ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ওষুধ-রসায়ন খাতসহ ২১টি খাতের শেয়ারের দাম কমায় সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার (০৭ ফেব্রুয়ারি) দেশের পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হয়েছে।

এদিন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক কমেছে ১৪২ পয়েন্ট। যা ডিএসইতে ১১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পতন। এর আগে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছিল ১৬৮ পয়েন্ট।

ডিএসইর পাশাপাশি চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক কমেছে ৪১৫ পয়েন্ট। সূচকের পাশাপাশি কমেছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম। তবে এই দরপতনের দিনেও বীমাখাতের বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। আর তাতে লেনদেনও আগের দিনের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে ডিএসইতে। 

এদিন বীমাখাতের তালিকাভুক্ত ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ২৭টির, কমেছে ১৭টির, অপরিবর্তিত ছিল ৫টির।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান সদস্যদের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে নতুন করে শেয়ার ও ইউনিট কেনা-বেচা করার জন্য ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট (ট্রেক) বিক্রি করছে ডিএসই। আর তাতে ডিএসইর সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে পুঁজিবাজারে দরপতন ঘটাচ্ছেন। এছাড়াও আর দু’টি কারণ রয়েছে বলে মনে করেন তারা। তার মধ্যে একটি নতুন নতুন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ, আরেকটি বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ারের দাম কমা। 

জানতে চাইলে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সাবেক প্রেসিডেন্ট মোস্তাক আহমেদ সাদেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০১০ সালের ধসের পর থেকে লেনদেন না থাকায় ব্রোকার হাউজগুলো লোকসানে চলছে। ছোট বাজারে বর্তমানে ৫শর মতো ট্রেকহোল্ডার রয়েছে। তারা তাদের কর্মকর্তাদের বেতন দিতে পারছে না। এই অবস্থায় আরও লাইসেন্স দেওয়া মোটেও যৌক্তিক না। এটা বাজারে অরাজগতা সৃষ্টি করবে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে। আজ সেসব কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার পাশাপাশি অল্প সময়ে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগের ফলে টাকা আটকে গেছে। তাই পুঁজিবাজারে দরপতন হয়েছে।

ডিএসইর তথ্যানুযায়ী, রোববার মোট ৩৫৩টি সিকিউরিটিজের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৪৩টির, কমেছে ২২৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৮৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।

বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমায় তিন সূচকে পথচলা ডিএসইর প্রধান সূচক আগের দিনের চেয়ে ১৪২ পয়েন্ট কমে পাঁচ হাজার ৫০৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএস-৩০ সূচক আগের দিনের চেয়ে ৮২ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক ২৫ পয়েন্ট কমেছে। এদিন ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৭৭১ কোটি ৫২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৭১৩ কোটি ৫৪ লাখ ৭৯ হাজার টাকা।

ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- বেক্সিমকো, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, লঙ্কা-বাংলা ফাইন্যান্স, রবি আজিয়াটা, মীর আক্তার, বিডি ফাইনেন্স, লাফার্জ হোলসিম, সামিট পাওয়ার এবং এনার্জিপ্যাক।

দাম বাড়ার শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স, মতিন স্পিনিং, তাকাফুল ইন্স্যুরেন্স, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স, বিকন ফার্মা, সোনালী ইন্স্যুরেন্স, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স এবং ইসলামিক ইন্স্যুরেন্স।

দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক আগের দিনের চেয়ে ৪১৫ পয়েন্ট কমে ১৫ হাজার ৯১৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ৩০টির, কমেছে ১৫১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৩টির। 

এ বাজারে লেনদেন হয়েছে মোট ৪৪ কোটি ২ লাখ ৩৯ হাজার টাকার। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৫ কোটি ১২ লাখ ৩০ হাজার টাকার।

এমআই/জেডএস