অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা, কেলেঙ্কারি ও পরিচালকদের চাপে পড়ে দেওয়া ঋণ আর ফেরত না আসায় তারল্য, প্রভিশন এবং মূলধন সংকটসহ নানা সমস্যায় আছে ব্যাংকগুলো। এমন পরিস্থিতিতে গ্রাহকের আমানত সুরক্ষা ও প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি রোধে চলছে ‘নিবিড় পর্যবেক্ষণ’। কার্যক্রম তদার‌কি করতে সরকারি-বেসরকারি এক-চতুর্থাংশ ব্যাংকে পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক বসিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতেও অবশ্য রক্ষা নেই। দিনের পর দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে ব্যাংকগুলো।

কার্যকর পদক্ষেপ ও অনিয়মের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান শাস্তি না দেওয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে– বলছেন খাত সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদরা।

বড় ধরনের অনিয়মের আশঙ্কায় দেশে ১৯৯৪ সালে প্রথম ওরিয়েন্টাল ব্যাংকে (বর্তমানে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক) পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর নানা অনিয়মে, সমস্যা বা সংকটে পড়া ১৫ ব্যাংককে পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এর মধ্যে ৮ ব্যাংকে পর্যবেক্ষক বসানো হয়েছে। ব্যাংকগুলো হলো— রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও  আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এছাড়া বেনামি ঋণ ও নিয়োগ পদোন্নতিতে অনিয়ম, তারল্য সংকটে পড়া ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সবশেষ পর্যবেক্ষক বসায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আরও পড়ুন : পদত্যাগ করেছেন পদ্মা ব্যাংকের এমডি

সাত ব্যাংকে দেওয়া আছে সমন্বয়ক। এগুলো হলো– বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক), এবি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক।

পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক নিয়োগ বা তাদের কর্মপদ্ধতি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো প্রজ্ঞাপন নেই। এছাড়া তাদের ক্ষমতা কী– এ বিষয়েও সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। একজন পর্যবেক্ষক ব্যাংকের পর্ষদ সভায় উপস্থিত থেকে সব কিছু পর্যবেক্ষণ করেন এবং তাদের কার্যক্রম ও বিভিন্ন তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে জানান

কেন পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক বসানো হয়?

বিধিবদ্ধ নগদ জমা সংরক্ষণে (সিআরআর) ব্যর্থতা, তারল্য সংকট, একক গ্রাহকের ঋণসীমার নির্দেশনা অমান্য করে নামসর্বস্ব কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেওয়াসহ অতি মাত্রায় খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া, নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি ও মূলধন সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোতে শৃঙ্খলা ফেরানো ও আর্থিক অবস্থা দেখভালে পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক বসানো হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক ও নির্বাহী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তারা এ দায়িত্ব পালন করেন। দেশে বর্তমানে ব্যাংক রয়েছে ৬১টি। তার মধ্যে এক-চতুর্থাংশ ব্যাংক এখন পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক দিয়ে চলছে।

তাদের কাজ কী?

পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক নিয়োগ বা তাদের কর্মপদ্ধতি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো প্রজ্ঞাপন নেই। এছাড়া তাদের ক্ষমতা কী– এ বিষয়েও সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। একজন পর্যবেক্ষক ব্যাংকের পর্ষদ সভায় উপস্থিত থেকে সব কিছু পর্যবেক্ষণ করেন এবং তাদের কার্যক্রম ও বিভিন্ন তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে জানান। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনে ওই তথ্য ও পরামর্শের আলোকে সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সমন্বয়ক পর্ষদ সভায় সশরীরে উপস্থিত থাকেন না। তারা সাধ্য অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করেন।

