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করা যাবে।
 
কারা ঋণ পাবেন

গৃহস্থালি পর্যায়ে গাভী পালন, গরু মোটাতাজাকরণ খাতে ব্যক্তিগত গ্যারান্টির বিপরীতে ঋণদানে অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়। শস্য ও ফসল ঋণ ব্যতীত অন্যান্য খাতের ঋণে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ন্যূনতম জামানত ও সহায়ক জামানত নিতে পারবে। এ স্কিমের ঋণ কোনোভাবেই গ্রাহকের পুরোনো ঋণ সমন্বয়ের জন্য ব্যবহার করা যাবে না। ঋণ খেলাপিরা এ স্কিমের আওতায় ঋণ পাবে না।

সুদহার

এ স্কিমের আওতায় ব্যাংকগুলো ১ শতাংশ সুদে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ নিতে পারবে। কৃষক পর্যায়ে সুদ বা মুনাফা হার হবে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ (সরল হারে)। এ সুদহার নতুন ও পুরাতন সব গ্রাহকের জন্য প্রযোজ্য হবে।

ঋণের খাত

কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত শস্য ও ফসল খাতের আওতাভুক্ত দানা শস্য, অর্থকরী ফসল, শাক সবজি, কন্দাল ফসল (আমদানি বিকল্প ফসলসমূহ যথা- ডাল, তৈলবীজ, মসলা জাতীয় ফসল ও ভুট্টা চাষে গ্রাহক পর্যায়ে ৪ শতাংশ সুদ হারে ঋণ বিতরণের পৃথক স্কিম চালু থাকায় এ খাত ব্যতীত), ফল ও ফুল চাষ, মৎস্য চাষ, পোল্ট্রি ও প্রাণিসম্পদ খাত, কৃষি ও সেচ যন্ত্রপাতি, বীজ উৎপাদন খাতগুলোতে ঋণ বিতরণ করা যাবে। ব্যাংকের বরাদ্দ করা তহবিলের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শস্য ও ফসল খাতে বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে।

অংশগ্রহণকারী ব্যাংক পুনঃঅর্থায়ন গ্রহণের তারিখ থেকে অনধিক ১৮ মাসের (১২ মাস + গ্রেস পিরিয়ড ৬ মাস) মধ্যে আসল এবং সুদ/মুনাফা (বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত ১ শতাংশ সুদ/মুনাফা হারে) পরিশোধ করবে।

কৃষক পর্যায়ে শস্য ও ফসল খাতে বিতরণ করা ঋণের সর্বোচ্চ মেয়াদ হবে ১২ মাস। এছাড়া অন্যান্য খাতে বিতরণ করা ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মেয়াদ হবে ন্যূনতম ৩ মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ ১৮ মাস।

এসআই/জেডএস