আস্থা সংকটে চলা দরপতনে পুঁজি হারানোর ভয় ও আতঙ্কে রমজানের ঈদের পর পুঁজিবাজারে নিজেদের হাতে থাকা সব শেয়ার বিক্রি করেছে অন্তত ৩৫ হাজার বেনিফিশিয়ারি ওনার্সধারী (বিও) বিনিয়োগকারী।

শুধু তাই নয়, ঈদের আগের কর্মদিবস থেকে ২১ মে পর্যন্ত পুঁজিবাজারে নতুন করে ৩৮ হাজার বিওধারী বিনিয়োগকারী নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। তাতে মোট নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীর সংখ্যা দাঁড়াল ৪ লাখ ৯১ হাজারে। যা মোট বিনিয়োগকারীদের ২৪ শতাংশ। শেয়ার সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজেটরি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ঈদের আগের সর্বশেষ কর্মদিবস পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব সংখ্যা ছিল ২০ লাখ ৭৯ হাজার ২১৫টি। এর মধ্যে সক্রিয় বিনিয়োগকারীদের বিও সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ৯ হাজারটি। সেখান থেকে ৩৭ হাজার ২৪৩টি কমে ২১ মে দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৭১ হাজারটিতে। এর মধ্যে ঈদ পরবর্তী কর্মদিবস ৪ মে থেকে ২১ মে পর্যন্ত মোট ১০ কর্মদিবসে প্রায় ৩৫ হাজার বিওধারী সব শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছেড়েছেন।

অপরদিকে এই সময়ে নতুন করে ৩৮ হাজার ৫৪১টি বিওধারী বিনিয়োগকারী নিষ্ক্রিয় হয়েছেন। ফলে নিষ্ক্রিয় বিওধারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯১ হাজারটিতে। অর্থাৎ ২০ লাখ ৮১ হাজার বিওধারীর মধ্যে ৪ লাখ ৯১ হাজারটি নিষ্ক্রিয়। যা শতাংশের হিসেবে ২৪ শতাংশ।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের আগে থেকেই পুঁজিবাজারে দরপতন চলছে। বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল ঈদের পর থেকে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। সে লক্ষ্যে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বেশকিছু উদ্যোগও নিয়েছিল। কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানোর পরিবর্তে দরপতন অব্যাহত রয়েছে দেশের দুই বাজারেই। ফলে ঈদ পরবর্তী ১০ কর্মদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বিনিয়োগকারীদের পুঁজি অর্থাৎ মূলধন কমেছে ২৭ হাজার কোটি টাকা। আরো পুঁজি কমতে পারে এই ভয়ে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন।

ডিএসইর তথ্য মতে, রমজানের ঈদের পর পুঁজিবাজারে প্রথম লেনদেন হয়েছে ৪ মে। সেই দিন থেকে ২১ মে পর্যন্ত মোট ১০ কর্মদিবসের মধ্যে আট কর্মদিবস দরপতন হয়েছে। এই দরপতনে ডিএসইর প্রধান সূচক ৩৯৭ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২৫৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সূচক পতনের পাশাপাশি লেনদেন হওয়া কোম্পানির শেয়ারের দাম কমায় গত ১০ কর্মদিবসে ডিএসইর বিনিয়োগকারীদের বাজার মূলধন কমেছে ২৭ হাজার ৮৮ কোটি ৯০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা।

অর্থাৎ ঈদের আগের দিন বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯৬১ কোটি ৮ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। সেখান থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা কমে বাজার মূলধন ৫ লাখ ৯ হাজার ৮৭২ কোটি ১৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে।

জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির ঘটনা নিয়ে নানা রকম গুজবে বিনিয়োগকারীরা প্যানিক হয়ে শেয়ার বিক্রি করেছেন। এর আগে এরাই হুজুগে কিনেছিল। এদের বাধা দিয়ে লাভ নেই। বাজার অনেক পড়েছে, আশা করছি এখন বাড়বে।

তিনি বলেন, মার্কেটে শেয়ারের দাম কমার নিশ্চিয়ই কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে ডলারের দাম বেড়েছে, এ কারণে বিদেশিরা শেয়ার বিক্রি করছেন। আরেকটি হলো করোনার সময় ব্যবসা-দোকানপাট বন্ধ করে কিছু মানুষ শেয়ারে বিনিয়োগ করেছিল। এখন তারা পুরোনো ব্যবসায় ফিরেছে। আবার কিছু লোক নতুন করে এসে বাজে শেয়ার কিনে ধরা খাচ্ছে, ব্যাংকের সুদ বেড়েছে। এগুলোর প্রভাব পড়েছে। তবে এই প্রভাব বেশিদিন থাকবে না। দ্রুত কেটে যাবে।

এমআই/এসএসএইচ