আরও পড়ুন : অবসরের পর ব্যাংক কর্মকর্তাদের পরিচালক হওয়ার সুযোগ

সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকে কখনো কখনো খেলাপি ঋণ অনেক বেশি হয়ে যায়। এগুলো ব্যাংক রিকভার করতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে মামলা হয়ে থাকে। এসব পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো এমইউ অনুযায়ী কাজ করছে কি না, সেসব দেখভাল করতেই পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। যেন ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মনীতি মানা হয়। কিন্তু অনেক সময় এ ঋণগুলো বিতরণ করার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম ওভারলোড করে ফেলে। এক্ষেত্রে যারা পর্যবেক্ষক থাকেন, তারা ব্যাংকের অবস্থা সম্পর্কে জানেন। তখন তারা ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করেন। পর্যবেক্ষকরা বিভিন্নভাবে চিন্তাভাবনা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে বোর্ডের কাছে ঋণ না দেওয়ার ব্যাপারে সুপারিশ করেন।

তবে পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক বসানো ব্যাংকগুলোর অবনতি ছাড়া কোনো উন্নয়ন হয়নি। সমন্বয়করা ব্যাংকের পর্ষদে সরাসরি যোগ দিতে পারেন না। তবে ব্যাংকের সব নথিপত্র দেখতে ও তদারকি করতে পারেন।  কেন্দ্রীয় ব্যাংক সমন্বয়ককে প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা ভাতা দেয়, যারা সবাই বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তা। একজন সমন্বয়কের জন্য দুজন সহকারী নির্ধারিত আছে। তাদের প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হয়।

পর্যবেক্ষকরা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, নির্বাহী কমিটি ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় অংশ নেন। তারা সবাই পরিচালক ও নির্বাহী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তা। একজন পর্যবেক্ষককে প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা ভাতা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতি পর্যবেক্ষকের জন্য দুজন সহকারী রয়েছেন। তারাও পান প্রতি মাসে ৮ হাজার টাকা।

দুর্বল ব্যাংকগুলোর তালিকায় রয়েছে– রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংক। এছাড়া বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড (এনবিএল), পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক), আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক রয়েছে।

কী বলছেন পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়করা

নিয়োগ পাওয়া একাধিক পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক ঢাকা পোস্টকে জানান, ব্যাংকের ঋণ অনুমোদন, খেলাপি, পুনঃতফসিল, পুনর্গঠন, ঋণ অবলোপন, নিয়োগ, আয়ব্যয় ও শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে তাদের নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করা ছাড়া কোনো কাজ নেই। এ ছাড়া কোনো ধরনের অনিয়মের বিষয়েও তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না বা দেওয়ার ক্ষমতাও নেই। তাদের সুপারিশে দু’একটি পদক্ষেপ নিলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তেমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অনেক অনিয়ম দেখেও এড়িয়ে যাচ্ছে। প্রভাবশালীদের চাপে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। যার কারণে ব্যাংকগুলোর তেমন কোনো উন্নতি হচ্ছে না। উল্টো আর্থিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে।

পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্যাংকটি চলছে কোনো নিয়ম-নীতি ছাড়াই। ভুয়া কাগজপত্রে বড় অংকের ঋণ অনুমোদন করেছে। প্রতিষ্ঠান নেই অথচ এলসি খুলছে। ভুয়া হিসাবে লেনদেনে করছে, ঋণ দিচ্ছে। ব্যাংকের পর্ষদের লোকজন এসব ঘটনা সবই জানে। কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমি তো সরাসরি কোনো সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ নিতে পারি না। সেই ক্ষমতাও দেওয়া হয়নি। তাই দায়িত্ব অনুযায়ী বিষয়টি লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানিয়েছি কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। কারণ ঋণ যারা নিয়েছে তারা প্রভাবশালী গ্রুপ।      

