আস্থা ও তারল্য সংকট কাটিয়ে এখন চাঙা দেশের পুঁজিবাজার। চাঙা বাজারে প্রতিনিয়তই বাড়ছে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম। দ্রুত মুনাফার আশায় পুঁজিবাজারে সবচেয়ে দামি কোম্পানিগুলোর শেয়ার কেনায় আগ্রহ বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের।

এর মধ্যে রেকিট বেনকিজার, ম্যারিকো, ইউনিলিভার কেয়ার, বার্জার পেইন্টস (বিডি) এবং ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানির শেয়ার কিনতে কাড়াকাড়ি শুরু করছেন বিনিয়োগকারীরা। এতে শেয়ারগুলোয় বিক্রির চেয়ে কেনার আদেশ পড়ছে দ্বিগুণ।

এ চিত্র দেখা গেছে জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের (২০২১-২২) বাজেট ঘোষণার পর থেকেই। গত ৩০ জুন বাজেট ঘোষণার পর ১ জুলাই ব্যাংক হলিডে, এরপর দুদিন সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে রোববার (৪ জুলাই) ব্যাংকগুলোয় বিশেষ ছুটি ঘোষণা করা হয়। সবমিলে নতুন অর্থবছরে পুঁজিবাজারে প্রথম লেনদেন শুরু হয় ৫ জুলাই (সোমবার) থেকে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য মতে, ৫ জুলাই (সোমবার) থেকে ১৫ জুলাই (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত আট দিন পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে। এ সময়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম সর্বনিম্ন ১৩ থেকে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

বিনিয়োগকারীদের ধারণা, এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম আরও অনেক বাড়বে। তাই তারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন শেয়ার কিনতে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থা ভালো, সর্বশেষ বছর বিনিয়োগকারীদের পর্যাপ্ত লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিগুলো। এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে লোকসান হবে না। কারণ কোম্পানি ‘হাওয়া’ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এক কথায় কোম্পানিগুলো মৌলভিত্তি সম্পন্ন। তবে কোম্পানিগুলোর শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস), শেয়ারপ্রতি প্রকৃত সম্পদমূল্য (এনএভি) এবং পিই রেশিও অনুসারে শেয়ারের দাম কত হতে পারে জেনে-বুঝে বিনিয়োগ করতে হবে। যৌক্তিক মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিনিয়োগ করা যাবে না। এতে লোকসানের সম্ভাবনা থেকে যাবে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোম্পানিগুলো নিঃসন্দেহে ভালো, তবে শেয়ারগুলোর দাম কত হবে, এটা বলা যাবে না। এখন বেশিরভাগ শেয়ারের দাম ‘হাইপ্রাইসের’ মধ্যে রয়েছে। এ অবস্থায় কোম্পানির নতুন কোনো সংবেদনশীল তথ্য আছে কি না জেনে তারপরই বিনিয়োগ করতে হবে।

ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এসব কোম্পানির শেয়ার দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের জন্য উত্তম। কোম্পানিগুলোর ম্যানেজমেন্ট ভালো, ভালো লভ্যাংশ দিচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে অতিরিক্ত দামে বিনিয়োগ করা যাবে না।

ডিএসইর তথ্য মতে, ১৯৮৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি রেকিট বেনকিজার। গত ৫ জুলাই এই কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৪ হাজার ৩৫২ টাকা। সেখান থেকে ১২৩ টাকা বেড়ে ১৫ জুলাই সর্বশেষ বিক্রি হয় ৪ হাজার ৪৭৫ টাকা ৮০ পয়সায়।

ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস লিমিটেডের শেয়ার ১ হাজার ২৩৬ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১৯৮ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৪৩৪ টাকায় দাঁড়িয়েছে। শেয়ারহোল্ডারদের ৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি।

রেনউইক যজ্ঞেশ্বর কোম্পানির শেয়ার ৫ জুলাই ছিল ৮১৪ টাকা ৫০ পয়সা। সেখান থেকে ১৫ জুলাই ৯৪০ টাকা ৬০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ দাম বেড়েছে ১২৬ টাকা। ১৯৮৯ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের সর্বশেষ বছর লভ্যাংশ দেয় ১২ শতাংশ।

বার্জার পেইন্টসের (বিডি) শেয়ার ১ হাজার ৭৬১ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১২০ টাকা বেড়ে সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৮৮১ টাকা ৪০ পয়সায়। কোম্পানিটি সর্বশেষ বছর বিনিয়োগকারীদের ২৯৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়।

৫ জুলাই ইউনিলিভার কেয়ার কোম্পানি শেয়ারের দাম ছিল ২ হাজার ৭৭০ টাকা। ১৫ জুলাই তা বেড়ে ২ হাজার ৮৫২ টাকায় দাঁড়ায়। অর্থাৎ কোম্পানটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ৮২ টাকা করে।

ম্যারিকো কোম্পানির শেয়ার ২ হাজার ২০৪ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে ৬৮ টাকা বেড়ে ২ হাজার ২৯০ টাকা ৫০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। কোম্পানিটি ২০২০ সালে শেয়ারহোল্ডারদের ৯৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।

একই সময়ে দেশীয় কোম্পানি ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ারের দাম ছিল ১ হাজার ৩৪৩ টাকা। সেখানে থেকে ২৪ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৩৬৭ টাকা ৫০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। কোম্পানিটি ২০২০ সালে শেয়ারহোল্ডারদের নগদ ২০০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে।

ওষুধ কোম্পানি রেনেটা লিমিটেডের শেয়ার ১ হাজার ৩৫৩ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর গত ৫ জুলাই শেয়ারটির দাম ছিল ১ হাজার ৩১৬ টাকা ৯০ পয়সা। অর্থাৎ আট দিনে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩৭ টাকা। ২০২০ সালে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১৩০ শতাংশ নগদ এবং ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয়।

লিন্ডে বাংলাদেশ কোম্পানির শেয়ার ৫ জুলাই ছিল ১ হাজার ৩০২ টাকা ৮০ পয়সা। সেখান থেকে ১৮ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৩২০ টাকা ১০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। কোম্পানি ২০২০ সালে শেয়ারহোল্ডারদের ৪০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।

১৯৮৫ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বাটা সুর শেয়ারের দাম ১৫ জুলাই পর্যন্ত ৬৫৭ দশমিক ৯০ পয়সা দাঁড়িয়েছে। ৫ জুলাই এ কোম্পানির শেয়ারের দাম ছিল ৬৪৯ টাকা ৫০ পয়সা। ২০২০ সালে শেয়ারহোল্ডারদের ৬০০ শতাংশ নগদ এবং ২০০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোম্পানিগুলো বাজার সেরা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে। ফলে এই শেয়ারগুলোর দামও সবচেয়ে বেশি। বিনিয়োগকারীরা উচিত বিনিয়োগের আগে আরও সচেতন হওয়া। যাতে ভালো মুনাফা করতে পারেন।

এমআই/এসকেডি