পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মেঘনা সিমেন্ট পিএলসি ভয়াবহ সংকটের মধ্যে পড়েছে। ঋণ খেলাপি হওয়ায় কোম্পানিটি লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খুলতে পারছে না। এতে বন্ধ হয়ে গেছে কাঁচামাল আমদানি। ফলে ধারাবাহিক লোকসানের বেড়াজালে বন্দি হচ্ছে কোম্পানিটি। টানা দুই বছর লোকসানের শেষ বছরে লোকসান বেড়েছে ৫ গুণ। এমন পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে কোম্পানিটি তার ব্যবসা পরিচালনার কার্যক্রম ঠিকভাবে চালিয়ে নিতে পারবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে নিরীক্ষক।

মেঘনা সিমেন্টের গত ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় নিয়োজিত নিরীক্ষক এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে নিরীক্ষক তার মতামত জানিয়েছেন।

নিরীক্ষকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কোম্পানির পণ্য বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। কোম্পানিটি আগের অর্থবছরের ১৮৬ কোটি ৯০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করলেও আলোচিত অর্থবছরে মাত্র ২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করতে পেরেছে।

নিরীক্ষক জানিয়েছে, কোম্পানিটি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতায় খেলাপির তালিকাভুক্ত হয়েছে। এতে সিমেন্ট উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানির এলসি খুলতে পারছে না। ফলে কাঁচামালের অভাবে কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। তবে কারখানায় অন্য কোম্পানির পণ্য (সিমেন্ট) উৎপাদনের মাধ্যমে ব্যবসা সচল রাখা হয়েছে। এই অবস্থায় কোম্পানিটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সক্ষমতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নিরীক্ষক।

আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি লোকসান ৩৬ টাকা ৫৮ পয়সা হারে নিট লোকসান করেছে ১১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি লোকসান ৭ টাকা ১৬ পয়সা হারে নিট লোকসান হয়েছিল ২২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কোম্পানির নিট লোকসান বেড়েছে ৯২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বা ৪১১ শতাংশ (৫ দশমিক ১১ গুণ)।

লোকসানের কারণে কোম্পানিটি আলোচিত দুই অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ শতাংশ নগদের পাশাপাশি ৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দেয় কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান ২১ টাকা ৯০ পয়সা হারে নিট লোকসান হয়েছে ৬৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সে হিসেবে ২০২৩-২৪, ২০২৪-২৫ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাস মিলিয়ে (মোট ২৭ মাসে) কোম্পানির নিট লোকসান হয়েছে ২০৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

ধারাবাহিক লোকসানে কোম্পানির রিজার্ভ তহবিলও ছোট হয়ে আসছে। বর্তমানে কোম্পানির রিজার্ভে মাত্র ৮৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা রয়েছে। এমন লোকসান চলতে থাকলে কোম্পানির রিজার্ভ দ্রুতই ঋণাত্মক হয়ে পড়বে।

১৯৯৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া মেঘনা সিমেন্টের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৩১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। মোট শেয়ারসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ১৬ লাখ। এর মধ্যে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৫৮ দশমিক ১০ শতাংশ। অর্থাৎ কোম্পানি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতির অংশ শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের উপরই বেশি পড়বে।

এমএমএইচ/জেডএস