বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ড. রুমানা ইসলাম বলেছেন, দেশের সরকারি কোম্পানিগুলো কস্ট ও কমপ্লায়েন্সের কারণে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চায় না। তারা চায় কম আইন মেনে কীভাবে বেশি মুনাফা অর্জন করা যায়।

শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশে (আইডিইবি) বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম) আয়োজিত ‘সরকারি মালিকানার কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তি : বর্তমান অবস্থা ও করণীয়’ বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অর্থসূচক আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপো-২০২৩’ শীর্ষক পুঁজিবাজার মেলার দ্বিতীয় দিনে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

ড. রুমানা ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজার খুবই সেনসিটিভ জায়গা। যেসব বিষয় অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে তা পুঁজিবাজারকেও প্রভাবিত করে। করোনা অতিমারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যেমন বিশ্বের অর্থনৈতিক পরাশক্তিগুলোকে প্রভাবিত করেছে তেমনি আমাদের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করেছে। যদিও এসব পরিস্থিতি উত্তরণে কিছুটা সময় লাগবে তারপরও আমাদের দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষায়িত জ্ঞান দরকার। আমরা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছি।

বিআইসিএমের নির্বাহী প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. মাহমুদা আক্তার সেশন চেয়ারে সেমিনারে প্যানেল আলোচক ছিলেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মাদ রেজাউল করিম, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান এবং দৈনিক প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি ফখরুল ইসলাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দিন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে মোহাম্মাদ রেজাউল করিম বলেন, বর্তমান কমিশন প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে কোম্পানিগুলোর নন-কমপ্লায়েন্স অনেকাংশে কমে আসছে। কমিশন কমপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ছাড় দিচ্ছে না। তবে এক্ষেত্রে জনবল স্বল্পতার কারণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কিছুটা সময় লেগে যাচ্ছে।

ছায়েদুর রহমান বলেন, সরকারি কোম্পানিগুলো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকায় আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে পুঁজিবাজারে আসতে বেগ পেতে হয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় উদ্যোগী হলে কোম্পানিগুলোও পুঁজিবাজারে আসতে উৎসাহিত হবে।

তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে কমপ্লায়েন্স করতে হবে বলে অনেক সরকারি কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে চায় না। তবে সরকারি কোম্পানি পুঁজিবাজারে এলে তাদের কমপ্লায়েন্স বেড়ে যাবে; সেখানে সুশাসন নিশ্চিত হবে।

তিনি বলেন, সরকারি কোম্পানিকে পুঁজি সংগ্রহের ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে প্রণোদনা না দিয়ে বরং পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করতে হবে।

ফখরুল ইসলাম বলেন, সরকারি কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। সরকার ঠিকভাবে চাইলে সরকারি ভালো কোম্পানি ঠিকই বাজারে আসবে।

অধ্যাপক ড. মাহমুদা আক্তার বলেন, সাধারণ মানুষকে সঠিক বিনিয়োগ শিক্ষা দেওয়ার জন্য বিআইসিএম নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিআইসিএম বিনিয়োগকারীদের তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি প্রায়োগিক শিক্ষা প্রদান করে থাকে।

তিনি বলেন, বৃহৎ অর্থায়নের জন্য পুঁজিবাজার অপরিহার্য। সরকারি বৃহৎ কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে।

তিন দিনব্যাপী এই মেলাতে বিএসইসি, বিআইসিএম, শীর্ষ স্থানীয় ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, তালিকাভুক্ত কোম্পানিসহ পুঁজিবাজারের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার অংশগ্রহণ করেছে।

এমআই/এসএসএইচ/