করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ যেন পুঁজিবাজারের জন্য সুখবর বয়ে এনেছে। নানা শঙ্কা ও গুজব শেষে বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) লেনদেন শুরু পর সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের নজর ছিল পুঁজিবাজারে।

এতদিন অফিস-আদালত কিংবা কর্মব্যস্ততার কারণে নিয়মিত বাজারটির খোঁজ-খবর নিতে পারেননি অনেকে। তাই নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে বিনিয়োগকারীরা মনোযোগ দিয়েছেন পুঁজিবাজারের লেনদেনে। ফলে মোবাইল অ্যাপসে লেনদেন বেড়েছে। পাশাপাশি মোবাইল ফোনে ট্রেডারদের সঙ্গে কথাও বলছেন অনেকে। এছাড়া নতুন করে শেয়ার কেনার জন্য উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান খুঁজছেন তারা, এসবের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাজারে। ফলে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বৃহস্পতিবার দেশের উভয় পুঁজিবাজারে উত্থান হয়েছে। বেড়েছে সূচক ও বেশির ভাগ শেয়ারের দাম।

চলমান নিষেধাজ্ঞার দ্বিতীয় দিনে বিমা খাতের শেয়ারের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে সকাল ১০টায় সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যদিয়ে লেনদেন শুরু হয়। মাত্র ১৮ মিনিটে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক বাড়ে ৩০ পয়েন্ট। এরপর বিমা খাতের শেয়ার বিক্রির হিড়িক পড়ে। কমতে শুরু করে সূচক। যা অব্যাহত ছিল সকাল ১০টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত। তারপর উল্টো চিত্র দেখা দেয় মিউচুয়াল ফান্ড, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, বস্ত্র খাতের শেয়ারের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে। ফলে লেনদেন শেষ হয় সূচকের উত্থানের মধ্যদিয়ে।

এদিন মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ দেখা যায় সবচেয়ে বেশি। যার কারণে অধিকাংশ ফান্ডের দাম বেড়েছে ৫-৯ শতাংশ হারে। ফলে দাম বাড়ার শীর্ষে উঠে আসে এই খাতের কোম্পানির ইউনিট ও শেয়ার। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি মিউচুয়াল ফান্ডগুলো আইপিওতে অনেক শেয়ার পেয়েছে। এগুলো বিক্রি করেছে মুনাফায়। ফলে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করলে ভালো মুনাফা পাওয়া যাবে। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের বিশেষ আকর্ষণ মিউচুয়াল ফান্ডে।

লঙ্কা বাংলা সিকিউরিটিজের ট্রেডার আসাদুজ্জামান হাসিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক দিন পর আজ ক্লায়েন্টদের ফোন পেলাম। মনে হচ্ছে পুঁজিবাজার ভালো হচ্ছে। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা খোঁজ খবর নিচ্ছেন, কোন শেয়ার কিনলে ভালো হবে। হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দেবেন কি না জানতে চাইছেন।

বাজার চিত্র
বুধবার ছুটির দিন থাকায় পুঁজিবাজারে লেনদেনও বন্ধ ছিল। বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইতে সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে। এ সময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক আগের দিনের চেয়ে ৫১ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৩১০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএস-৩০ সূচক বেড়েছে ২৯ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক বেড়েছে ১০ পয়েন্ট।

ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫৫৬ কোটি ৪২ লাখ ১২ হাজার টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৫১১ কোটি ৯৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ২১৬টির, কমেছে ৯০টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৯টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।

ডিএসইতে দাম বাড়ার শীর্ষে থাকা ১০টির মধ্যে সাতটি মিউচুয়াল ফান্ড। এগুলো হলো- এসইএমএলআইবিবিএলএস ফান্ড, বিএপিএমবিডিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড, এমইএমএলএলইসি মিউচুয়াল ফান্ড, লঙ্কা বাংলা ফাইনান্স, সিএপিএমআইবিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড, আইএফআইসি মিউচুয়াল ফান্ড, বিডি ফাইনান্স, ফাস্ট প্রাইম ফাইনান্স মিউচুয়াল ফান্ড, এক্সিম ফাস্ট মিউচুয়াল ফান্ড ও মাইডাস ফাইনান্স লিমিটেড।

লেনদেনের শীর্ষে রয়েছে- বেক্সিমকো, বিডি ফাইন্যান্স, রবি আজিয়াটা, লঙ্কা বাংলা ফাইনান্স, এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্স, লাফার্জহোলসিম, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স ও সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক আগের দিনের চেয়ে ১৮৭ পয়েন্ট বেড়ে ১৫ হাজার ৩৮১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এদিন সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১৯ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৫ কোটি ৬৩ লাখ ৩৭ হাজার টাকা।

লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৪৯টির, কমেছে ৬১টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।

এমআই/এসএসএইচ