স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন মো. ইব্রাহীম। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২০২১ সালের ৪ আগস্ট মারা যান তিনি। মৃত্যুর পর বিমা দাবি ও পাওনা পরিশোধের জন্য নিয়ম অনুযায়ী কোম্পানিতে আবেদন করেন তার স্ত্রী রহিমা আখতার। এরপর দাবি করা অর্থের আংশিক অংশ পরিশোধও করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পুরো অর্থ পরিশোধে গড়িমসি করছেন স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের কর্তারা।

বিমা দাবি পেতে ওই নারী প্রথমে কোম্পানির এমডি ও চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তারপর বিষয়টি নিয়ে গত বছর বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগ দেওয়ার ১ বছর পেরিয়ে গেলেও পাননি দাবি করা অর্থ।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী রহিমা আখতার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্বামী কোম্পানিটিতে দীর্ঘ দিন কাজ করেছেন, কোম্পানির লোকজন আমার এ বিপদের দিনে তাদের সহকর্মী মনে করে সহযোগিতা করতে পারত। কিন্তু আজ পর্যন্ত বিমা দাবি ও কোম্পানির কাছে পাওনা টাকা পরিশোধ করছে না।

আরও পড়ুন : সিইও হওয়ার আগেই ক্ষমতা দেখাচ্ছেন খালেক মিয়া 

আইডিআরএ- এর সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিমা খাতের প্রধান সমস্যাই হচ্ছে বিমা দাবি পরিশোধে কোম্পানিগুলোর গড়িমসি। যে ব্যক্তি কোম্পানিটিতে কাজ করছেন তারই টাকা দিচ্ছে না কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। এর চেয়ে আর দুঃখজনক কী হতে পারে!

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিমা খাতের স্বার্থে এসব কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া উচিত। কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হলে সাধারণ মানুষ প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাবে। বিমার প্রতি মানুষ আস্থার সংকট দিন দিন কমবে।

দুই বছর পার হওয়ার পর বিমা দাবি পরিশোধ না করার বিষয়ে স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বিমা দাবির একটি অংশ পরিশোধ করেছি। কোম্পানির ফান্ড জটিলতায় বাকি টাকা দিতে একটু দেরি হয়েছে। যে চেক দিয়েছিলাম সেই চেক বাউন্স হয়েছে।

আরও পড়ুন : মিটিং প্রতি ২ লাখ টাকা ঘুষ চান আইডিআরএর সদস্য কামরুল

তিনি বলেন, ইব্রাহিমের স্ত্রী ও আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে কথা হয়েছে, চেক জমা দিতে বলেছি। দ্রুত বিমার টাকা ও কোম্পানির সঙ্গে লেনদেনের বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে।

আইডিআরএর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, অভিযোগ আমার চোখে পড়েনি। খোঁজ নিচ্ছি, দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

লিখিত অভিযোগ যা বলেন মৃত এএমডির স্ত্রী

২০২২ সালে ৪ আগস্ট আইডিআরএর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন মৃত ইব্রাহিমের স্ত্রী রহিমা আখতার। 

সেখানে তিনি বলেন, আমার স্বামী মৃত মো. ইব্রাহীম (পিতা: মৃত নূরুল ইসলাম) স্বদেশ ইসলামী লাইফের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিমা গ্রাহক ছিলেন। স্বদেশ ইসলামী ৩০ লাখ টাকার একটি বিমা পলিসি ছিল, যার ডিকে-১৯৪৬৪/২০। তিনি ২০২১ সালের ৪ আগস্ট করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর উক্ত পলিসির মৃত্যু দাবি বাবদ কোম্পানি কর্তৃক ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদনকৃত এই টাকার মধ্যে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকার চেক আমার স্বামীর মা শামসুন্নাহারকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাকি ১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা স্ত্রী হিসেবে আমাকে প্রদান করা জন্য নির্বাহী রশিদে স্বাক্ষর নেওয়া হলেও আজ পর্যন্ত কোনো চেক দেওয়া হয়নি।

অপরদিকে আমার স্বামী ইব্রাহীম জীবিত থাকাকালীন অন্য আরেকটি পলিসি করার জন্য ১০ লাখ টাকার আরেকটি পিআর কর্তন করেন। যার পিআর না ০০০০০০২৬৮৪। উক্ত পিআর-এর অনুকূলে কোনো এফপিআর ইস্যু হয়নি। পরবর্তীতে আমার স্বামীর মৃত্যুর পর স্বদেশ লাইফের এমডি ইখতিয়ার উদ্দিন শাহীন আমার মেয়ে ফাতেহার নামে করবেন বলে আমার কাছ থেকে মূল পিআরটি নিয়ে যান। এখন পর্যন্ত কোনো এফপিআর ও দলিল ইস্যু হয়নি। বর্তমানে আমার আর্থিক অনটন থাকায় এফডিআর করা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না।

উপরোক্ত বিষয়টি বিবেচনা করে আমার স্বামীর মৃত্যু দাবি বাবদ ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকার চেক এবং পিআর বাবদ ১০ লাখ টাকা পাওয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করছি।

এমআই/এসকেডি