বিশেষ কর ব্যবস্থায় অপ্রদর্শিত ৯ কোটি ৯ লাখ টাকা বৈধ করেছিলেন মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক ও ভাইস চেয়ারম্যান এ এস এম ফিরোজ আলম। সন্দেহজনক ওই টাকাসহ আরও বেশ কিছু অভিযোগের কারণ জানতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যদিও অপ্রদর্শিত ওই টাকাকে জমি বিক্রির টাকা হিসেবে ঢাকা পোস্টের কাছে দাবি করেছেন ফিরোজ আলম।

মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল হক সই করা তলবি নোটিশে তাকে আগামী ১ নভেম্বর হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

চিঠিতে একই সঙ্গে বেশকিছু রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়েছে। রেকর্ডপত্রের মধ্যে রয়েছে- ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের ১৯এএএএএ এর মাধ্যমে ৯ কোটি ৯ লাখ ২৪ হাজার ২৬৪ টাকা কত তারিখ কর পরিশোধ করা হয়েছে তার বিবরণ। ওই টাকা অস্থাবর অংশে যোগ করা হয়েছিল কিনা।

কোন ব্যাংক হিসাব হতে বর্ণনাকৃত টাকার শেয়ার ক্রয়ের জন্য অন্যের নামে অর্থ পাঠিয়েছে। যাদের নামে শেয়ার ক্রয়ের জন্য তার হিসাব হতে অর্থ পাঠানো হয়েছে তাদের ব্যাংক হিসাব নম্বরসহ পূর্ণাঙ্গ নাম, ঠিকানা।

যাদের নামে শেয়ার ক্রয় করা হয়েছে তাদের আয়কর রিটার্নে ওই শেয়ার দেখানো হয়েছে কিনা এবং কিভাবে তারা পুনরায় ওই অর্থ তার কাছে ফেরত এসেছে তার বিবরণও চাওয়া হয়েছে চিঠিতে।

দুদকের চিঠিতে চাহিদাকৃত রেকর্ডপত্রের মধ্যে আরও রয়েছে, ফিরোজ আলম জাপান হতে ১৯ কোটি ৫২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৭ টাকা কোন ব্যাংক এর মাধ্যমে কোন কোন তারিখে রেমিট্যান্স হিসেবে এনেছেন। তার প্রমাণসহ নথিপত্র। এছাড়া কোনো ঋণ আছে কিনা তার বিবরণও চেয়েছে দুদক।

মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডের ফিরোজ আলমের কাছে সার্বিক বিষয় জানতে চাইলে ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুদক যে ৯ কোটি টাকার কথা বলছে ওই টাকা গাজীপুরের জমি বিক্রির টাকা। জমি বিক্রি করে আমি ২০ কোটি টাকা পেয়েছিলাম। কিন্তু দলিল হয়েছিল ১১ কোটি টাকা। বাকি টাকা আমি জরিমানা দিয়ে আয়কর রিটার্নে দেখিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা যা কিছু আছে তা ঘোষণা করা রয়েছে। আমি দীর্ঘদিন জাপান ছিলাম, সেখানে থেকে আমি ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা দেশে এনেছিলাম। যা আমি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করি। বিনিয়োগ করে লোকসান হয়েছে। তারপরও কেন এত প্রশ্ন? জাপান থেকে দেশে এসে ভুল করেছি।

দুদক সূত্রে আরও জানা যায়, দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ফিরোজ আলম ১৯৯৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৭৫ কোটি ৭ লাখ ৮ হাজার ৩২২ টাকা আয় দেখিয়েছেন।  দুদকের অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ১২ কোটি ৩২ লাখ ৯৩ হাজার ৫৮০ টাকার প্রমাণ পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর বিভিন্ন অভিযোগের সূত্র ধরে অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সংস্থাটির উপ-পরিচালক আশরাফুন নাহারের নেতৃত্বে একটি টিমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

ওই অভিযোগে বলা হয়, প্রিমিয়ার লিজিংয়ের প্রায় সব শীর্ষ গ্রাহকই নাম লিখিয়েছে খেলাপির খাতায়। এর মধ্যে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক এক পরিচালক এসএ অয়েল লিমিটেডের কাছে প্রিমিয়ার লিজিংয়ের পাওনা রয়েছে ৪৯ কোটি টাকা। দীর্ঘদিন ধরেই খেলাপি হয়ে রয়েছে ঋণটি। প্রিমিয়ার লিজিং থেকে ঋণ নিয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইব্রাহিম রেহেনা ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের ৫১ কোটি, কেয়ার স্পেশালাইডজ হাসপাতালের ৫০ কোটি, বিশ্বাস টেক্সটাইলের ৪৭ কোটি, অ্যাডভান্স রেডিমিক্স কংক্রিট ইন্ডাস্ট্রির ৪১ কোটি, ওয়েস্টার্ন মেরিনের ৩০ কোটি, এসএমসি গ্রুপের ১৭ কোটি, ফারইস্ট স্টক অ্যান্ড বন্ডের ২৭ কোটি, সাইফ পাওয়ার টেক লিমিটেডের ৩৯ কোটি, রহিম আফরোজের ৩৫ কোটি, নাভানা গ্রুপের ২৪ কোটি, কেবি ফুড লিমিটেডের ২২ কোটি এবং মোস্তফা গ্রুপের ১৯ কোটি টাকা নাম লিখিয়েছে খেলাপির খাতায়। যেখানে অবৈধ সম্পদের অভিযোগও ছিল বলে জানা যায়।

আরএম/এমএ