ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও এম‌ডির নামে পরিচালিত সব অ্যাকাউন্টের তথ্য ও ৫০ লাখ বা তার বেশি টাকা লেনদেনের চেক ও রশিদের কপি চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বুধবার (২৫ আগস্ট) বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) ব্যাংকগুলোকে এ সংক্রান্ত তথ্য চে‌য়ে চিঠি দি‌য়ে‌ছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এসব তথ্য পাঠাতে বলা হ‌য়ে‌ছে।

বিএফআইইউ চিঠিতে বলা হয়েছে, ইভ্যালি ডটকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের নামে পরিচালিত সব ধরনের অ্যাকাউন্টের তথ্য পাঠাতে হবে। এছাড়া ২০২০ সাল থেকে তাদের হালনাগাদ লেনদেন বিবরণী, ৫০ লাখ বা তারচেয়ে বেশি টাকা জমা ও উত্তোলনের ক্ষেত্রে জমা রশিদ বা চেকের কপি (ওয়াক-ইন কাস্টমারের ছবিযুক্ত আইডিসহ) পাঠাতে বলা হয়ে‌ছে।

পাশাপা‌শি এসব হিসাবের নমিনির তথ্য ও নমিনিদের নামে কোনো অ্যাকাউন্ট পরিচালিত হলে সেসবের তথ্যও দি‌তে বলা হয়েছে। তাদের নামে এফডিআর, ঋণ হিসাব, এলসি থাকলে সব ধরনের কাগজপত্রসহ তথ্য দিতে হবে। হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি প্রোফাইল, টিপি ও সংশ্নিষ্ট সব ধরনের দলিল পাঠাতে হবে।

এরই মধ্যে প্রতারণা ও গ্রাহক হয়রানির অভিযোগে ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রাসেলের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জে মামলা করা হয়েছে। বুধবার বেলা ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার বাসিন্দা মো. রাজ বাদী হয়ে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আরার আদালতে এ মামলা করেন। 

ই-কমার্স প্লাটফর্ম ইভ্যালি ২০১৮ সালে যাত্রা শুরু করে। লোভনীয় ডিসকাউন্ট কিংবা ক্যাশব্যাকের অফার প্রসঙ্গে ইভ্যালির নাম সর্বাগ্রে। স্বল্প সময়ে অনলাইন ক্রেতার মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করলেও প্রতিষ্ঠানটি এখন গ্রাহক ভোগান্তি ও সমালোচনার শীর্ষে অবস্থান করছে।

প্রসঙ্গত বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের আগস্টে ইভ্যালি এবং এর চেয়ারম্যান ও এমডির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেন এক মাসের জন্য স্থগিত করেছিল।

ইভ্যালির ‘সম্পদের চেয়ে ছয় গুণ বেশি দেনা’ বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনে উঠে আসে ইভ্যালির মোট দায় ৪০৭ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম নিয়েছে ২১৪ কোটি টাকা, আর মার্চেন্টদের কাছ থেকে বাকিতে পণ্য নিয়েছে ১৯০ কোটি টাকার। স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে কমপক্ষে ৪০৪ কোটি টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা। কিন্তু সম্পদ আছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকার।

এছাড়া গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির নেওয়া অগ্রিম ৩৩৯ কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এ টাকা আত্মসাৎ বা অবৈধভাবে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা রয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সম্পদ ও দা‌য়ের হিসাব দিয়ে‌ছে ইভ্যালি। এ‌তে প্র‌তিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তার নিজের ব্র্যান্ড মূল্য ৪২৩ কোটি টাকা।

গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত তাদের মোট দায় ৫৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক কোটি টাকা শেয়ারহোল্ডার হিসেবে কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেল কোম্পানিকে দিয়েছেন। বাকি ৫৪৩ কোটি টাকা হচ্ছে কোম্পানিটির চলতি দায়।

ইভ্যালি জানায়, দায়ের বিপরীতে তাদের চলতি সম্পদ রয়েছে ৯০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আর সম্পত্তি, স্থাপনা ও যন্ত্রপাতি মিলিয়ে রয়েছে ১৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সব মি‌লি‌য়ে স্থাবর সম্পত্তি দাঁড়ায় ১০৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।

মোট দায় ৫৪৪ কোটি টাকা থেকে স্থাবর সম্পত্তি ১০৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বাদ দিলে বাকি থাকে ৪৩৯ কোটি টাকা, যাকে ইভ্যালি বলছে তার অস্থাবর সম্পত্তি।

বিবরণী মেলাতে ইভ্যালি দেখিয়েছে অস্থাবর সম্পত্তি ৪৩৮ কোটি টাকার মধ্যে ৪২৩ কোটি টাকা হচ্ছে তার ব্র্যান্ড মূল্য, আর ১৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা হচ্ছে অদৃশ্যমান সম্পত্তি।

সব মি‌লি‌য়ে ইভ্যালির মোট দেনার পরিমাণ ৫৪২ কোটি ৯৯ লাখ ৫৮ হাজার ৪৮২ টাকা। এই দেনার বিপরীতে তাদের দৃশ্যমান ও অদৃশ্য মোট সম্পদ রয়েছে ৫৪৩ কোটি ৯৯ লাখ ৫৮ হাজার ৪৮২ টাকা।

এসআই/ওএফ