কোম্পানির মুনাফা বৃদ্ধি কিংবা নতুন কোনো ইউনিটের উৎপাদন বৃদ্ধির মতো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। তারপরও হঠাৎ করে বাড়ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠান জিবিবি পাওয়ার লিমিটেডের শেয়ারের দাম।

তবে বাজারে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে মালিকপক্ষ ও তার লোকজন শেয়ার কিনছেন। তাতে বেশি মুনাফার আশায় বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির শেয়ার কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। যে কারণে সোমবার (২৯ আগস্ট) শেয়ারটি লেনদেনের একপর্যায়ে বিক্রেতা শূন্য হয়ে যায়।
 
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য মতে, গত ২৮ জুলাই শেয়ারটির দাম ছিল ১৯ টাকা ৩০ পয়সা। সেখান থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে শেয়ারটির দাম বাড়ে মাত্র কয়েক পয়সা। হঠাৎ সেই শেয়ার গত দুই দিনে ২ টাকা ৭০ পয়সা বেড়েছে। এর মধ্যে সোমবারই শেয়ারটির দাম বেড়েছে ২ টাকা।  

কোনো কারণ ছাড়াই জিবিবি পাওয়ারের দাম বাড়ার বিষয়টি দুই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সার্ভেইল্যান্স সফটওয়্যার শেয়ারের লেনদেনগুলো খতিয়ে দেখছে। এখানে কোনো কারসাজি রয়েছে কি না তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইউসিবি ক্যাপিটালের বিনিয়োগকারী রেদুয়ানুর রহমান আতিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুনেছি মালিকপক্ষের লোকজন শেয়ার কিনে দাম বাড়াচ্ছে।

তিনি বলেন, বাজারে গুজব আছে, ফুয়েল (তেল পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন) বেইজড বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো কিছুদিন পর বন্ধ হয়ে যাবে। তাই কোম্পানির উদ্যোক্তারা শেয়ারের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে বেড়িয়ে যাবেন এমন পরিকল্পনা করেছেন। এতে শেয়ারের দাম বাড়ছে।

নাম না প্রকাশ শর্তে রুপালী ব্যাংক সিকিউরিটিজের একজন ট্রেডার ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বুধবার থেকে মার্কেটে গুজব চলছে মালিকপক্ষের লোকজন জিবিবি পাওয়ারের শেয়ার কিনছে। এই কারণে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনছেন।

তিনি বলেন, যদি কোম্পানির লোকজন শেয়ার কেনেও, তবে কোন সময়ে যে তারা সেগুলো বিক্রি করে চলে যাবে তা সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বুঝতেও পারবে না। পড়ে দেখবেন তারাই শেয়ার কিনে ধরা খাবে।

এ বিষয়ে জিবিবি পাওয়ারের কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ সাত্তার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোম্পানির শেয়ারের দাম বৃদ্ধির পেছনে কোনো সংবেদনশীল তথ্য আমাদের কাছে নেই।

তিনি বলেন, ৩০ জুন ২০২২ সমাপ্ত বছরের লভ্যাংশ ঘোষণার সময় এখনো আছে আরও ২ মাস। এখনও আর্থিক প্রতিবেদন অডিট করছে অডিটর। কোম্পানির কী পরিমাণ লাভ হয়েছে সেটাও আমাদের জানা নেই। তাই দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ দেখছি না।

বাজারে গুজব রয়েছে কোম্পানির মালিকদের একটি গ্রুপ শেয়ার কিনে দাম বাড়াচ্ছে? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিজের শেয়ার কেনার ইচ্ছে থাকলে তো উদ্যোক্তা-পরিচালকরা আগে ঘোষণা দেবেন তারপর শেয়ার কেনা বেচা করবেন। এই তথ্য সঠিক না। এটা মিথ্যা।

এ বিষয়ে ডিএসইর প্রধান রেগুলেটরি কর্মকর্তা (সিআরও) খাইরুল বাশার আবু তাহের ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোম্পানিটির শেয়ারের হঠাৎ করে দাম বৃদ্ধির পেছনে কোনো কারসাজি হচ্ছে কি না দেখা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেসব কোম্পানির শেয়ারে দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়ছে সেগুলো দেখা হচ্ছে। কোনো প্রকার কারসাজি হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ১৪৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা উত্তোলন করে জিবিবি পাওয়ার। এই টাকায় ব্যাংক ঋণ পরিশোধের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনার কাজে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তারপর কোম্পানির ব্যাংক ঋণ পরিশোধ হয়নি। বর্তমানে কোম্পানির ৯ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে।

২০২১ সালে শেয়ারহোল্ডারদের ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানিটির ১০ কোটি ১৮ লাখ ৩ হাজার ৫৪৮টি শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে রয়েছে ৩২ শতাংশ শেয়ার। আর বাকি শেয়ার রয়েছে বিনিয়োগকারীদের হাতে। 

এমআই/জেডএস