প্রযুক্তির উন্নয়নে ব্রোকারেজ হাউজে না গিয়ে ঘরে বসেই বিদায়ী অর্থবছরে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে লেনদেন করেছেন ৭৭ হাজার ৯৪৯ জন বিনিয়োগকারী। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৯ হাজার জন বেশি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতি সহজে অন্যান্য কাজের ফাঁকে, ঘর, অফিস-আদালত কিংবা রাস্তা-ঘাট যেকোনো জায়গায় বসে স্মার্টফোনে শেয়ার লেনদেনের সুবিধা এনেছে মোবাইল অ্যাপ। ফলে বিনিয়োগকারীদের ব্রোকারেজ হাউজে যেতে হচ্ছে না। ব্রোকার হাউজের কর্মকর্তাদের ফোন করে শেয়ার কেনা-বেচার অর্ডার দিতে হচ্ছে না। এতে বিনিয়োগকারীদের সময় ও ভোগান্তি দুটোই লাঘব হয়েছে। এ কারণে মোবাইল অ্যাপে লেনদেন দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

আনোয়ার সিকিউরিটিজের কর্নধার আনোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন বিনিয়োগকারীদের আর ব্রোকারেজ হাউজে আসতে হচ্ছে না। তারা মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে সরাসরি শেয়ার লেনদেন করতে পারছেন। এর মাধ্যমে তারা তাদের হাতে থাকা শেয়ারের সংখ্যাও দেখতে পারছেন।

ডিএসই সূত্র মতে, ২০২১-২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে ডিএসইর মোবাইল অ্যাপে লেনদেন করার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৭৭ হাজার ৯৪৯ জন বিনিয়োগকারী। নিবন্ধন করা বিনিয়োগকারীরা গত এক বছরে মোট ১ কোটি ৭৯ লাখ শেয়ার কেনা-বেচার অর্ডার দিয়েছেন। তার মধ্যে ১ কোটি ৪২ লাখ অর্ডারের শেয়ারে মোট ৪২ হাজার ৪০১ কোটি ৪৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা লেনদেন হয়েছে। যা মোট লেনদেনের ১৭ শতাংশ।

এর আগের বছর ২০২০-২১ সালে বিনিয়োগকারীদের নিবন্ধনের সংখ্যা ছিল ৬৮ হাজার ৮৯৫ জন। তারা ওই বছর মোট ২৮ হাজার ৮০৪ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার কেনা-বেচা করেছিলেন। এই শেয়ার কেনা-বেচার জন্য মোট অর্ডার দেওয়া হয়েছিল ১ কোটি ১৭ লাখ। এর মধ্যে ৮৮ লাখ ৩ হাজার অর্ডারের শেয়ার কেনা-বেচা হয়েছে। বাকি অর্ডার বাতিল হয়েছে।

ডিএসইর সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডিএসইর মোবাইল অ্যাপ সেবাটি চালু হওয়ার পর থেকে বিনিয়োগকারীদের কষ্ট কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি ব্রোকার হাউজগুলোতে ঝামেলা কমছে। দিন দিন সেবাটি জনপ্রিয় হচ্ছে।

এ বিষয়ে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারিক আমিন ভূঁইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেবাটি চালু করা হয়েছে। অত্যাধুনিক সুবিধার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে এই সেবা চালু করা হয়েছে। আমরা বিনিয়োগকারীদের প্রযুক্তির সর্বোত্তম সুবিধা দিতে আগ্রহী বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ডিএসই মোবাইল অ্যাপ সেবাটি চালু করে ডিএসই। মোবাইলে লেনদেন প্রক্রিয়ায় অ্যাপটির তিন ধরনের সংস্করণ রয়েছে। এর মধ্যে একটি ব্রোকার হাউজগুলোর জন্য, বাকি দু’টি বিনিয়োগকারীদের জন্য। বিনিয়োগকারীদের দু’টি ভার্সনের মধ্যে একটি হচ্ছে ডিএসই-মোবাইল ভিআইপি। এটি দিয়ে সরাসরি লেনদেন করা যাবে না। বিনিয়োগকারী মোবাইলে শুধু তার পোর্টফোলিও দেখতে পারবেন।

অন্যটি হচ্ছে ডিএসই-মোবাইল ট্রেডার। এ ভার্সন ব্যবহার করে বিনিয়োগকারী নিজে লেনদেন করতে পারবেন। তবে কোনো বিনিয়োগকারী বাজার দামের চেয়ে বেশি দামে ট্রেড অফার করলে ব্রোকারেজ হাউজের ট্রেডার সেই আদেশ বাতিল করতে পারেন। 

অ্যাপে লেনদেনের জন্য বিনিয়োগকারীকে নিজ নিজ ব্রোকারেজ হাউজ থেকে ইউজার আইডি (ব্যবহারকারীর পরিচয়) এবং পাসওয়ার্ড (গোপন নম্বর) নিতে হবে। এরপর লেনদেন চলার সময়ে স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে ঢুকে এমএ প্লাস সফটওয়্যারের মাধ্যমে শেয়ার বেচাকেনার অর্ডার দেওয়া যাবে। এ অর্ডার কার্যকর হলে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে মোবাইলে একটি বার্তা আসবে।

তবে যারা একাধিক বিও হিসাব পরিচালনা করেন তাদের প্রতিটি বিও অ্যাকাউন্টের জন্য পৃথক ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড নিতে হবে। এজন্য তাকে মাসিক ফি দিতে হয়।

এমআই/ জেডএস