এদিকে, গত বছরের ১২ জুলাই আবদুর রউফ তালুকদার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে যোগ দিয়েই দুর্বল ব্যাংককে পৃথকভাবে তদারকির উদ্যোগ নেন। গভর্নর জানান, ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ১০টি দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত করেছেন। খেলাপি ঋণের মাত্রা, তারল্য ব্যবস্থাপনা, মূলধনের পর্যাপ্ততা, ঋণ-আমানত অনুপাত ও প্রভিশনিং বা নিরাপত্তা সঞ্চিতির পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে এ ব্যাংকগুলোকে চিহ্নিত করা হয়।

ব্যাংকগুলোর নাম এখন পর্যন্ত প্রকাশ না করলেও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুর্বল ব্যাংকগুলোর তালিকায় রয়েছে– রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংক। এছাড়া বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড (এনবিএল), পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক), আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক রয়েছে।

আরও পড়ুন : এবার সাউথ বাংলা ব্যাংকের এমডির পদত্যাগ

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুর্বল বা সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোতে পর্যবেক্ষক বা সমন্বয়ক বসালেই হবে না, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটা ভূমিকা থাকতে হবে। পর্যবেক্ষক বসালেন অথচ তাদের কোনো ক্ষমতা নেই, তারা কোনো সুপারিশ করলে সেটা বাস্তবায়ন হবে না, তাহলে তাদের বসিয়ে লাভ কী? যদি স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ না পায়, তাহলে ব্যাংকগুলোর কোনো উন্নতি হবে না।

তিনি বলেন, দুর্বল ও সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর উন্নয়নে ভালো ও দক্ষ লোক বসাতে হবে। শুধু বোর্ড মিটিংয়ে বসে থাকবে এমন নয়, তারা যেন গঠনমূলক সুপারিশ করতে পারেন। মাঝে মধ্যে গিয়ে ব্যাংকের অবস্থাও পর্যবেক্ষণ করতে হবে। একইসঙ্গে তারা যেসব সুপারিশ বা পরামর্শ দেবেন, সেগুলোতে গুরুত্ব দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পদক্ষেপ নিতে হবে। আর যদি পদক্ষেপ নিতে না পারে, তাহলে শুধু চা-নাস্তা খাওয়ার জন্য পর্যবেক্ষক বসানোর কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না– বলেন সাবেক এ গভর্নর।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে, বিভিন্ন সমস্যায় পড়েছে, বড় কোনো অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে– সেসব ব্যাংকে তদারকির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক বসায়। এখন ১৫টি ব্যাংকে পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক আছেন। তারা নিয়মিত ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা দেখছেন। পর্ষদের সিদ্ধান্তসহ বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করে পরামর্শ প্রতিবেদন দিচ্ছেন। সেই আলোকে ব্যাংকগুলোর সমস্যা সমাধান ও আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পদক্ষেপ নিচ্ছে।

আরও পড়ুন : শীর্ষ তিন ঋণগ্রহীতার কাছে জিম্মি ব্যাংক

পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক বসানোর পরও ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না– এমন অভিযোগ রয়েছে। তাহলে কী তারা সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না? জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক সরাসরি ব্যাংকগুলোর ওপর হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। একজন পর্যবেক্ষক ব্যাংকের বোর্ড সভায় থাকেন, তারা কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তা পর্যালোচনা করেন, তাদের আর্থিক অবস্থার সঙ্গে সিদ্ধান্তগুলো ঠিক আছে কি না, সময়োপযোগী কি না, অভ্যন্তরীণ নীতিমালা ও ঋণ নিয়মাচারের কোনো সমস্যা আছে কি না– এসব বিষয় দেখেন। কোনো অসংগতি দেখলে এবং তাদের আর্থিক অবস্থা উন্নতির জন্য কী করা প্রয়োজন সেই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে নিয়মিত পরামর্শ দেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরামর্শগুলো পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।

ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা উন্নতির বিষয় তিনি বলেন, ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা একদিনে খারাপ হয় না। বিভিন্ন ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ধীরে ধীরে খারাপ হয়। এমন পরিস্থিতি থেকে উন্নতি হতেও সময় লাগে। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো করতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে যাচ্ছে। আশা করছি, অবস্থার উন্নতি হবে। কারণ প্রতিষ্ঠান খারাপ হোক, এটা কেউ চাইবে না।

পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক বসানো ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা

ন্যাশনাল ব্যাংক
নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে অন্যতম বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক। বিভিন্ন অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় ব্যাংকটি নানা সংকটের মধ্যে পড়েছে। পর্ষদে পরিচালকদের স্বেচ্ছাচারিতায় নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে ঋণ দিয়ে যাচ্ছে, আদায় করতে পারছে না। রাতের আঁধারে তুলে নেওয়া হচ্ছে ব্যাংকের টাকা। লাগামহীন খেলাপি ঋণ বাড়ছে, মূলধন সংকটের পাশাপাশি প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে ব্যাংকটি। এতে ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থার চরম অবনতি ঘটেছে। এমন অবস্থা থেকে উত্তরণে ন্যাশনাল ব্যাংকে সমন্বয়ক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু তাতে কী পরিস্থিতি হয়েছে?

আরও পড়ুন : বেসরকারি খাতে ঋণ ২২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) সুদ খাতে ন্যাশনাল ব্যাংকের লোকসান দাঁড়িয়েছে ৫০৬ কোটি টাকা। সুদ খাতে বড় লোকসানের কারণে ব্যাংকটির সব সূচকেই প্রভাব পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে ন্যাশনাল ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ৭ হাজার ৭৭৩ কোটি, যা বিতরণ করা ঋণের ১৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ৭ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি এক হাজার ৫৯ কোটি টাকা।

ব্যাংকটির ঋণ আমানত অনুপাতের হার ৯৯ দশমিক ১২ শতাংশ, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার চেয়ে প্রায় ১২ শতাংশ বেশি। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে ব্যাংকটির আমানতকারীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক 

পদ্মা ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত করেছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক)। চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। তারল্য সংকট, নিয়ন্ত্রণহীন খেলাপি ঋণসহ মূলধন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থা নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, মার্চ শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ৫৯ শতাংশ। ব্যাংকটির ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) ৮৮ দশমিক ২০ শতাংশ। কিন্তু আইন অনুযায়ী, ব্যাংকের মোট আমানতের শতকরা ৮৭ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ করতে পারে না। এ ছাড়া চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি ৩৯৩ কোটি টাকা।

এবি ব্যাংক
সমন্বয়ক নিয়োগ দেওয়া এবি ব্যাংকের অবস্থাও খুব ভালো নয়। বেনামি ঋণ বিতরণ, পরিচালকদের স্বেচ্ছাচারিতায় নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে ঋণ দিয়ে আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে গেছে। মার্চ প্রান্তিক শেষে এবি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১২ দশমিক ৮৮ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যা ৪ হাজার ৭০ কোটি টাকা। ব্যাংকটি নির্ধারিত সীমার চেয়ে ৫ শতাংশের বেশি ঋণ বিতরণ করেছে। তাদের ঋণ-আমানতের অনুপাতের হার ৯২ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

আরও পড়ুন : ১১ ব্যাংকের বেপরোয়া ঋণ, ‘ঝুঁকি’তে গ্রাহকের আমানত

ওয়ান ব্যাংক
আর্থিক সূচকে গরমিল, মূলধন, ঋণ আমানত হার ও নিরাপত্তা সঞ্চিতির সূচকে অবনতিতে রয়েছে বেসরকারি খাতের ওয়ান ব্যাংক। ধস ঠেকাতে গত বছর দেওয়া হয়েছে সমন্বয়ক। তবে এখনো সংকট কাটেনি। ওয়ান ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ২ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১০ দশমিক ৩২ শতাংশ। অর্থাৎ উচ্চ খেলাপির ঝুঁকিতে রয়েছে ব্যাংকটি। কারণ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী খেলাপি ঋণের হার সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সহনীয় বলে ধরা হয়।

বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক
দীর্ঘদিন ধরেই আর্থিক অবস্থা খারাপের দিকে সরকারি-বেসরকারি মালিকানায় পরিচালিত বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক। বড় অঙ্কের ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ায় ব্যাংকটিকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৪৩ দশমিক ১০ শতাংশ। টাকার অঙ্কে ৯৮০ কোটি টাকা। ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ৩৬০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। মার্চ প্রান্তিকে মূলধন ঘাটতি দাঁড়ায় ১ হাজার ৩১ কোটি টাকা।

জনতা ব্যাংক
পর্যবেক্ষক বসানো ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। নান অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ দিয়ে খেলাপির শীর্ষে রয়েছে ব্যাংকটি। মোট আমানতের এক তৃতীয়াংশ অর্থ প্রভাবশালী তিন গ্রাহকের কাছে জিম্মি হয়ে আছে।

গত মার্চ শেষে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। জুনে তা বেড়ে হয়েছে ২৮ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। ফলে ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ৩০ দশমিক ৪৩ শতাংশ এখন খেলাপি হয়ে পড়েছে। সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে জনতার খেলাপি ঋণ শীর্ষে রয়েছে। ৫৯৮ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতিতে রয়েছে ব্যাংকটি। এছাড়া মার্চ প্রান্তিকে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল জব্বার বলেন, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। এজন্য যেসব খেলাপি গ্রাহক দীর্ঘ সময় ধরে ঋণ পরিশোধে সময়  কালক্ষেপণ করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া সারাদেশে বৃহৎ যেসব ঋণ খেলাপি আছে, তাদের বিরুদ্ধে জোরালো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।  

বিডিবিএল

অনিয়ম ও দুর্নীতি ঠেকাতে বিডিবিএলে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। ঋণ প্রদানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও নানা অব্যবস্থাপনা ব্যাংকটির ৪৪ শতাংশ ঋণই ইতোমধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে।

সব শেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকটি ২ হাজার ২০৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে ৯৭২ কোটি টাকাই খেলাপি ঋণ।

সোনালী ব্যাংক
হলমার্ক কেলেঙ্কারিসহ নানা অনিয়মে বিতরণ করা ঋণ ও ইচ্ছাকৃত খেলাপি চাপে বিপাকে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। বিতরণ করা ঋণের ১৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ খেলাপি ঋণ। টাকার অঙ্কে যা ১২ হাজার ৬ কোটি টাকা। এছাড়া মার্চ প্রান্তিক শেষে ২ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি রয়েছে ব্যাংকটির।

রূপালী ব্যাংক
নানা সমস্যা জর্জড়িত রূপালী ব্যাংকে ২০১৫ সালে পর্যবেক্ষক বসানো হয়। এখন পর্যন্ত তেমন উন্নতি হয়নি সরকারি এ ব্যাংকটির। রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৭ হাজার ৫৮৫ কোটি, যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। ব্যাংকটির ৩ হাজার ৮০ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে। মার্চ প্রান্তিকে মূলধন ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা।

অগ্রণী ব্যাংক
আর্থিক সূচকে উন্নতি না হওয়ায় প্রায় আট বছর আগে অগ্রণী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক বসানো হয়। সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূলধন সংকট অগ্রণী ব্যাংকে। চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিক শেষে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা।

এছাড়া মার্চ শেষে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ১৪ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ২১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। ব্যাংকটির ৪ হাজার ১১ কোটি টাকার প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে।

