আর্থিক খাতে লেনদেনের ডিজিটাল পেমেন্ট হয় মাত্র ২৭-২৮ শতাংশ এবং বাকী ৭০ শতাংশের বেশি প্রথাগত ব্যবস্থার মাধ্যমে হয়ে থাকে।

বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘সবার জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিং : আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ব্যবধান দূরীকরণ’ শীর্ষক ফোকাস গ্রুপ আলোচনা সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ডা. মো. এজাজুল ইসলাম এমন তথ্য জানান।

বাংলাদেশে ডিজিটাল ব্যাংকিং খাতে যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকলেও সহায়ক নীতিমালা, ব্যবহারকারীদের আস্থা, অবকাঠামো ঘাটতি, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সমন্বয়হীনতা এবং যন্ত্রপাতির উচ্চমূল্যের কারণে এ খাতের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না বলে সভায় উঠে আসে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, এনডিসি এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ডা. মো. এজাজুল ইসলাম।

সভায় স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, দেশে ২০১১ সালে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস চালু হলেও বর্তমানে প্রায় ৫৪% মানুষ এ সেবা ব্যবহার করছে। তবে সাইবার নিরাপত্তা, ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ এবং আস্থার ঘাটতির কারণে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, সরকার, বেসরকারি খাত ও শিক্ষাখাত একই লক্ষ্যে ডিজিটাল সেবার আধুনিকায়নে কাজ করছে। তিনি জানান, নাগরিক ডাটা সংরক্ষণে ঘাটতি থাকায় প্রায় ৫ কোটি নাগরিকের তথ্য ডার্কওয়েবে পাওয়া গেছে। এজন্য ডাটা এনক্রিপশন ও নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সরকার ব্যক্তিগত ডাটা সংরক্ষণ অর্ডিন্যান্স প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে, যা এক মাসের মধ্যে কার্যকর হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

বিশেষ অতিথি ডা. মো. এজাজুল ইসলাম জানান, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত দেশে ৩ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকার মানি সার্কুলেশন হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে জনগণের হাতে রয়েছে ২ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা। তিনি বলেন, দেশে এখনও মাত্র ২৭-২৮% লেনদেন ডিজিটাল পদ্ধতিতে হচ্ছে, বাকি অংশ প্রথাগত ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে রবি আজিয়াটা পিএলসির হেড অব কমার্শিয়াল পার্টনারশিপ সানজিদ হাসান জানান, ২০২৫ সালে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ডিজিটাল ব্যাংকিং বাজার ৪ হাজার ৬৭৮.৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হলেও ২০৩৩ সালে তা ১১ হাজার ২৩৮.৬ মিলিয়নে উন্নীত হবে। বাংলাদেশেও এ খাতের বাজার ৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আলোচনা পর্বে ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ডিবি) ইলিয়াস জিকো, শান্তা এসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান, সিটি ব্যাংক পিএলসির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী আজিজুর রহমান, বেটলস্ সাইবার সিকিউরিটি লিমিটেডের চিফ সাইবার অপারেশন্স অফিসার শাহী মির্জা এবং ওমেগা এক্সিম লিমিটেডের পরিচালক রেজওয়ান আলী অংশ নেন।

বক্তারা বলেন, ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের প্রসারে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, গ্রাহক সুরক্ষা, সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি সরবরাহ এবং ব্লকচেইনভিত্তিক স্বচ্ছতা আনয়ন অপরিহার্য। এছাড়া ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবাকে সর্বস্তরে পৌঁছে দিতে সরকার ও বেসরকারি খাতকে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

সভায় ডিসিসিআইর ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরএম/এসএম