সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডে, সহকারী প্রধান শিক্ষক ৯ম গ্রেডে ও প্রধান শিক্ষকদের ৮ম গ্রেডে উন্নীতকরণসহ ১০ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। মঙ্গলবার (১০ মে) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ওয়েছ আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুর রহমানের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা আব্দুল আউয়াল তালুকদার। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপদেষ্টা আবুল হোসেন ও আব্দুল হান্নান।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ মো. জাকারিয়া, আহমদুল কিবরিয়া বকুল, জামশেদা আক্তার লিপি, সহ সভাপতি শহিদুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, মোয়াজ্জেম হোসেন, মো. শহিদুল ইসলাম, মো. নুরুচ্ছফা, আবুল কালাম আজাদ, আঞ্জুমানারা বেগম প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা আব্দুল আউয়াল তালুকদার বলেন, দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে শিক্ষকদের শৃঙ্খলা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু শিক্ষকদের আর্থ-সামাজিক কল্যাণ ব্যতীত জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি ও বদলি কার্যক্রমসহ ১০ দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির দাবিগুলো হলো

১. সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন স্কেল সহকারী শিক্ষক ১০ম গ্রেড, সহকারী প্রধান শিক্ষক ৯ম গ্রেড ও প্রধান শিক্ষকদের ৮ম গ্রেডে উন্নীতকরণ পূর্বক পদোন্নতিপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত অন্যান্য শিক্ষকদের মতো উন্নীত স্কেলে টাইম স্কেল প্রদান এবং সকল শিক্ষকের টাইম স্কেল প্রদানপূর্বক বেতন জটিলতা নিরসন করা।

২. সমন্বিত নিয়োগবিধিতে শুধুমাত্র সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রদান করা উক্ত পদ থেকে প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদ পর্যন্ত শর্তহীনভাবে পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা।

৩. (ক) বর্তমান প্রধান শিক্ষকদের যোগ্যতা ও দায়িত্বের কথা বিবেচনা করে ৮ম গ্রেডে উন্নীত করা

(খ) সহকারী প্রধান শিক্ষকদের পদ সৃষ্টিসহ ৯ম গ্রেডে বেতন স্কেল নির্ধারণ করা।

(গ) স্নাতক/স্নাতকোত্তর শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রেক্ষিতে সংগত কারণেই সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা।

৪. চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের দ্রুত পদোন্নতির ব্যবস্থা করা।

৫. প্রাথমিক শিক্ষা সম্পৰ্কীয় বিভাগীয় নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সাংগঠনিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।

৬. প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র-শনিসহ সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের অবিলম্বে নন-ভোকেশনাল কর্মচারী হিসাবে ঘোষণা করে অন্যান্য সরকারি কর্মচারীদের ন্যায় সুযোগ সুবিধা প্রদান করা, বিদ্যালয়ের সময়সূচি ও ছুটির তালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাথে সমন্বয় করে তৈরি করা।

৭. অবিলম্বে দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা কার্যকর করা।

৮. অন্যান্য সরকারি কর্মচারীদের ন্যায় প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের শর্তহীনভাবে সারা বছর বদলি কার্যক্রম চালু করা।

৯. সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধিদের নিয়ে অবিলম্বে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্টি বোর্ড কার্যক্রম গতিশীল করা।

১০. শিক্ষকদের বিভিন্ন বিভাগীয় প্রশিক্ষণে শর্তহীনভাবে শুধুমাত্র শিক্ষকদের মধ্য থেকে প্রশিক্ষক নির্বাচন করা।

সংবাদ সম্মেলন থেকে দাবি আদায়ে সাংগঠনিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এগুলো হলো-

১. সকল বিভাগে উপজেলা ও জেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে বিভাগীয় সমাবেশ করে কেন্দ্রীয় কার্যক্রম গতিশীল করা ও সুশীল সমাজকে সম্পৃক্ত করে বিষয়সমূহের গুরুত্বারোপ করা।

২. বিভাগ পর্যায়ে ১-৯ অক্টোবর সমাবেশ করা হবে।

৩. রাজধানী ঢাকায় ২২-২৮ ডিসেম্বর সমাবেশ করা হবে এবং সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা আবুল আউয়াল তালুকদার সংগঠনের নির্বাহী সভাপতি, মহা সম্পাদক ও বিভিন্ন পদ শূন্য হওয়ায় বর্ধিত সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভারপ্রাপ্ত হিসেবে সৈয়দ মো. জাকারিয়াকে নির্বাহী সভাপতি, ভারপ্রাপ্ত মহা সম্পাদক হিসেবে মোয়াজ্জেম হোসেন ও অর্থ সম্পাদক হিসেবে ইমরান হোসেন ভূঁইয়ার নাম ঘোষণা করেন।

এএজে/এসকেডি