দরপতনের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের চমক দেখাচ্ছে দামি কোম্পানি। এগুলো হচ্ছে- ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার, রেকিট বেনকিজার, লিব্রা ইনফিউশন, ম্যারিকো বাংলাদেশ, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ, লিন্ডে বিডি এবং রেনেটা লিমিটেড।

এছাড়াও দামি কোম্পানির তালিকায় রয়েছে দেশি কোম্পানি ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। বাজারে গুঞ্জন রয়েছে ব্রিটিশ অ্যামেরিকান ট্যোকাবোর মতো বহুজাতিক কোম্পানিগুলো পরিশোধিত মূলধন বাড়াবে। আর এই খবরে বিনিয়োগকারীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। তাতে কোনো কারণ ছাড়াই কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বাড়ছে। কোম্পানিগুলো শেয়ারের দাম নূন্যতম ছিল ৭১০ টাকা। আর সর্বোচ্চ দাম দাঁড়িয়েছে পৌনে ৫ হাজার টাকায়।

ইউসিবিএল ক্যাপিটালের বিনিয়োগকারী এনায়েত উল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এসব কোম্পানিগুলো আগের বছরগুলোতে নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। তবে এবার বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেবে। বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিলে বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের সংখ্যা দ্বিগুণ বাড়বে। এ কারণে শেয়ারের দাম হুহু করে বাড়ছে।

তবে দাম বাড়ার পেছনে কোনো সংবেদনশীল তথ্য নেই বলে জানিয়েছে কোম্পানিগুলো। এমনকি কোম্পানিগুলো সমাপ্ত বছরে কী লভ্যাংশ দেবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তও নেয়নি।

এ বিষয়ে রেকিট বেনকিজারে কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ নাজমুল আরেফিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ার কোনো সংবেদনশীল তথ্য নেই। বোনাস লভ্যাংশ দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি বোর্ডের বিষয়, বোর্ড বলতে পারবে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিউচুয়াল ফান্ড, বীমা এবং আর্থিক খাতের শেয়ার ছেড়ে এখন বহুজাতিক দামি কোম্পানিগুলোর শেয়ার কিনছেন বিনিয়োগকারীরা। এর মধ্যে বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম অযৌক্তিক হারে বেড়েছে। এখন বিনিয়োগকারীদের বুঝে-শুনে বিনিয়োগ করতে হবে। না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বহুজাতিক কোম্পানি বুকস অব অ্যাকাউন্টস ভালো। আর্থিক প্রতিবেদনে যথেষ্ট স্বচ্ছতা রয়েছে। তবে এখন এগুলো ওভার প্রাইসিং হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের উচিৎ জেনে বুঝে বিনিয়োগ করা।

ডিএসইর তথ্য মতে, ২০০৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক বছর শেষ হচ্ছে আগামী ৩১ মার্চে। একই সময়ে বার্জার পেইন্টসের আর্থিক বছর শেষ হচ্ছে। এই কোম্পানিটি ২০০৬ সালে তালিকাভুক্ত হয়।

১৯৮৭ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানি রেকিট বেনকিজারের আর্থিক বছর সমাপ্ত হয়েছে গত ৩১ ডিসেম্বর। বুধবার (১০ মার্চ) কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৭৫০ টাকা। 

গত ৩১ ডিসেম্বর ইউনিলিভারেরও আর্থিক বছর শেষ হয়েছে। ১৯৭৮ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির শেয়ারের দাম আগের দিনের চেয়ে ৭১ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৯৬৩ টাকা হয়েছে। 

বাকি কোম্পানিগুলোর আর্থিক বছর শেষ হবে আগামী জুনে। সূত্র মতে, বহুজাতিক কোম্পানি রেকিড বেনকিউজারের বর্তমান পরিশোধিত মূলধন ৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা। কোম্পানিটি ২০১৯ সালে বিনিয়োগকারীদের ১২৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। গত এক মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম ৪ হাজার ৪৬৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৭৯৬ টাকায়। এর মধ্যে আজ (বুধবার) বেড়েছে ৩৩ টাকা।

ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার লিমিটেডের পরিশোধিত মূলধন ১২ কোটি টাকার বেশি। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালে শেয়ার হোল্ডারদের ৫৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। গত এক মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম ৩ হাজার ১৪১ টাকা থেকে সর্বোচ্চ উঠেছে ৩ হাজার ৩৪০ টাকায়। এর মধ্যে আজ দাম বেড়েছে ৭১ টাকা।

ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডে পরিশোধিত মূলধন ৩১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। গত এক মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম ২ হাজার ৮৮ টাকা থেকে ২ হাজার ১৪৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এর মধ্যে আজ বেড়েছে ৮টার বেশি।

এছাড়াও বার্জার পেইন্ট বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিশোধিত মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২৯৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। আজ (বুধবার) কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে ১০৯ টাকা। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বড় মূলধনী এই কোম্পানিগুলোর দাম বাড়ায় বুধবার বড় দরপতন থেকে রক্ষা পেয়েছে পুঁজিবাজার।

এদিকে বুধবার (১০ মার্চ) ব্যাংক, বীমা-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমেছে। আর তাতে সূচক, লেনদেন ও বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে।

এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৭ দশমিক ৭১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৬৩ পয়েন্টে। শরিয়াহভিত্তিক সূচক ডিএসইএস ২ দশমিক ২৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৬৩ পয়েন্টে। এছাড়াও ডিএস ৩০ সূচক ১৫ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৪৯ পয়েন্টে।

এদিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৮৭৯ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের দিনের চেয়ে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। এদিন লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ৬৪টির, কমেছে ১৭৩টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১১৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।

দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৮৩ দশমিক ০৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ১৭৩ দশমিক ৬৭ পয়েন্টে। লেনদেন হওয়া ২২৬টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৫০টির, কমেছে ১১৬টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ৬০টির। মোট লেনদেন হয়েছে ৬৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

এমআই/এইচকে