বেসিক ব্যাংক
নিয়ম ভেঙে ঋণ দিয়ে আদায় করতে পারছে না রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক। সংকট দূর করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের পক্ষ থেকে নানা সহযোগিতা করা হয়েছে। কিন্তু আর্থিক সূচকে উন্নতি করতে পারেনি সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর ডুবানো ব্যাংকটি। বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যা ৮ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ৪ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা। নানা অনিয়মে মূলধনও খেয়ে ফেলেছে ব্যাংকটি, মার্চ প্রান্তিকে ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক
রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) বিশেষায়িত হলেও অন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রমও পরিচালনা করে। বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। খেলাপি ঋণের সঙ্গে বড় মূলধন সংকটে পড়েছে ব্যাংকটি। এমন পরিস্থিতিতে আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে পর্যবেক্ষক বসিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিক শেষে ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের মধ্যে ৩ হাজার ২০৯ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে। যা মোট ঋণের ১১ দশমিক ২২ শতাংশ। ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে ব্যাংকটি। মার্চ প্রান্তিক শেষে বিশেষায়িত ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৯৮ কোটি টাকা।

আইসিবি ইসলামী ব্যাংক
দুর্বল চিহ্নিত করা ব্যাংকের তালিকায় আরেকটি অন্যতম আইসিবি ইসলামী ব্যাংক। দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে আছে ব্যাংকটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের মোট ঋণের ৮৬ দশমিক ৪৭ শতাংশই খেলাপি। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৬৯১ কোটি টাকা। মার্চ প্রান্তিকে মূলধন ঘাটতি ছিল এক হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক
ব্যাংকটি থেকে বেনামে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে ঋণ নিয়েছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। ‌বি‌ভিন্ন ঋণ অনিয়ম তদার‌কি কর‌তে বেসরকারি শরীয়াহ ভিত্তিক ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মার্চ শেষে ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ৯৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ব্যাংকটির ঋণ আমানত অনুপাতের হার ১০৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার চেয়ে সাড়ে ১৬ শতাংশ বেশি ঋণ দিয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে। এতে করে ঝুঁকিতে আছে ব্যাংকটির আমানতকারীরা।

ইসলামী ব্যাংক
ঋণ অনিয়মের আশঙ্কায় ২০১০ সালের ডিসেম্বরে প্রথম ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। পরিচালক (তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক) পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা ব্যাংকটির বিভিন্ন সভায় অংশ নেন। ২০১৭ সালে ব্যাংকটির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেয় চট্টগ্রাম ভিত্তিক একটি প্রভাবশালী শিল্প গ্রুপ। চলে নামে বেনামে ঋণ বিতরণের নামে হরিলুট। এসবের মধ্যেই ২০২০ সালের মার্চে ওই পর্যবেক্ষক সরিয়ে নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারল্য সংকটে পড়ে ব্যাংকটি। নামে-বেনামে ব্যাংকটি থেকে কী পরিমাণ অর্থ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তার কোনো হিসাব নেই। এসব বিষয় অনুসন্ধানে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরিদর্শন দল। এমন অবস্থায় ঋণ অনিয়ম তদার‌কি কর‌তে শরীয়াহ ভিত্তিক সবচেয়ে বড় ব্যাংকটিতে গত বছরের ডিসেম্বরে আবারও পর্যবেক্ষক বসায় বাংলাদেশ ব্যাংক।

আইন অনুযায়ী, একটি ব্যাংকের ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ৪ টাকা সিআরআর হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চলতি হিসাবে রাখতে হয়। তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংকে বিধিবদ্ধ তারল্য (সিআরআর) রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।

গত জুন পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের আমানত ছিল ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩২০ কোটি টাকা। এর ৪ শতাংশ হারে অন্তত ৫ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা নগদে বাংলাদেশ ব্যাংকে থাকার কথা। কিন্তু গত ২৯ জুলাই ব্যাংকটির চলতি হিসাবে ছিল মাত্র ৩০ কোটি টাকা। জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। এর আগে গত বছরের অক্টোবর শেষে ব্যাংকটির আমানত উঠেছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকায়। মার্চ শেষে ইসলামী ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬ হাজার ১০১ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৪ দশমিক ০৫ শতাংশ।

এসআই/এসএসএইচ/এনএফ