মোটরযানের জন্য থার্ড পার্টি (তৃতীয় পক্ষ) বীমা করলেই সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে শাস্তি দেওয়া হবে। বীমা কোম্পানি ও গ্রাহকদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এই প্রচারণা চালাচ্ছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

এর আগে গত ২০ ডিসেম্বর আইডিআরএ সার্কুলার দিয়ে থার্ড পার্টি ঝুঁকি বীমার বিধান বাতিল করে। এতে বলা হয়, দেশের বীমা খাতে শৃংখলা প্রতিষ্ঠা ও পলিসি গ্রাহকগদের স্বার্থ নিশ্চিতে প্রচলিত থার্ড পার্টির ঝুঁকি বীমা বাতিল করা হয়।

একই সঙ্গে সব বীমা কোম্পানিগুলোতে ফার্স্ট পার্টি ইন্স্যুরেন্স করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে যারা আগে থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্স করেছেন। তাদের মেয়াদ পর্যন্ত চলবে। আইডিআরএর চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।

কিন্তু সম্প্রতি আইডিআরএ’র কাছে অভিযোগ রয়েছে, যে বীমা কোম্পানিগুলো এখনো থার্ড পার্টি বীমা করছে। এরই প্রেক্ষিতে বীমা কোম্পানিকে সচেতন করতে গত সোমবার গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে আইডিআরএর চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকার মোটরযানে থার্ড পার্টি বীমার বিধান বাতিল করেছে। আমরাও তাই করেছি। এখন কোনো মোটরযানের মালিক যদি বীমা করেন তবে প্রথম পক্ষ অর্থাৎ কম্পেহেন্সিভ মোটর ইন্স্যুরেন্স করবেন। এর বাইরে কোনো কোম্পানি বীমা করলেই শাস্তির আওতায় আনা হবে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মোটরযান অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ রহিত করে সড়ক পরিবহণ আইন, ২০১৮ কার্যকর করা হয়েছে।

সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর ধারা ৬০ এর উপধারা(২) অনুযায়ী প্রতিটি মোটরযানের জন্য যধানিয়মে বীমার বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতি মোটরযানের জন্য বর্তমান প্রলিত কম্পেহেন্সিভ মোটর ইন্স্যুরেন্স পলিসি গ্রহণ করতে হবে। যাতে তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বীমাও আবরিত হয়েছে।

ধারা অনুযায়ী- মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠান তার অধীন পরিচালিত মোটরযানের জন্য যথানিয়মে বীমা করবেন। মোটরযানের ক্ষতি বা নষ্ট হওয়ার বিষয়টি বীমার আওতাভুক্ত থাকবে। বীমাকারী কর্তৃক উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়া অধিকারী হবেন।

সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ জারি করার প্রেক্ষিতে আইডিআরএ কর্তৃক তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বীমা সম্পর্কিত বীমা প্রোডাক্ট বা প্রকল্পটি বাতিল করা হয়েছে। ফলে কোনো বীমা প্রতিষ্ঠান তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বীমা ইস্যু করা বীমা আইন, ২০১০ এর পরিপন্থী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এক্ষেত্রে কেবল কম্পেহেন্সিভ মোটর ইন্স্যুরেন্স পলিসিই ইস্যু করতে হবে।

এর আগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, দেশের জিডিপিতে বীমা খাতের পেনিট্রেশন বৃদ্ধি ও অর্থনীতিতে বীমা খাতকে প্রবৃদ্ধির খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হবে। বীমা খাতে শৃংখলা প্রতিষ্ঠা ও পলিসি গ্রাহকগণের স্বার্থ নিশ্চিত করতে নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য এই সার্কুলার জারি করা হলো। মোটর ভেহিক্যাল অর্ডিনান্স্য, ১৯৮৩ রহিত করে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ (২০১৮ সালের ৪৭ নং আইন) প্রতিস্থাপিত হয়। সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর ধারা ৬০ এর উপধারা (১) ও (২) নিম্নরূপ:

‘যাত্রী ও মোটরযানের বীমা-(১) কোনো মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা করিলে তাহার মালিকাধীন যে কোনো মোটরযানের জন্য যে সংখ্যক যাত্রী পরিবহনের জন্য নিদিষ্টকৃত তাহাদের জীবন ও সম্পদের বীমা করিতে পারিবে।

(২) মোটরযানোর মালিক বা প্রতিষ্ঠান উহার অধীন পরিচালিত মোটরযানের জন্য যথানিয়মে বীমা করিবেন এবং মোটরযানের ক্ষতি বা নষ্ট হওয়ার বিষয়টি বীমার আওতাভুক্ত থাকিবে এবং বীমাকারী কর্তৃক উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পাইবার অধিকারী হইবেন।’

বর্ণিতাবস্থায়, তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বীমা সম্পর্কিত বীমা প্রোডাক্ট এই সার্কুলার জারির তারিখ থেকে বাতিল করা হলো।

পরিবহন খাতসংশ্লিষ্টরা প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়ে বলছেন, আইডিআরএ মোটরযানে তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বীমা বা থার্ড পার্টি ইন্সুরেন্স বাতিলের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ভবিষ্যতে মোটরযানে প্রথম পক্ষের ঝুঁকি বা ফাস্ট পার্টি ইন্সুরেন্স আদেশ জারির পথ তৈরি করল।

এমআই/ওএফ