• লেনদেন শুরু হবে ছয় কোম্পানির শেয়ার
• আপত্তি থাকা কোম্পানিকেও করা হয়েছে তালিকাভুক্ত
• লেনদেনের সুযোগ পাবেন কেবল যোগ্য বিনিয়োগকারীই 
• উদ্বোধনের আড়াই বছর পর শুরু হচ্ছে লেনদেন

বেশ তাড়াহুড়ো করে আবারও নতুন কোম্পানির চেয়ে পুরোনো মন্দ কয়েকটি কোম্পানিকে অন্তর্ভুক্ত করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এসএমই প্ল্যাটফর্ম চালু করা হচ্ছে।

নানা আপত্তি সত্বেও কেবল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনায় ডিএসই মাস্টার ফিড এগ্রোটেক ও অরিজা এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের নামের দুটি কোম্পানির সঙ্গে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেট (মন্দ কোম্পানির বাজার) থেকে হিমাদ্রি, ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েজ, বেঙ্গল বিস্কুটস ও অ্যাপেক্স ওয়েভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস লিমিটেড নামের চারটি কোম্পানিকে এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করেছে।

ফলে আজ বৃহস্পতিবার (৩০সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় ৬টি কোম্পানির লেনদেনের মধ্য দিয়ে এই প্ল্যাটফর্মের যাত্রা শুরু হচ্ছে। ডিএসই চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমানের সভাপতিত্বে এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএসইসি কমিশনার মিজানুর রহমান। বিশেষ অতিথি থাকবেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান।

অথচ এই প্ল্যাটফর্মের উদ্দেশ্য ছিল গ্রীনফিল্ড কোম্পানি কিংবা ছোট কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করা। যাদের ব্যাংক গ্যারান্টার নেই বলে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারছে না এমন সব কোম্পানি বা উদ্যোক্তাকে সহযোগিতার জন্য এই এসএমই প্ল্যাটফর্ম শুরুর চিন্তা করা হয়েছিল।  

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসইর একাধিক পরিচালক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এসএমই প্ল্যাটফর্ম একটি নতুন প্রোডাক্ট। আমরা চেয়েছিলাম এখানে এমন কিছু কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করতে যারা ভালো উদ্যোক্তা কিন্তু অর্থের অভাবে ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারছে না। তাদের সহযোগিতা করতে। কিন্তু কমিশন আমাদের সেটা করতে দেয়নি। এখানে ভালো উদ্যোক্তা আনার বিপরীতে মন্দ কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। এই কোম্পনিগুলো পুঁজিবাজার থেকে টাকা নিয়ে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয়নি। বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারণা করেছে। ফলে এসব বিতর্কিত কোম্পানিকে এই প্ল্যাটফর্মে আনাই উচিৎ হয়নি। তাতে প্ল্যাটফর্মটি জনপ্রিয় হওয়ার পরিবর্তে পিছিয়ে যেতে পারে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এসএমই প্ল্যাটফর্ম ঝুঁকিপূর্ণ। যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে তাতে প্ল্যাটফর্মটি জনপ্রিয় করা সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এসএমই প্ল্যাটফর্ম ঝুঁকিপূর্ণ বলে এখানে কেবল এলিজেবল অর্থাৎ যোগ্য বিনিয়োগকারীদের লেনদেনের সুযোগ রাখা হয়েছে। কিন্তু ওটিসি থেকে এসএমই কোম্পানিগুলোর শেয়ার তো সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে। তাদের কী হবে।

এ বিষয়ে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী ঢাকা পোস্টকে বলেন, নতুন প্রোডাক্টকে জনপ্রিয় করতে হলে প্রথমে প্রোডাক্টের গুডওয়েল প্রয়োজন হয়। এসএমই প্ল্যাটফর্ম নতুন প্রোডাক্ট কিন্তু এখানে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে এমন কোম্পানিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, শুরুতেই সমস্যা হয়েছে। ডিএসই ও বিএসইসির উচিৎ ছিল নতুন ও ভালো কোম্পানির অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে প্রোডাক্টটি চালু করা। তাতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়তো।  

উল্লেখ্য, গ্রীনফিল্ড বা এখনও বাণিজ্যিক কার্যক্রমে আসেনি এমন কোম্পানিকেও পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলনের সুযোগ দিতে তৈরি করা হয়েছে এসএমই প্ল্যাটফর্ম। ডিএসই এসএমই প্লাটফর্মটি প্রথমে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু আড়াই বছরে লেনদেন শুরু হয়নি। তবে দ্বিতীয় দফায় আজ ছয়টি কোম্পানির লেনদেনের মধ্যদিয়ে প্ল্যাটফর্মটি উদ্বোধন করা হচ্ছে।

এই প্লাটফর্মে ক্ষুদ্র অর্থাৎ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের লেনদেনের কোনো সুযোগ থাকছে না। বরং প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। কোনো ব্যাক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীর পুঁজিবাজারে ৫০ লাখ টাকা বা তার বেশি বিনিয়োগ থাকলে তিনি এ মার্কেটে লেনদেন করতে পারবেন। তবে ওটিসি মার্কেট থেকে আসা কোম্পানিগুলোর শেয়ার শুধু শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন।

ডিএসই বলছে, ইলেকিট্রনিক সাবস্ক্রিপশন সিস্টেমের অধীনে নিবন্ধিত যোগ্য বিনিয়োগকারীদের ডিএসই এসএমই প্ল্যাটফর্মে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে। 

এমআই/এনএফ