বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্রস্তাবিত মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা।

বুধবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর মতিঝিলের পুরাতন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ভবনের সামনে শতাধিক বিনিয়োগকারী জড়ো হয়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন।

মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগকারী ঐক্য ফ্রন্ট ও বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টরস অ্যাসোসিয়েশন যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করে।

বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, বিএসইসির বিভিন্ন অবিবেচক ও একতরফা সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ‘মার্জিন বিধিমালা ২০২৫’ এবং ‘মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালা ২০২৫’–এ এমন সব বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা বিনিয়োগকারী, মিউচুয়াল ফান্ড খাত এবং সার্বিকভাবে পুঁজিবাজারের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।

মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগকারী ঐক্য ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল হক জুয়েল বলেন, বিএসইসি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা উপেক্ষা করে একের পর এক কঠোর নীতি নিচ্ছে। নতুন মার্জিন ও মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালায় এমন কিছু শর্ত সংযোজন করা হয়েছে, যা বাজারে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। কোনো নীতিমালা প্রণয়নের আগে কমিশন সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা পর্যন্ত করছে না। এরই ফলে বাজার থেকে ইতোমধ্যে হাজার হাজার কোটি টাকার মার্কেট ক্যাপিটাল উধাও হয়েছে এবং অসংখ্য বিনিয়োগকারী দেউলিয়া হয়ে পড়েছেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা বিএসইসিকে আহ্বান জানাচ্ছি- বাজারের বর্তমান সংকট গভীরভাবে পর্যালোচনা করুন, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসুন এবং বাস্তবসম্মত, বিনিয়োগকারীবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন করুন।

একজন ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারী অভিযোগ করে বলেন, কঠোর প্রভিশনিং নীতির কারণে মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগকারীরা টানা দুই বছর কোনো ডিভিডেন্ড পাচ্ছেন না। এখন আবার কমিশন এসব ফান্ড বন্ধ করার উদ্যোগ নিচ্ছে। অথচ এগুলো আমাদের নিজস্ব বিনিয়োগ করা ফান্ড, যা আমরা ঝুঁকি বুঝে বিনিয়োগ করেছি। বিএসইসির এসব ফান্ড জোরপূর্বক বন্ধ করার কোনো অধিকার নেই। অতীতে এসব ফান্ড থেকে আমরা ভালো ডিভিডেন্ড পেয়েছি, কিন্তু কমিশনের অযৌক্তিক সিদ্ধান্তে সেই পথ বন্ধ হয়ে গেছে।

আরেকজন বিনিয়োগকারী বলেন, নতুন মার্জিন রুলসে মার্জিন ঋণ কেবল ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ারের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। কোনো শেয়ার ‘বি’ বা ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নেমে গেলে দ্রুত বিক্রির বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। এমনকি দাম কমে গেলে জোরপূর্বক বিক্রির বিধানও রাখা হয়েছে। এই বিধানগুলো বাস্তবায়িত হলে বিনিয়োগকারী ও ব্রোকারেজ হাউস উভয়েই মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে।

ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক শেখ মেহেদী ফারহান বলেন, বিনিয়োগকারী রিফর্মের নামে বিএসইসির কয়েকজন কর্মকর্তা এমন উদ্ভট নীতিমালা প্রণয়ন করছেন, যা লক্ষাধিক বিনিয়োগকারীর ক্ষতি ডেকে আনবে। আমরা শিশু নই—নিজেদের ভালো-মন্দ বুঝি। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের নাম ভাঙিয়ে আসলে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করছে কমিশন। তিনি বলেন, আগে বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনুন, তারপর সংস্কারের কথা বলুন।

বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মানিক বলেন, বিএসইসির খসড়া মার্জিন রুলসে শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে। এর কারণে বড় বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে সরে যাচ্ছেন। আমরা সম্মিলিতভাবে আমাদের দাবি আদায়ের আন্দোলন চালিয়ে যাব।

বিক্ষোভকারীরা বিএসইসির বিতর্কিত বিধিমালা পুনর্বিবেচনার দাবি জানান এবং বিনিয়োগকারীদের মতামত নিয়ে নতুন নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানান।

এমএমএইচ/বিআরইউ