দেশের দুই পুঁজিবাজারে প্রায় এক যুগ পর তালিকাভুক্ত হতে যাচ্ছে ব্যাংক খাতের কোম্পানি এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংক লিমিটেড। আগামী সোমবার (২২ মার্চ) সকাল ১০টায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) একযোগে ব্যাংকটির শেয়ারের লেনদেন শুরু হবে।

বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, লেনদেন শুরুর লক্ষ্যে গত মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) কোম্পানিটি তাদের শেয়ারহোল্ডারদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবে শেয়ার পাঠিয়েছে। এর আগে গত ৩ মার্চ কোম্পানির শেয়ারের লটারি অনুষ্ঠিত হয়। কোম্পানিটি এন ক্যাটাগরিতে ডিএসইতে লেনদেন করবে। কোম্পানি কোড হবে ‘এনআরবিসি ব্যাংক’(NRBC Bank)।

আইপিওর ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে ১২ কোটি সাধারণ শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ১২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে ব্যাংকটি। প্রতিটি শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ টাকা। 

১২০ কোটি টাকার শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য বিতরণ করা হয় ৬০ শতাংশ বা ৭২ কোটি টাকার শেয়ার। বাকি ৪০ শতাংশ শেয়ার বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের। সাধারণ বিনিয়োগকারী ক্যাটাগরির মধ্যে বাংলাদেশিদের জন্য বরাদ্দ ৪০ শতাংশ বা ৪৮ কোটি টাকা। এই ৪৮ কোটি টাকার শেয়ার পেতে আবেদন করেন ১০ লাখ ৪৩ হাজার ৩০৩ জন। তাদের আবেদনের বিপরীতে জমা হয়েছে ৫২১ কোটি ৭০ লাখ ৫০ হাজার টাকা, যা কোম্পানির জন্য বরাদ্দের ১০ দশমিক ৮৬ গুণ বেশি।

গত বছরের ১৮ নভেম্বর বিএসইসির অনুমোদন পায় এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক। চলতি মাসের শুরুতে ব্যাংকটি আইপিওর মাধ্যমে শেয়ার ইস্যু ও সংক্ষিপ্ত প্রসপেক্টাস প্রকাশের জন্য কমিশনের কাছ থেকে সম্মতিপত্র পায়। ব্যাংকটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল এশিয়ান টাইগার ক্যাপিটাল পার্টনার্স ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও এএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেড। ব্যাংকটির নিরীক্ষক হিসেবে রয়েছে কেএম হাসান অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস।

সর্বশেষ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ১৩ টাকা ৮৬ পয়সা। গত পাঁচ বছরের ভারিত গড় হারে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে এক টাকা ৫৫ পয়সা।

সর্বশেষ হিসেবে, গত বছর শেষে ব্যাংকটির আমানত দাঁড়িয়েছে নয় হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। ঋণের পরিমাণ সাত হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। ব্যাংকটির গত বছরের মুনাফা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আগের বছর প্রকৃত মুনাফা ছিল ১১৫ কোটি টাকা।

ব্যাংকটি ২০১৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়ে ওই বছরের ২ এপ্রিল কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে ব্যাংকটির ৮৩টি শাখা, বিআরটিএ, ভূমি রেজিস্ট্রেশন অফিসের বুথসহ ৪০০টি উপশাখা ও ৫৮৯টি এজেন্ট রয়েছে।

ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল বলেন, দীর্ঘ এক যুগ পর কোনো ব্যাংক পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত হচ্ছে। শেয়ার পাওয়ার জন্য বিপুল সংখ্যক আবেদন পড়েছে। এটি ব্যাংকের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার প্রতিফলন। আমরা তাদের আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অক্ষুণ্ন রাখব। নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় সার্বিক সহযোগিতার বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি, ডিএসই ও সিএসইর প্রতি ধন্যবাদ জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের সম্পদের মূল মালিক আমানতকারীরা। তাই ব্যাংকটিতে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করতে পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত হতে যাচ্ছি। ব্যাংকটির মূল লক্ষ্য সাধারণ মানুষকে সার্বিক সেবার আওতায় আনা। এজন্য শাখানির্ভর ব্যাংকিং ব্যবস্থার পাশাপাশি উপশাখা, বুথ ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ব্যাপকহারে প্রসার ঘটাচ্ছি। এরইমধ্যে সারাদেশের ৫০০টিরও বেশি স্থানে আমরা সেবা দিচ্ছি।

এমআই/জেডএস