পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানি নিয়ে আরেকটি বাজার গঠন করতে যাচ্ছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এই বাজারটির নাম দেওয়া হয়েছে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি)। আগামী অক্টোবর মাসে বাজারটি চালু হতে পারে বলে ডিএসই সূত্রে জানা গেছে।

ডিএসইর তথ্য মতে, মূল পুঁজিবাজার কিংবা এসএমই বোর্ডের বিনিয়োগকারীদের মতো এটিবি বাজারের বিনিয়োগকারীদের দেওয়া হবে না মার্জিন ঋণ সুবিধা। বাজারে শেয়ারের দাম ওঠা-নামার সার্কিট ব্রেকার থাকবে ৫ শতাংশ। মূল বাজারের মতো এ বাজার থেকে শেয়ার কেনা যাবে, তবে তিন মাসের আগে শেয়ার বিক্রি করা যাবে না। যদি কেউ শেয়ার বিক্রি করতে চায়, তাহলে শেয়ারের মুনাফার সম্পূর্ণ অর্থ দিতে হবে বিনিয়োগকারী সুরক্ষা তহবিলে।

এমন বিধান রেখে একটি প্রবিধিমালাও তৈরি করা হয়েছে। এই প্রবিধিমালার খসড়া অনুমোদন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যা শিগগিরই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। তারপরই এটিবি বাজার চালু হবে।

আরও পড়ুন>> ডিএসই এমডি তারিক আমিনের পদত্যাগ

এ বিষয়ে ডিএসইর প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা (সিওও) সাইফুর রহমান মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটিবি বোর্ডের সব দায়িত্ব ছিল এমডির (তারিক আমিন ভুঁইয়া) ওপর। কিন্তু তিনি পদত্যাগ করায় বেশ কিছু বিষয়ে একটু সমস্যা হতে পারে। এ কারণে পরিকল্পনা অনুসারে সেপ্টেম্বর মাসে চালু না হলেও অক্টোবর মাসে এটিবি চালু হতে পারে। এই লক্ষ্যে সব কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

সার্কিব বিষয়ে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের পরিকল্পনা ছিল সেপ্টেম্বর মাসেই চালু করার। এই সময়ের মধ্যে ক্রুটিমুক্ত এটিবি গঠন করতে পারলে চালু করব। না হলে কয়েকদিন পরে চালু করব।

ডিএসইর তথ্য মতে, নতুন বাজারটি গঠন করা হয়েছে মূল মার্কেটের বিকল্প বাজারে হিসেবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের চেয়ে উদ্যোক্তা বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এ বাজারে। ফলে বাজারের আইন একটু সহজ করা হয়েছে। 

ডিএসইর কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ওভার দ্যা কাউন্টার মার্কেটের (ওটিসি) কোম্পানিগুলোকে এটিবিতে তালিকাভুক্ত করা হবে। তবে এক্ষেত্রে সব কোম্পানির শেয়ার ইলেকট্রনিক করতে হবে।

যেসব কোম্পানি কিংবা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা সচল, নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করে এবং আন্তর্জাতিক হিসাবমান পদ্ধতি অনুসারে আর্থিক প্রতিবেদন জমা দেবে সেসব প্রতিষ্ঠানই এই বাজারে তালিকাভুক্ত হবে।

জানা যায়, এ বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সব শেয়ার প্রাথমিক শেয়ারহোল্ডার হিসেবে বিবেচনা করা হবে। তলিকাভুক্ত হওয়ার ১ বছরের মধ্যে ১০ শতাংশ শেয়ার বাজারে বিক্রি করতে হবে। পাশাপাশি কোম্পানির সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন উদ্যোক্তা। এর বেশি বিক্রি কররলে পর্ষদ পুনর্গঠন করা হবে।

নিয়ম অনুসারে তালিকাভুক্তির আগে যেসব কোম্পানি পরপর তিন বছর লাভে থাকবে, সেসব কোম্পানি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) বুক বিল্ডিং পদ্ধতির মতো শেয়ারের দাম নির্ধারণের সুযোগ পাবে। যেসব কোম্পানি লাভে থাকতে পারবে না, তাদের শেয়ারের দাম ১০ টাকাই হবে। বাজারের তালিকাভুক্ত হলে লেনদেনের প্রথম দুদিন সার্কিট ব্রেকার থাকবে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৩১ মে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের জানান, সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ডিএসইতে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মতো আরেক পণ্য এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) চালু করা হবে। এ সময় ডিএসইর সিওও সাইফুর রহমান মজুমদার ও প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) জিয়াউল করিম উপস্থিত ছিলেন।

এমআই/জেডএস