বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ২৩ মাসে সর্বনিম্ন
চলমান অর্থনীতির সংকটের প্রভাব পড়েছে ব্যাংকঋণে। দেশের বেসরকারি খাতে ব্যাংকঋণের প্রবৃদ্ধির হার ২৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণে প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ, যা আগস্টে কমে হয়েছে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। সর্বশেষ সেপ্টেম্বরে ঋণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশে। এর আগে ২০২১ সালের অক্টোবরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
বিজ্ঞাপন
ব্যাংকার ও খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলোকে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বেশি রাখতে হচ্ছে। সুদের হার কম হওয়ায় আশানুরূপ আমানত পাচ্ছে না। অনেক ব্যাংক তারল্য সংকটে রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সংকটে দেশে উৎপাদন কমেছে। নির্বাচনী বছরে সবাইকে ঋণ দিতে চাচ্ছে না ব্যাংক, আবার রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে উদ্যোক্তারা নতুন করে বিনিয়োগে আসতে চাচ্ছে না। সব মিলিয়ে যারা ঋণ নিতে চান, তাদের অনেককে ব্যাংক ঋণ দিতে আগ্রহী নয়। আবার যাদের ঋণ দিতে আগ্রহী ব্যাংক, তারা আপাতত ঋণ নিতে চাচ্ছে না। এসব কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ভাটা পড়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বেসরকারি খাতে ঋণ কম যাওয়া মানে দেশে বিনিয়োগ কম হচ্ছে, ব্যবসা-বাণিজ্যও কমে যাচ্ছে। দেশের কর্মসংস্থান ও সাধারণ মানুষের আয় কমছে। সংসারের জন্য ঋণ করা খারাপ হলেও অর্থনীতির জন্য ভালো, যদি ঋণের অর্থ ফেরত আসে।
আরও পড়ুন
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকে তারল্য সংকটের প্রভাব পড়েছে ঋণ বিতরণে। আমানতে কাঙিক্ষত প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে গেছে। ফলে আগের অর্থবছরের চেয়ে কম প্রবৃদ্ধি ধরা হলেও চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে তা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ব্যাংক খাত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ১৩ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। আগের বছরের সেপ্টেম্বর শেষে যা ছিল ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। এ হিসেবে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা। ঋণস্থিতির হিসাব হয় সুদসহ। ফলে নিট ঋণ যে এতো বেড়েছে তা নয়। বেসরকারি খাতে পরিস্থিতি এ রকম হলেও সরকারের ঋণ বাড়ছে দ্রুত। যদিও সরকার চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ঋণ পরিশোধে মনোযোগী হয়েছে।
সাধারণভাবে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে থাকে। তবে ২০১৯ সালের নভেম্বরে প্রথমবারের মতো তা নেমে যায় ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশে। করোনাভাইরাসের প্রভাব শুরুর পর ব্যাপক হারে কমে গিয়ে ২০২০ সালের মে মাসের শেষে প্রবৃদ্ধি নামে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে। তবে পরের মাস জুন থেকে তা অল্প অল্প করে বাড়তে থাকে। কিন্তু বর্তমানে ব্যবসায়িক পরিস্থিতি ঠিক থাকার পরও ২০২১ সালের অক্টোবরের পর টানা তিন মাস বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি এক অঙ্কের ঘরে।
বেসরকারি খাতে ঋণের লক্ষ্য
চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ এবং সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতিতে প্রবৃদ্ধির চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশি জোর দিয়েছে। গত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ ঋণ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়। তবে আগামী ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতে ১০ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং অর্থবছর শেষে ১০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। সরকারি খাতে ডিসেম্বরে ৪৩ শতাংশ এবং আগামী জুনে ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এসআই/এসএম