প্রতীকী ছবি

অনুমোদন পাওয়ার আগেই অফিস করছেন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা খাতের কোম্পানি ইসলামী ইনস্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রস্তাবিত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আব্দুল খালেক মিয়া। অবৈধ উপায়ে করছেন বিমা ব্যবসাও। তিনি দায়িত্ব পালনের শুরু থেকেই কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছেন, এমনকি কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের হুমকিও দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এসব অভিযোগের কথা উল্লেখ করে গত ১৭ জুলাই চিঠি পাঠানো হয় বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যানের কাছে। চিঠিতে বার্তা প্রেরকের নামের জায়গায় ‘ইসলামী ইনস্যুরেন্স বাংলাদেশ’ উল্লেখ ছিল।

প্রতিষ্ঠানটিতে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোম্পানিতে এখন যা হচ্ছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। পরিচালনা পর্ষদে তার নাম সিইও হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু আইডিআরএ এখনো তাকে অনুমোদন দেয়নি। তারপরও তিনি অফিস করছেন। নিয়োগের অনুমোদন পাওয়ার আগেই যে খারাপ আচরণ শুরু করেছেন, নিয়োগ পেলে তা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবেন।

এ বিষয়ে প্রস্তাবিত সিইও আব্দুল খালেক মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমি এখন অফিস করছি। নামাজের সময় হয়েছে। বেশি কথা বলতে পারব না।’

আরও পড়ুন : মিটিং প্রতি ২ লাখ টাকা ঘুষ চান আইডিআরএর সদস্য কামরুল

অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে আব্দুল খালেক মিয়া বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, এগুলো সম্পূর্ণ অসত্য। বাংলাদেশে অনেক কিছু বলে মানুষ, এটা তাদের স্বভাব। যারা এটা করছে তাদের প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আব্দুল খালেক মিয়াকে গত ২ এপ্রিল কোম্পানির সিইও হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। এরপর তার কাগজপত্র আইডিআরএতে দেওয়া হয়। কিন্তু আইডিআরএ থেকে এখনো তাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। সেই অনুমোদন পাওয়ার আগেই সিইও হিসেবে কার্যক্রম চালাচ্ছেন তিনি।

চিঠিতে খালেকের বিরুদ্ধে সাত অভিযোগ

১. আব্দুল খালেক মিয়া কথায় কথায় কর্মীদের ছাঁটাই করার হুমকি দিচ্ছেন। যা শ্রম, বিমা ও সরকারি আইনের পরিপন্থি। এতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অফিসের দৈনন্দিন কাজেও ব্যাঘাত ঘটছে।

২. কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন এবং কথায় কথায় খারাপ ভাষা প্রয়োগ করেন যা ক্ষমতার অপব্যবহারের শামিল।

৩. শ্রম, বিমা ও সরকারি আইন অমান্য করে সবার জন্য কর্মঘণ্টা বৃদ্ধি করেছেন। সরকারি সার্কুলারে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অফিস সময় নির্ধারিত থাকলেও তিনি কর্মঘণ্টা ১ ঘণ্টা বাড়িয়ে ৬টা পর্যন্ত করেছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, এটা মানসিক অত্যাচারের শামিল।

৪. কোম্পানি পরিচালনার জন্য সবধরনের আইন অমান্য করে অবৈধ কাজে উৎসাহ দেন।

৫. আব্দুল খালেক মিয়া ইসলামী ইনস্যুরেন্সে যোগদানের আগে আইডিআরএ’র নিয়ম অনুযায়ী কমিশন প্রদান করা হতো। কিন্তু তিনি যোগদানের পর তার ইচ্ছামতো কমিশন প্রদান করছেন। যা আইডিআরএ’র নিয়ম বহির্ভূত।

৬. তার পূর্ববর্তী কর্মস্থল সোনার বাংলা ইনস্যুরেন্স থেকে দুর্নীতির দায়ে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

৭. আব্দুল খালেক মিয়া সোনার বাংলা ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে ১৬ কোটি টাকা বাকি ব্যবসা করেছেন। এরপর ইসলামী ইনস্যুরেন্সে যোগদান করে প্রায় ২ কোটি টাকা বাকি ব্যবসা করেছেন। যা আইডিআরএর নিয়ম-শৃঙ্খলার পরিপন্থি।

আরও পড়ুন : ঋণও নেই আমানতও নেই, মুনাফা কমেছে ব্যাংক খাতে

উপরোক্ত বিষয় বিবেচনা করে ইসলামী ইনস্যুরেন্স বাংলাদেশের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তার হাত থেকে রক্ষা করে তাকে অনুমোদন না দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।

কী বলছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ

জানতে চাইলে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি শুনেছি, খতিয়ে দেখছি। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 আব্দুল খালেক মিয়াকে গত ২ এপ্রিল কোম্পানির সিইও হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। এরপর তার কাগজপত্র আইডিআরএতে দেওয়া হয়। কিন্তু আইডিআরএ থেকে এখনো তাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। সেই অনুমোদন পাওয়ার আগেই সিইও হিসেবে কার্যক্রম চালাচ্ছেন তিনি।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে ইসলামী ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

আইডিআরএতে সিইও অনুমোদনের প্রস্তাব এখনো প্রক্রিয়াধীন

সূত্র জানায়, আব্দুল খালেক মিয়াকে ইসলামী ইনস্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে চূড়ান্ত নিয়োগ দিতে তার স্নাতকোত্তর সনদ সঠিক কি না তা যাচাই করছে আইডিআরএ। এজন্য গত ২৪ জুলাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে আইডিআরএ।

আইডিআরএ থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ইসলামী ইনস্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেডে আব্দুল খালেক মিয়ার নাম আইডিআরএর কাছে প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যমান বিমা আইন ও প্রবিধানমালা মোতাবেক আবেদনপত্রের সঙ্গে দাখিলকৃত তথ্যাদি যাচাই-বাছাইয়ের অংশ হিসেবে প্রস্তাবিত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার শিক্ষাগত যোগ্যতার মাস্টার্সের সার্টিফিকেট/সনদ যাচাই করা প্রয়োজন।

প্রস্তাবিত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল খালেক মিয়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৬ সালে ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তার সার্টিফিকেটে বর্ণিত রোল নং-পি-৩১১৭০, রেজি নং- ৫৬৬৫২, সেশন ১৯৯৫ উল্লেখ রয়েছে। এই সনদ ঠিক আছে কি না তা আইডিআরএকে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

বুধবার (৯ আগস্ট) এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো উত্তর আসেনি।

এমআই/এসকেডি