করোনা মহামারির আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছোট উদ্যোক্তাসহ এসএমই শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের জন্য ঋণ নিশ্চিতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেওয়া হয়েছে নানা সুযোগ সুবিধা। তারপরও ঋণ দিতে আগ্রহী কম ব্যাংকগুলো। ফলে বারবার সময় বাড়ানোর পরও ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতের প্যাকেজের ৫ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা পড়ে আছে। তাই এ খাতে ঋণ শতভাগ বিতরণ করতে আবারও সময় বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এই তহবিল থেকে ঋণ পাবেন ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা।  

গত বছর ১৩ এপ্রিল করোনার প্রাদুর্ভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সিএমএসএমই খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা হয়। তারপর থেকে ঋণ দেওয়ার সময় ছয় বার বৃদ্ধি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বছরের প্রথম দফায় আগস্ট ও পরে তা দুই মাস বাড়িয়ে ৩১ অক্টোবর, পরে ৩০ নভেম্বর, এরপর ৩১ ডিসেম্বর সর্বশেষ ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন এই তহবিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ঋণ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো।

সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সিএমএসএমই খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। শুরু থেকেই নানা অজুহাতে ছোট উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ঋণ দিতে অনীহা দেখায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। ঋণ বিতরণ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাপ, সতর্কতা, ঋণ নিশ্চয়তা স্কিম (ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম) গঠনসহ নানা উদ্যোগও গ্রহণ করে। ঋণ দেওয়ার বিভিন্ন শর্তও শিথিল করে। কিন্তু এ তহবিল থেকে ঋণ বিতরণে তেমন গতি আসেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সিএমএসএমই খাতের ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিলের মধ্যে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকার মত ঋণ বিতরণ হয়েছে। ঋণ শতভাগ বিতরণের জন্য তিন মাস সময় বাড়িয়েছে দেওয়া হয়েছে। শুরুতে ঋণ কম দিলেও এখন গতি বেড়েছে। এবার নির্ধারিত সময়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ বাস্তবায়ন করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সোমবার (১২ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্ট  ঋণ বিতরণের সময় বাড়িয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছে।

এতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাত্র ৭২ দশমিক ৩১ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। অংকে যার পরিমাণ ১৪ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। এ হিসেবে ২০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজে এখনো পাঁচ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা বিতরণ হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এই প্যাকেজের সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রণোদনা প্যাকেজটির প্রথম পর্যায়ের (প্রথম বছর) বাস্তবায়নের সময়সীমা জুন ৩০ পর্যন্ত বাড়ানো হলো। আগের জারি করা অন্যান্য নির্দেশনার অপরিবর্তিত থাকবে।

ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ৪৫ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন, ১৯৯৩ এর ১৮ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করা হলো-সার্কুলারে উল্লেখ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এসআই/ওএফ