গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) সূচকের বড় পতনের পর চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববারও (২১ মার্চ) পুঁজিবাজারে বড় পতন হয়েছে।

এদিন ব্যক্তি বড় বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপে প্রকৌশল, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতসহ ১২টি খাতের সবকটি কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। কমেছে ব্যাংক, বিমা এবং আর্থিক খাতের বেশিরভাগ শেয়ারের দামও।

তাতে দিন শেষে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক কমেছে ৮৫ পয়েন্ট। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক কমেছে ২৮৪ পয়েন্ট। সূচকের পাশাপাশি কমেছে লেনদেন ও বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।

এ নিয়ে টানা তিন কার্যদিবস পুঁজিবাজারে দরপতন হলো। এতে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি উধাও হয়েছে সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা। এমন পরিস্থিতিতে আরও দরপতনের শঙ্কায় চরম হতাশায় দিন কাটছে বিনিয়োগকারীদের। তারাও বাজারের প্রতি আর আস্থা ধরে রাখতে পারছেন না। শঙ্কার মধ্যেই তারা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হঠাৎ করে করোনার প্রভাব বাড়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্য গুজব ছড়িয়ে পড়েছে যে, দেশে আবারও লকডাউন আসতে পারে। এতে পুঁজিবাজারসহ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়বে। তাই হাতে নগদ অর্থ রাখার জন্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রির প্রবণতা দেখা গেছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের চেয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বড় বিনিয়োগকারীরা বেশি শেয়ার বিক্রি করে প্যানিক সৃষ্টি করছেন। যে কারণে আবারও বেসামাল হচ্ছে পুঁজিবাজার।

ডিএসইর তথ্যমতে, রোববার সকালে সূচক পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শুরু হয়। বেলা ১১টায় ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স শেয়ার বিক্রি চাপে কমে ৮১ পয়েন্ট। এরপর শুরু হয় মিশ্র প্রবণতা, যা অব্যাহত ছিল দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত। এরপর শেয়ার বিক্রির চাপের মধ্যে বেলা সোয়া ১টায় সূচক প্রায় ১০০ পয়েন্ট কমে যায়। তারপর দিনের বাকি লেনদেন হয়েছে সূচকের ওঠানামায়।

দিন শেষে ডিএসএক্স সূচক আগের দিনের তুলনায় ৮৪ দশমিক ৯১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৩৪৯ পয়েন্টে। শরিয়াহভিত্তিক সূচক ডিএসইএস ২১ দশমিক ১৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২২৬ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএস-৩০ সূচক ৩৯ দশমিক ৩১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৩৪ পয়েন্টে।

ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৬১৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৬৮৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ৩১টির, কমেছে ২৩৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৭৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।

এ বাজারে দাম বাড়ার শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হচ্ছে- রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স, জনতা ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্স, স্কয়ার টেক্সটাইল, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, আল আরাফাহ ব্যাংক, জাহিন টেক্সটাইল এবং নিটল লিমিটেড।

লেনদেনের শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হচ্ছে- বেক্সিমকো, রবি আজিয়াটা, বেক্সিমকো ফার্মা, লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স, লাফার্জহোলসিম, রহিমা ফুড, সামিট পাওয়ার, জিবিবি পাওয়ার, ব্রিটিশ অ্যামেরিকান ট্যোবাকো এবং ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২৮৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৪৮৬ পয়েন্টে। লেনদেন হওয়া ২৩১ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ১৭টির, কমেছে ১৬৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৮টির। এ বাজারে মোট লেনদেন হয়েছে ২৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এর আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ২৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

এমআই/জেডএস/এমএমজে