দেশের ফুটবল, ক্রিকেট কিংবা হকিসহ ক্রীড়াবিদের তালিকায় থাকা যেকোনো খেলোয়াড়ের জীবনের ঝুঁকির নিরাপত্তায় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের বিশেষ বিমা করছে সরকার। মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকার ‘বঙ্গবন্ধু স্পোর্টসম্যানস কম্প্রিহেনসিভ ইনস্যুরেন্স’ নামের এই বিমা করার উদ্যোগ নিয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান সাধারণ বিমা করপোরেশনসহ (এসবিসি) দেশের যেকোনো সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোতে এই বিমা করা যাবে। বিমার মেয়াদ হবে একবছর। এককালীন প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮৫ টাকা। তবে ক্ষতিপূরণের বেলায় ক্যাটাগরি হবে তিনটি।

ক্যাটাগরি তিনটির মধ্যে প্রথম ক্যাটাগরিতে- কোনো খেলোয়াড় দুর্ঘটনাজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করলে কিংবা আঘাতে কোনো অঙ্গহানি হলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১ লাখ টাকা দেওয়া হবে। দ্বিতীয় ক্যাটাগরি হলো- তৃতীয় পক্ষের কাছে দায়বদ্ধতার সুরক্ষা ক্যাটাগরি, এই ক্যাটাগরি ক্ষতিপূরণ পাবেন ৫০ হাজার টাকা। তৃতীয় ক্যাটাগরি হলো- ক্রীড়া সরঞ্জামের দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতির সুরক্ষা। এই ক্যাটাগরিতে ক্ষতিপূরণ পাবে ১০ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে সবাইকে বিমার আওতায় আনতে আমরা নতুন এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। জাতির পিতা সবার স্বাস্থ্য ঠিক রাখার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতেন। তিনি খেলোয়াড়দের অনেক পছন্দ করতেন। তাই খেলোয়াড়দের জন্য বিশেষ এই বিমা চালু করছি।

সাধারণ বিমা করপোরেশনের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জাকির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই প্যাকের আওতায় খেলতে গিয়ে কোনো খেলোয়াড় আহত হয়ে অঙ্গহানি হলে কিংবা মারা গেলে বা খেলার সময় সরঞ্জাম নষ্ট হলে এই ক্ষতিপূরণ পাবেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রস্তাবটি খুবই ভালো। আমাদের কাছে এই ধরনের কোনো প্রস্তাব আসেনি, এলে দেখব কী করা যায়।

জাতীয় দলের ক্রিকেটার ইমরুল কায়েস ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৩০০ টাকার বিমা যদি লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ হয়, তবে এটাতো ভালো। তার মানে হলো খেলোয়াড়দের ব্যাকআপ (বিকল্প) থাকল। আমাদের জন্য এটা ভালো।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবু নাইম সোহাগ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারের  উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে সুন্দর, আমরা গ্রহণ করব।

আইডিআরএ জানায়, জাতীয় বিমা দিবস ২০২১ এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে চারটি বিমা পণ্যের উদ্যোগ নিয়েছে আইডিআরএ। এগুলো হচ্ছে- বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিমা, বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বিমা, স্বাস্থ্য বিমা এবং ‘বঙ্গবন্ধু স্পোর্টসম্যানস কম্প্রিহেনসিভ ইনস্যুরেন্স’।

এই চার প্রকার বিমার মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু স্পোর্টসম্যানস কম্প্রিহেনসিভ ইনস্যুরেন্স’ পলিসির মধ্যমে খেলোয়াড় তার জীবনের সার্বিক ঝুঁকির নিরাপত্তা সবচেয়ে কম প্রিমিয়ামে নিশ্চিত করতে পারবে। তার জন্য ভ্যাট, ট্যাক্স বাদে মোট ২৮৫ টাকা খরচ হবে। অর্থাৎ ২৮৫ টাকার বিমা করলে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার ঝুঁকি নেবে বিমা কোম্পানি।

তবে বিমার পর যদি কেউ শুধু ক্যাটাগরি-১ (অর্থাৎ দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু অথবা শারীরিক আঘাতজনিত ঝুঁকির সুরক্ষা) এর আওতায় পড়ে তবে কোম্পানির কাছ থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পাবে। তার দ্বারা তৃতীয় কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ৫০ হাজার টাকা পাবে। এছাড়াও খেলা চলাকালীন সরঞ্জাম নষ্ট হলে ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পাবে।

বিমার বৈশিষ্ট্য
দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু ও শারীরিক আঘাতজনিত ঝুঁকির সুরক্ষা (খেলোয়াড়), ক্যাটাগরি-১

তৃতীয় পক্ষের কাছে দায়বদ্ধতার সুরক্ষা (ক্রীড়া), ক্যাটাগরি-২

ক্রীড়া সরঞ্জামের দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতির সুরক্ষা (ক্রীড়া সরঞ্জাম), ক্যাটাগরি-৩


প্রিমিয়াম
প্রতি বছর প্রিমিয়াম হবে ২৮৫ টাকা। এর সঙ্গে রয়েছে ভ্যাট ও স্ট্যাম্প ডিউটি। 

ক্যাটাগরি ১- ১২৫ টাকা
ক্যাটাগরি ২- ৬০ টাকা
ক্যাটাগরি ৩- ১০০ টাকা

বিমাকৃত অঙ্ক
ক্যাটাগরি ১- ১ লাখ টাকা
ক্যাটাগরি ২- ৫০ হাজার টাকা
ক্যাটাগরি ৩- ১০ হাজার টাকা

উল্লেখ্য, ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার বিমা হউক সবার’ স্লোগান সামনে রেখে ঝরেপড়া রোধ করতে ৫০ হাজার স্কুলশিক্ষার্থীকে ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিমার’ আওতায় আনা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে গার্মেন্টকর্মীদের সুরক্ষার জন্য ১০০ টাকা প্রিমিয়াম নিয়ে ২ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ বিমা চালু করা হয়েছে।

এমআই/এইচকে/এমএমজে