ডিএসই ও সিএসই

প্রাণঘাতী করোনার ভেতরও কিছুটা স্বস্তির মধ্য দিয়ে বছর পার করেছে দেশের পুঁজিবাজার। ফলে দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হয়েছেন। নতুন করে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী বাজারে আসছেন। আর তাতে লেনদেন আগের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এসবের ফলে সরকার পুঁজিবাজার থেকে গত বছরে রাজস্ব আয় পেয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। 

দুই স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে ২০২০ সালে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১৮৫ কোটি ৩ লাখ ২২ হাজার ৫১ টাকা। আর দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) থেকে রাজস্ব পেয়েছে ৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ দুই বাজার থেকে সরকার রজস্ব পেয়েছে ১৯৩ কোটি টাকার বেশি। যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

• করোনার কারণে ২ মাস পুঁজিবাজার বন্ধ থাকার পরও ২০২০ সালে ডিএসইতে ২০৮ দিন লেনদেন হয়। তাতে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯৮১ কোটি ২২ লাখ টাকা। যা আগের বছরের চেয়ে ২১ হাজার ১৫৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বেশি।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্যান্য বছরগুলোর তুলনায় বিদায়ী বছরের ডিএসই ও সিএসইতে লেনদেন বেড়েছে। বিনিয়োগকারী, উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির লেনদেনের ওপর থেকে সরকার এই রাজস্ব পেয়েছে। লেনদেন যত বেশি হবে সরকার এ খাত থেকে আরও বেশি রাজস্ব পাবে। তাই সরকারের উচিৎ সঠিক পলিসি ব্যবহার করে পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখা।

ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুঁজিবাজার যত ভালো থাকবে লেনদেন তত বাড়বে। সরকার এ খাত থেকে তত বেশি রাজস্ব পাবে।

তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জে কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখতে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন পুরোদমে কাজ করছে। এরই মধ্যে তার কিছুটা প্রতিফলও দেখা যাচ্ছে। কমিশন প্রথমে হতাশাগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা আনার চেষ্টা করছেন। দ্বিতীয়ত, তারল্য সংকট দূর করার চেষ্টা করছে।

• গত বছরে সিএসই থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে ট্রোকহোল্ডাদের লেনদেনে থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে সাড়ে ছয় কোটি টাকা। আর উদ্যোক্তা-পরিচালকের শেয়ার বিক্রি এবং হস্তান্তর বাবদ রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা।

তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা যাতে তাদের হারানো পুঁজি ফিরে পান সে লক্ষ্যে বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে থাকা কোম্পানিগুলোর পর্ষদ পুনর্গঠন করা হচ্ছে। যেসব কোম্পানির পরিচালকদের নূন্যতম ২ শতাংশ শেয়ার নেই তাদের পরিচালক পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আবার যেসব কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকের যৌথভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার নেই সেগুলোতে নতুন পর্ষদ গঠন করছে কমিশন। বাজারে ভালো ভালো কোম্পানির আইপিও আনার চেষ্টা করছে।

তিনি আরও বলেন, লেনদেন বাড়ানোর জন্য এরই মধ্যে নতুন নতুন ফান্ড ক্রিয়েট করছে কমিশন। ফান্ডগুলো আসতেও শুরু করেছে। ফলে ২০১০ সালের মহাধসের পর পুঁজিবাজারে সর্বোচ্চ লেনদেনও হচ্ছে। এই অবস্থা ধরে রাখতে পারলে আগামীতে সরকার এ খাত থেকে আরও বেশি রাজস্ব পাবে বলে আশা করেন বিএসইসির এই মুখপাত্র।

ডিএসইর তথ্য মতে, করোনার কারণে ২ মাস পুঁজিবাজার বন্ধ থাকার পরও ২০২০ সালে ২০৮ দিন লেনদেন হয়। তাতে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯৮১ কোটি ২২ লাখ টাকা। যা আগের বছরের চেয়ে ২১ হাজার ১৫৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বেশি। ফলে এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ১৮৫ কোটি ৩ লাখ ২২ হাজার ৫১ টাকা।

২০১৯ সালে মোট লেনদেনের হয়েছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৮২১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। তার আগের বছর ২০১৮ সালে লেনদেন হয়েছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫৯১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত তিন বছরের মধ্যে ২০২০ সালে লেনদেন বেশি হয়েছে। আর লেনদেন বেশি হওয়ায় সরকার এ খাত থেকে রাজস্ব আয় বেশি পেয়েছে।

পুঁজিবাজার থেকে সরকার ২ প্রকারের কর বাবদ রাজস্ব পায়। এরমধ্যে প্রথম হল- এসইসি-৫৩ বিবিবি অর্থাৎ ডিএসইর ট্রেক হোল্ডারদের দৈনিক লেনদেনের ওপর দশমিক ০৫ শতাংশ কর। এ খাত থেকে ২০২০ সালে রাজস্ব আয় হয়েছে ১৩৪ কোটি ৯৬ লাখ ১৯ হাজার ৫৫৮ টাকা।

আর বিএসইসির রুলস ৫৩-এম অনুসারে, স্পন্সর শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার কেনা-বেচা বাবদ লেনদেন ও শেয়ার হস্তান্তর থেকে ৫ শতাংশ হারে কর বাবদ রাজস্ব আয় হয়েছে ৫০ কোটি ৭ লাখ ২ হাজার ৪৯৩ টাকা। সব মিলে ডিএসই থেকে মোট রাজস্ব পেয়েছে ১৮৫ কোটি ৩ লাখ ২২ হাজার ৫১ টাকা। ডিএসই এই টাকা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) জমা দিয়েছে।

গত বছর সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আয় হয়েছে ডিসেম্বর মাসে। ডিসেম্বর মাসে ডিএসইর মাধ্যমে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ডিসেম্বরে শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন থেকে ২১ কোটি ৫৯ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। আর উদ্যোক্তা পরিচালক বা প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রয় থেকে আদায় হয়েছে ১২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এ হিসেবে ডিসেম্বর মাসে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা। নভেম্বরে শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন থেকে ১৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়। আর উদ্যোক্তা পরিচালক বা প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রয় থেকে আদায় হয় ৮৭ লাখ টাকা। এ হিসেবে নভেম্বর মাসে মোট রাজস্ব আদায় হয় ১৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা বা ৮৭ শতাংশ।

গত বছরে দেশের অপর বাজার সিএসই থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে ট্রোকহোল্ডাদের লেনদেনে থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে সাড়ে ছয় কোটি টাকা। আর উদ্যোক্তা-পরিচালকের শেয়ার বিক্রি এবং হস্তান্তর বাবদ রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। 

এমআই/এইচকে