চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) পর এবার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্ত জন্য এসএমই প্লাটফর্মে লেনদেন চালু করল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় এসএমই প্লাটফর্মে প্রাথমিকভাবে মাস্টার ফিড এগ্রো এবং অরিজা অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজসহ মোট ছয়টি কোম্পানির লেনদেন শুরু হয়েছে। তবে দুপুরে ডিএসইর নিকুঞ্জ কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এসএমই প্লাটফর্মে লেনদেন কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। এদিন এসএমই প্লাটফর্মে মোট ১৪টি শেয়ার কেনা-বেচা বাবদ লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার টাকা। ছয়টি কোম্পানির মধ্যে ৫টি কোম্পানির শেয়ারের দামই বেড়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার অধ্যাপক মিজানুর রহমান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, দেশে এসএমই খাতে প্রায় ১ লাখ কোম্পানি রয়েছে। এরমধ্যে অধিকাংশ মুনাফা করে। কিন্তু তাদের আর্থিক হিসাব সঠিকভাবে করা হয় না এবং অদক্ষ জনবলের ওপর নির্ভরশীল। যে কারণে এসএমই কোম্পানিগুলোতে অনেক বেশি ব্যয় হয়। তাই ডিএসই ও এসএমই ফাউন্ডেশনকে ওইসব কোম্পানির দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

মিজানুর রহমান বলেন, এসএমই কোম্পানিগুলোকে অর্থ সংস্থানের জন্য ঋণ নিতে হয়। তবে পুঁজিবাজারে এসএমই প্লাটফর্মের যাত্রার মাধ্যমে ওইসব কোম্পানিগুলো স্টক এবং ডেবট সিকিউরিটিজ ইস্যুর সুযোগ পেল। একইসঙ্গে সুশাসন ও স্বচ্ছতায় নিশ্চিতের দায়বদ্ধতার মধ্যে চলে আসতে হবে।

ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুছুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে এসময় উপস্থিত ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান, ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারেক আমিন ভূঁইয়াসহ ডিএসই ও এমএমই উদ্যোক্তরা।

ডিএসইর এমডি তারেক আমিন ভূঁইয়া বলেন, এসএমই প্লাটফর্ম পুরোপুরি চালু হলে দেশের পুঁজিবাজার নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। এসএমইতে লেনদেন শুরু হওয়া ৬ কোম্পানির মধ্যে ৩ কোম্পানির প্রতিনিধিরা তাদের কোম্পানির চিত্র তুলে ধরেন।

এরমধ্যে মাস্টার ফিড অ্যাগ্রোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কবির আহমেদ বলেন, তাদের কোম্পানি মানসম্পন্ন পণ্য তৈরি করে যাচ্ছে। এমনকি করোনা মহামারির মধ্যেও দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে কাজ করে গেছে। তারা বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ রিটার্ন দিতে চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন। এসময় ওরিজা অ্যাগ্রোর পরিচালক এম আজহার রহমানও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেবেন বলে জানান।

এসএমই প্লাটফর্মে থাকা বাকি চারটি কোম্পানি হল- হিমাদ্রী লিমিটেড, বেঙ্গল বিস্কুট, ওয়ান্ডারল্যান্ড টয় এবং অ্যাপেক্স ওয়েভিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিং মিলস লিমিটেড।

২০১৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চায় এমন স্বল্প মূলধনী কোম্পানির জন্য উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে ‘স্মল ক্যাপিটাল প্লাটফর্ম’ নামে আলাদা বাজার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বল্প মূলধনের কোম্পনির জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফার বাই স্মল ক্যাপ কোম্পানিজ) রুলস-২০১৬ প্রণয়ন করে। তবে ২০১৮ সালে এর কিছু বিধির সংশোধন আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এরপর ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল ডিএসই স্মল ক্যাপ মার্কেট (এসএমই) প্লাটফর্ম উদ্বোধন করে। ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এসএমই প্লাটফর্ম উদ্বোধনের আড়াই বছর পর এখন পুঁজিবাজারে এসএমই প্রতিষ্ঠানের লেনদেন শুরু হল।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোকে এসএমই প্লাটফর্মে তালিকাভুক্ত করার হয় কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফারের (কিউআইও) মাধ্যমে। তবে এসএমই উদ্যোক্তারা পুঁজিবাজারের মাধ্যমে ৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করতে পারবেন। এ বাজারে শুধু কোয়ালিফাইড ইনভেস্টররা লেনদেন করতে পারবেন।

কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর বলতে বিনিয়োগ-সংক্রান্ত সম্যক ধারণা রয়েছে এমন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও উচ্চ নিট সম্পদধারী ব্যক্তিকে বোঝায়। কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর চিহ্নিত করতে সিডিবিএল ভিন্ন ধরনের বিও হিসাব প্রণয়ন করবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য এ বাজার উন্মুক্ত থাকবে না। বিদ্যমান স্টক ব্রোকারের মাধ্যমে বাজারে লেনদেন পরিচালিত হবে।

এ বাজারে ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের মাধ্যমে কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে পারবে না এবং শেয়ারধারীদের শেয়ার একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত লক-ইন থাকবে। বাজারে লেনদেনের তারল্য বজায় রাখার জন্য ইস্যুয়ার কোম্পানিকে কমপক্ষে ৩ বছরের জন্য মার্কেট মেকার নিয়োগ করতে হবে।

এমআই/এসএম